নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার আবাসিক ভবন মা ভিলা। এর পঞ্চম তলায় ভাড়া থাকেন একজন চাকরিজীবি। মশার উপদ্রবে তার দুপুর নিদ্রার রফাদফা। ছোট মেয়েটার কান্না জড়ানো ডাকে উঠে গেলেন। কি হলো আবার? কান্নার কারন সেই মশা। ডাঁশামাছির মত বড় বড় মশার কামড়ে মেয়েটার চোখে পানি চলে এসেছে।
এটা তো গেল ভবনের পঞ্চমতলার চিত্র। স্বাভাবিকভাবে ভবনের উপরের দিকে মশা কম থাকে। তাহলে ভবনের নিচের তলার অবস্থাটা সহজেই অনুমান করা যায়। এটা নগরীর একটা ফ্ল্যাটের গল্প। এই বাড়ির মতই নগরবাসী অতিষ্ঠ মশার উপদ্রবে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা সবখানেই মশার আধিক্যে জর্জরিত নগরজীবন।
বাসা-বাড়ি, মেস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মশার উপদ্রবের কথা জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। নগরীর প্রত্যেকটা মেসের বর্ডারদের নিত্যদিনের সঙ্গী মশার কামড়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাসে মশার কামড় হজম করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। রাজশাহী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান পলাশ জানান, মশার কামড়ে ক্লাসে বরাবরই মনোযোগ নষ্ট হয়। এমনকি মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। বিষয়টা নিয়ে বিব্রত খোদ রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ। তবে তার একার পক্ষে মশা সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
একই অবস্থা রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলগুলোতে। রাজশাহী কলেজের মুসলিম হোস্টেল, হিন্দু হোস্টেল, রাজশাহী কলেজ মহিলা হোস্টেল, রহমতুন্নেছা হোস্টেল প্রত্যেকটি হলেই মশার কামড়ে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ তারা। মশারি টানিয়ে, কয়েল জ¦ালিয়ে, ফ্যান চালিয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেন তারা। তবে খুব একটা লাভ হয়না তাতেও। এই সমস্যা সমাধানে কলেজ প্রশাসনসহ নগর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ আশা করছেন তারা।
মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের রোগীরাও। দিনের বেলাতেও বড় বড় মশার কামড়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন রোগী ও তার আত্মীয় স্বজনেরা। রাতের বেলা জরুরী বিভাগে ঢুঁ মারলে দেখা যায়, মশারীর পাশাপাশি কয়েল জালিয়ে ঘুমাচ্ছেন সবাই। এরপরেও রাতের বেলা মশার কামড়ে ঘুম ভেঙে যায় বলে অভিযোগ করেন দুর্গাপুর উপজেলার তেবিলা গ্রামের বাসিন্দা বাবর আলী। সরকারী হাসপাতালের বাইরে বেসরকারী হাসপাতালেও একই অবস্থা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আব্দুল হাকিম তার বোনকে ভর্তি করেছেন নগরীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে। সে জানায়, মশার অত্যাচারে দিনের বেলাতেও টেকা যায় না।
রাজশাহীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা মিনহাজ তৌহিদ বলেন, দিনে দিনে বেড়েই চলেছে মশার অত্যাচার। ঘরে বাইরে সবখানেই মশার অত্যাচার। এখন নগরীর একটি প্রধান সমস্যা মশা। আমাদের চাওয়া নিয়মিত মশা নিধন অভিযানের পাশাপাশি বিশেষ কোন পদক্ষেপ ও বা পদ্ধতি যেন রাসিক গ্রহণ করে।
তবে মশার উপদ্রব কমাতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। নগরীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করতে চালিয়েছেন ক্রাশ প্রোগ্রাম। ক্রাশ প্রোগ্রামের অধীনে সম্প্রতি পরিষ্কার করেছেন রামেক হাসপাতাল এলাকা।
এর আগে ২০০৮ সালে যখন মেয়র লিটন প্রথম ক্ষমতায় আসেন, তখন তিনি মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। রাজশাহীকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিনএনপির মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ক্ষমতায় আসার পর ফ্যাকাশে হতে থাকে মহানগরী। মশার নিধনে তেমন কোন পদক্ষেপই নিতে দেখা যায়নি। বিগত পাঁচ বছরে চক্রহারে বৃদ্ধি পেয়েছে মশা। যা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন মেয়র লিটন।
রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, মশা নিধনে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়েছে। নগরী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে প্রতি ওয়ার্ডে ১০ জন ও কেন্দ্রীয়ভাবে ৩০ জন অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে ক্রাশ প্রোগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। যেসকল স্থানে মশার লার্ভা তৈরী হয়, সেসকল স্থান, ড্রেন, নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে। মশা নিধনের নিয়মিত প্রক্রিয়া হিসেবে কেরোসিন, পোড়া মবেল ও ডিজেলের মিশ্রন স্প্রে অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী আরো বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন বলেন, ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে মশার প্রজনন ঘটে। এজন্য নগরীজুড়ে মশার আধিক্য একটু বেশি মনে হচ্ছে। মশার নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম চলমান রয়েছে। নগরীজুড়ে মশার লার্ভা তৈরী হয় এমন স্থানে কেরোসিন ও ডিজেলের মিশ্রন স্প্রে করা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারী-মার্চের শেষে মশার সমস্যা সহনশীল পর্যায়ে চলে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন