নগরীর সপুরায় অবস্থিত রাজশাহী জেলা মুক্তিযোদ্ধা স্টেডিয়াম মার্কেট ঘিরে ব্যবসায়ীদের নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের অনিয়মের কারণে মার্কেট এলাকাটি দুর্ঘটনা প্র্রবণ ও বিপদজনক হয়ে রয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা মালামাল দোকানের বাইরে মার্কেট এলাকার ফাঁকা জায়গাসহ সংলগ্ন সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখছে। এতে এলাকাটি দিয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
সূত্রমতে, এই স্টেডিয়াম মার্কেটে ৫০০টির মতো দোকান রয়েছে। যার প্রতিটি স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তিতে লীজ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ভাঙড়িসহ লোহার পাত, সিট, রড, পাইপ, এ্যাঙ্গেলের দোকান করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে ঝালাই ও লোহা গলিয়ে নানা পণ্য তৈরির দোকান। আর এই দোকন গুলোর ভাড়া মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। যেখানে আশপাশে ব্যক্তিমালিকানায় থাকা দোকানগুলোর ভাড়া ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্টেডিয়াম মার্কেটের উত্তর-পূর্ব কোনে ভাঙড়ির দোকানে পুরাতন বৈদ্যুতিক তার জড়ো করে তার থেকে তামা বের করতে উন্মুক্ত স্থানে পুড়ানো হয়। এছাড়া পোড়ানো হয় প্লাস্টিক। এতে স্টেডিয়াম এলাকাসহ আশপাশের পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। দোকানের বাইরে উন্মুক্ত স্থানগুলোতে লোহার বার, এ্যঙ্গেল, রড, লোহার পাত ও সিট বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীসহ খেলোয়াড়, পথচারী ও সংশ্লিষ্টদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশাল স্টেডিয়াম এলাকায় পায়ে চলাচলেরই জায়গা নেই। সেই সাথে ধারালো ও চোছলা লোহার পাত, সিট ও রডের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা।
এদিকে মার্কেট এলাকায় উন্মুক্ত স্থানে রড ঝালাই করা হচ্ছে। তা থেকে আগুনের ফুলকি ছিটকে পড়ছে চতুরদিকে। এমনকি উন্মুক্ত স্থানেই কোনরূপ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বাসার রান্নায় ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করে লোহার পাত কাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে। সার্বিক অর্থে স্টেডিয়াম এলাকাটিতে ক্রীড়াবান্ধব কোন পরিবেশ নেই। এলাকাটি এখন ব্যবসায়ীদের দখলে। ব্যবসায়ী ও স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা ও অবহেলায় অস্বাস্থ্যকর, দুষিত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পুরো এলাকার পরিবেশ।
সরেজমিনে এই মার্কেট এলাকা ঘুরে একই চিত্র চোখে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা মেলে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্টেডিয়াম মার্কেটে থাকা মেসার্স সোহাগ ট্রেডার্সের সামনের জনবহুল সড়কে লোহার পাত কাটতে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারে লাগে আগুনের ঘটনা। এসময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে দমকল কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
সোহাগ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, প্লেট কাটিং এর জন্য আমরা বাসায় ব্যবহৃত এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করি। সিলিন্ডারে সমস্যার কারণে দুপুরে এখানে আগুন লাগে। আমাদের কোন অনিয়ম ছিলো না। তবে তিনি জানান, এ সংক্রান্ত কাজে দমকল বাহিনীর যে অনুমোদন বা সনদ লাগে তা তার প্রতিষ্ঠানের নেয়া ছিলো না। অবশ্য শুধুমাত্র সোহাগ ট্রেডার্সই না, এখানকার অন্যান্য দোকানেও নেই সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রয়োজনীয় সনদ। এমনকি কারোই নেই বিপদ বা ঝুঁকি মোকাবেলার ব্যবস্থা।
রাজশাহী বিভাগের দমকল বাহিনীর উপ পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, দাহ্য পদার্থ বা গ্যাস নিয়ে কাজ করলে আমাদের কাছ থেকে লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতা মূলক। তবে স্টেডিয়াম এলাকায় এজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে যারা ব্যবসা করছেন তারা আমাদের কাছ থেকে কোন লাইসেন্স নেননি বলেই আমি জানি। লাইসেন্স না নিলে সাজার ব্যবস্থা রয়েছে। কেন্দ্রর দেয়া দিকনির্দেশনা অনুসারে আমরা শিঘ্রই রাজশাহীতে অভিযানে নামবো। যাদের লাইসেন্স নাই তাদের ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বিচারের আওতায় আনা হবে। এদিকে স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, বৃহস্পতিবারে আগুন লাগার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে কোন দন্ড প্রদান করা হয়নি বলে জানা গেছে।
সিরোইল কলোনী এলাকার বাসিন্দা মতিন অভিযোগ করে বলেন, একসময় স্টেডিয়ামটিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খেলা অনুষ্ঠিত হলেও, নানা অনিয়ম ও প্রতিবন্ধকতায় এখন শুধুমাত্র স্থানীয় পর্যায়ের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তাও বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়। এখন এই স্টেডিয়ামটি একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাত্র। আর এর জন্য স্বয়ং স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষই দায়ী। একই অভিযোগ করে সপুরা এলাকার বাসিন্দা সাবান বলেন, মার্কেট এলাকাটির চার পাশ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এখানে খেলাধুলা বা ক্রীড়া বান্ধব কোন পরিবেশ নেই। স্টেডিয়ামের ভেতরে মাঠে দাড়ালে প্লাস্টিক ও লোহা পোড়ানো দুর্গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়।
জেলা স্টেডিয়াম মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেন, এই মার্কেট শুরু থেকেই এভাবেই চলে আসছে। এখানে তিন হাজরের বেশি মানুষের কর্মস্থান হচ্ছে। আমাদের স্বার্থেই মার্কেটের পরিবেশ ঠিক রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এবিষয়ে স্টেডিয়ামটির উন্নয়ম কমিটির সদ্য দায়িত্ব প্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি অনুধাবন করেছি। এজন্য গত কয়েকদিন আগে কমিটির অন্যান্যদের নিয়ে স্টেডিয়াম ও এর মার্কেট এলাকা পরিদর্শন করেছি। স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় যেমন অনিয়ম রয়েছে, তেমনি স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাও দুর্বল। সর্বসম্মতি ক্রমে আমরা পরিকল্পনা করছি স্টেডিয়াম এলাকাটি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। সেই সাথে স্টেডিয়ামের আশপাশের ফাকা জায়গাতে ফুল বাগান করে দেয়া হবে। এর জন্য বাজেটের বিষয় আছে। আমরা মাকেট ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলছি। সেই সনাতনী আমলের ভাড়াই তারা দিয়ে যাচ্ছে। মার্কেট এলাকায় আধুনিক টয়লেট নির্মানসহ তাদেরো কিছু দাবি আছে। সব মিলিয়ে আমাদের নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে স্টেডিয়ামের পরিবেশের যেমন উন্নত ও নিরাপদ হবে, তেমনি মার্কেট ব্যবসায়ী ও আশপাশের এলাকাবাসীরো আর কোন অভিযোগ থাকবে না বলে আশা করি।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন