পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজশাহী-ঢাকা রুটের যাত্রীদের জন্য এই প্রথম খাবার যুক্ত হতে যাচ্ছে। চালু হতে যাওয়া বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রীরা এই খাবার পাবেন। টাকা অন্তর্ভুক্ত থাকবে টিকিটের সঙ্গেই। তবে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম এই ট্রেন পাচ্ছে পুরনো ইঞ্জিন, যার সর্বোচ্চ সমক্ষতা ৯০-৯৫ কিলোমিটার। এই সিদ্ধান্তে নাখোশ যাত্রীরা।
এদিকে, এই খাবার বাবদ যাত্রীদের কাছ থেকে কি পরিমাণ টাকা নেওয়া হবে তা ঠিক হয়নি আজও। যে কারণে উদ্বোধনের একদিন আগেও ট্রেনটি ভাড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ! তাই ২৭ এপ্রিল থেকে বাণিজ্যকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাওয়া এই ট্রেনটির টিকিটিং কার্যক্রম উন্মুক্ত হয়নি।
এর মধ্যে দিয়েই বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে রাজশাহীবাসীর বহুল কাঙ্ক্ষিত বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন এ ট্রেনটির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন যোগ দেবেন। তিনি ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে রওয়ানা হবেন বুধবার (২৪ এপ্রিল)। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত থেকে রেলমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যুক্ত হবেন।
উদ্বোধন ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে রেলমন্ত্রী রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনেই ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। এই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করা হয়েছে। বনলতা এক্সপ্রেসের উদ্বোধন উপলক্ষে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন পেয়েছে বর্ণিল রূপ। নতুনের মত ঝকঝকে-তকতকে করে ফেলা হয়েছে গোটা রেলওয়ে স্টেশন।
এছাড়া মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দিনগত রাতে ইশ্বরদী জংশন থেকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছেছে বনলতা এক্সপ্রেস। ট্রেনটি এখন স্টেশনেই অবস্থান করছে। সব কিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে ঢাকার পথে ছুটবে বিরতিহীন এই ট্রেন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা।
দেশের প্রথম ও সর্বাধুনিক হাইস্পিড ট্রেন হচ্ছে ‘বনলতা এক্সপ্রেস’। কিন্তু রাজশাহী-ঢাকা রুটের জন্য এই একজোড়া ট্রেন পেয়েছে পুরনো দু’টি ইঞ্জিন। এগুলো ২০১৩ সালে ভারত থেকে আমদানি করা। এই ইঞ্জিনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার। আর বনলতার সর্বাধুনিক হাইস্পিড কোচের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত গতিবেগ উঠবে না রাজশাহী-ঢাকা রুটের প্রথম ও একমাত্র বিরতিহীন এই ট্রেনের বলছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নতুন ইঞ্জিন ও মজবুত ট্র্যাক পেলে এটি প্রতি মিনিটে আড়াই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হতো। ৩৪৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ট্রেনটি ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টায় পৌঁছাতো গন্তব্যে।
বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচল করে আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা, ধূমকেতু ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস। পুরনো ইঞ্জিনে এসব ট্রেনও চলে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার গতিবেগে। মাঝে যাত্রাবিরতি রয়েছে ১৪টি স্টেশনে। এতে রাজশাহী থেকে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা।
প্রস্তাবিত সময়সূচি অনুযায়ী, ঢাকা থেকে ট্রেনটি দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে রাজশাহী পৌঁছাবে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায়। রাজশাহী থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ঢাকার কমলাপুরে পৌঁছাবে বেলা ১১টায়। বিরতিহীন চার্জ হিসেবে বিদ্যমান ভাড়ার সঙ্গে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে ভ্রমণকারীদের।
এদিকে, বিরতিহীন বনলতায় ভ্রমণকারীদের বিদ্যমান ভাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ভাড়ার সঙ্গে ১৮০ টাকা গুনতে হবে খাবার বিলের জন্য। যাত্রীদের জন্য এই খাবার সরবরাহ রেলওয়ের পক্ষ থেকে সৌজন্যমূলক বলা হলেও এর মূল্য পরিশোধ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ফলে সার্ভিসটি শুরুর আগেই পক্ষে-বিপক্ষে নানান মতের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যদিও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে- খাবার যুক্ত হচ্ছে ঠিক, কিন্তু এর মূল্য যে ১৮০ টাকাই হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। টিকিটের সঙ্গে খাবার চার্জ সংযুক্ত করার সিদ্ধান্তটি এখনও মন্ত্রণালয়ে আলোচনাধীনই রয়েছে। যে কারণে ভাড়া চূড়ান্ত হয়নি আর টিকিটও ছাড়া হয়নি। এই প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে কিনা বা হলে কীভাবে হবে তা এখন দেখার বিষয়।
ট্রেনটির এসি (স্নিগ্ধা) টিকিট ৭১৯ টাকা এবং শোভন শ্রেণীর জন্য ৩৭৫ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব রয়েছে। এর সঙ্গে ১৮০ টাকার খাবারের দাম যোগ হলে ভাড়া হবে এসি ৮৯৯ ও শোভন শ্রেণীর ৫৫৫ টাকা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই রুটের অন্য তিন আন্তঃনগর ট্রেনে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও তা বাধ্যতামূলক নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ট্রেনে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে চড়া দাম নেওয়ার অভিযোগ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বনলতার খাবার দাম অনুযায়ী মান কেমন হবে তা নিয়ে ভ্রমণকারীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
তবে খাবার মানসম্মত হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খোন্দকার শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভ্রমণকারীদের হাতে হাতে ১৮০ (সম্ভাব্য) টাকা মূল্যের খাবারের প্যাকেট পৌঁছে যাবে। এটি সরবরাহ করবে মেট্রো বেকারস নামের পুলিশের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা এরই মধ্যে খাবার পরখ করে দেখেছেন।
দাম অনুযায়ী এর মান ভালো। তবে ট্রেনের টিকিটের খাবার চার্জ সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের বিবেচনার জন্য রাখা হয়েছে। এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি। মন্ত্রণালয়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪