অনিয়ন্ত্রিত বালুঘাটের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে রাজশাহীর অন্তত তিনটি মেগা প্রকল্প। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। আর এ জন্যই বালুঘাট ইজারা না দিতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধও করেছিল রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু এরই মধ্যে ইজারা প্রক্রিয়া শেষ করেছে জেলা প্রশাসন।
ভাঙন কবলিত নগরীর হাড়ুপুর থেকে নবগঙ্গা সোনাইকান্দি পর্যন্ত নদী তীর সংরক্ষণ কাজ সম্পন্ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। তাছাড়া নগরীর পশ্চিমাংশে পদ্মতীর ঘেঁষে নির্মাণ হচ্ছে কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয়ের মেগা প্রকল্প রাজশাহী হাইটেক পার্ক। পদ্মায় প্রবাহ ফেরাতে শুরু হয়েছে ড্রেজিং। কিন্তু একই এলাকায় জেলা প্রশাসন বালুঘাট ইজারা দেয়ায় এসব বড় প্রকল্প হুমকিতে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, নগরীর হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা এলাকায় বালুঘাট ইজারা না দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে আগেই অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন সম্প্রতি অন্যান্য পয়েন্টের সঙ্গে এই দুটি পয়েন্টে বালুঘাট ইজারা দিয়েছে। ফলে পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলি নদী ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মতো ১৮ মার্চ রাজশাহীতে পদ্মার বেশ কিছু বালুঘাট ইজারা দেয়া হয়েছে জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে। পদাধিকার বলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এই কমিটির সভাপতি। নগরীর পশ্চিমের হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা বালুমহাল এলাকা দুটি ইজারা দিয়ে জেলা প্রশাসন ৫ কোটি ২ লাখ টাকা আয় করেছে।
কিন্তু এই দুটি বালুমহাল পদ্মা নদীর তীরবর্তী কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন সরকারের মেগা প্রকল্প ‘রাজশাহী হাইটেক পার্ক’ সন্নিহিত এলাকায় অবস্থিত। এছাড়া আলোচিত বালুমহাল এলাকায় পদ্মার ভাঙনরোধে সম্প্রতি ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী তীর সংরক্ষণের কাজ সম্পন্ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
একইসঙ্গে পদ্মার উজানে সোনাইকান্দি থেকে মাঝারদিয়াড় এলাকায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতে ড্রেজিংয়ের কাজও শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্পের এলাকাতে আবারও বালুঘাট ইজারা দেয়ায় এলাকাবাসীসহ রাজশাহীর সচেতন মহলে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মার ঘাটে ঘাটে ভিড়ছে বালু ব্যবসায়ীদের বড় বড় নৌযান। বালু এনে এসব নৌযান থেকে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে পাইপ লাইনে বালু তুলে জমা করা হচ্ছে নদী তীরেই। দিনে দিনে জমছে বালুর পাহাড়। বালুর পাইপ ছিদ্র হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর দিয়ে অনবরত পানি আর ভেজা বালু চুয়ে আবার নদীতে পড়ছে। এতে শহর রক্ষা বাঁধের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আরও জানান, নগরীর হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা এলাকায় শিগগির নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। এই এলাকায় বালু ব্যবসায়ীদের শত শত নৌকা আসা যাওয়ার কারণে প্রকল্পের কাজ বিঘ্নিত হবে। সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে হাড়ুপুর-নবগঙ্গা বালুঘাটের ইজারা বাতিল করা জরুরি বলেও তারা মনে করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাইটেক প্রকল্পের কোলঘেঁষে পর্বত সমান উঁচু করে বালু জমা করে রাখা হচ্ছে সারাবছর। সেখান থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক আর ডাম্পার ভরে বালু পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।
ভারী এসব ট্রাক আর ডাম্পারের কারণে প্রকল্প এলাকাসহ হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা এলাকার শহর রক্ষা বাঁধ কাম সড়কটিও ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে। এলাকার ছোট ও গলি সড়কগুলির অস্তিত্ব আজ প্রায় বিপন্ন। নগরীর ভেতর এভাবে উঁচু করে বালু জমা রাখার কারণে এলাকার পরিবেশও হয়ে পড়ছে বিপন্ন।
এদিকে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল আলম বলেন, পাউবো এখন তদন্ত করে দেখছে সন্নিহিত এলাকায় বালুঘাটের কারণে এসব মেগা প্রকল্পের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কতটা পড়ছে। এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এসএম আবদুল কাদের জানান, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এসব বালুমহাল ইজারার নির্দেশ এসেছে। ফলে জেলা প্রশাসন শুধুমাত্র নিয়মমাফিক দায়িত্ব পালন করেছে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ জাগোনিউজ২৪