এটা তরমুজ না, অনেকেই প্রথমে এই ফলটাকে দেখলে তরমুজ ফল মনে করে। তবে এটা দেশি বাংগি জাতিয় ফল। বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর মাঠে এই মেলন ফলের চাষ করে সাফল্য পেয়েছে চাষি মনিরুজ্জামান মনির। দুই ধরনের নতুন ফল এবার চৈতন্যপুরের মাঠে চাষ হয়েছে। এক ধরনের ফল পাকলে হলুদ রঙের হচ্ছে। আরেক ফল সাদা রঙের। প্রতিটি ফলের ওজন ১ কেজি থেকে ৩ কেজি হয়। এ ফল প্রধানত তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভারতে উৎপাদন হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশেও আস্তে আস্তে পরিচিতি বাড়ছে। ফাইভ-স্টার বা থ্রি-স্টার মানের হোটেলগুলোতে অতিথিদের চাহিদার তালিকায় ফলটি পাওয়া যায়। দেশে প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার গ্রীষ্মকালীন ‘মেলন’ফল আমদানি করা হয়। যার পুরোটাই আসে তাইওয়ান, থাইল্যান্ড এবং ভারত থেকে।
কিন্তু কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে এ ফলের উৎপাদন হচ্ছে। ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার আমদানিনির্ভর বাজারে কিছুটা হলেও যোগান দিতে সক্ষম হয়েছে গোদাগাড়ীর সবজিগ্রাম খ্যাত উৎপাদিত ‘মেলন’। এটিকে সুইট মাস্ক মেলন বা ক্যান্টালুপও বলা হয়।
এই ফল চাষকারী চাষি রাজশাহীর মহিষবাথান এলাকার মনির বলেন, যে ফলটা পেকে হলুদ রং ধারণ করেছে, তাকে সৌদি আরবে ‘শাম্মাম’ বলা হয়। সাদা রঙের ফলটাকে ‘রক মেলন’ বলা হয়। পাকা ফল কাটলে ভেতর গোলাপি রঙের। খেতে মিষ্টি ও সুন্দর ঘ্রাণ আছে। কাচাতে খেতে শশার মত।
মনিরুজ্জামানের নিজের কোনো জমি নেই। নতুন নতুন ফসল চাষের বিষয়ে তাঁর খুব আগ্রহ। অন্যের জমি লিজ নিয়ে সে তার কৃষি খামার গড়ে তুলেছে। তার এ কৃষি খামারে মেলন চাষের পাশাপাশি টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বীজ আলু চাষ, স্ট্রবেরি, হলুদ তরমুজ, প্রাকৃতিকভাবে গাছে পাকানো পদ্ধতিতে টমেটো, পেপেঁ, চিয়া, ফাতেমা ধান ও লাল পেয়ারা চাষ করেছে। তার এ কৃষি খামারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীরা হাতে কমলে শিক্ষা নিতে আসে। দুই বছর ধরে তিনি ‘মেলন’ চাষ করেছেন। ১ম বছর সফল হতে না পারলেও দ্বিতীয় বছর এবার তিনি ভাল সফল হয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল হক বলেন, এ দুই ধরনের ফলই মেলন। হলুদ রঙের ফলটাকে ইংরেজিতে শুধু ‘মেলন’ বলা হয়। আর সাদা রঙেরটাকে সুইট মাস্ক মেলন বা ক্যান্টালুপ বলা হয়। বাংলায় এর কোনো নাম নেই। অর্থকরী ফসলের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল নতুন এই ফল চাষ করলে চাষিরা লাভবান হবে। তিনি বলেন, গোদাগাড়ীতে মনিরুজ্জামান নতুন ধরনের ফসল ও ফলের চাষ করে থাকেন। তিনি মেলন চাষ করেছেন। এতে তাঁর বেশ মুনাফা হয়েছে।
গত বুধবার চৈতন্যপুরে মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, আদিবাসী দিনমজুর চন্দনা রানী খেতের পরিচর্যা করছেন। তরমুজের গাছের মতোই লতানো গাছ বাঁশের কাঠি বেয়ে মাছায় উঠে গেছে। ফল ধরে মাচায় ঝুলছে। কথা হয় মনিরুজ্জামান সাথে, গত বছর মেলন চাষ করতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হন। এবার সফল হয়েছেন। মেলন চাষে তাঁর ১২ কাঠা জমিতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ, এক হাজার মেলন হয়েছে। প্রতিটি প্রায় দুই কেজি ওজনের হয়েছে। এবার তাঁর ভালো মুনাফা হয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি বীজতলায় এর চারা রোপণ করেছিলেন। ৭৫ দিনের মাথায় ফল উঠতে শুরু করেছে। এটি একটি লাভজনক ফসল হবে। ঢাকার সুপারমার্কেটগুলোতে এর চাহিদা রয়েছে। মনিরুজ্জামান তাঁর উৎপাদিত ফল ঢাকায় বিক্রি করে।
গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের মধ্যে উঁচু বরেন্দ্র নামে পরিচিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকা। প্রচণ্ড খরাপ্রবণ এই এলাকায় চাষিরা শুধু বৃষ্টিনির্ভও আমন ধানের চাষ করতেন। শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় এ এলাকার কৃষকেরা এখন ধানের পাশাপাশি অন্যান্য ফল ও ফসলের আবাদ করছেন। এ এলাকায় এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত জমি খালি পড়ে থাকে। গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর এলাকায় মনিরুজ্জামান জমি ইজারা নিয়ে এই অসময়ে নানা রকম নতুন জাতের ফসল ও ফলের চাষ করে।
আগামী দিনে অন্য অর্থকরী ফসলের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল নতুন এই ফল চাষ ও উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। দেশে এর উৎপাদন বাড়লে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েও রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ Daily Sunshine