সম্ভবত এবারই প্রথম ব্যতিক্রম ঘটেছে রাজশাহীর চামড়ার বাজারে। কোরবানিতে পর্যাপ্ত পশু জবাই হয়েছে। তবে তার চামড়া একরকম পানির দরেই বিক্রি হয়েছে। পশুর চামড়ার দাম একেবারেই কম বলা চলে। যারা পশু কোরবানি দিয়েছেন, তারা যেমন চামড়ার দাম পাননি, তেমনি মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও দাম পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন চামড়া সংগ্রহ করবে আরও ১০ থেকে ১২ দিন পর। ওইসময় পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা যদি এ চামড়া সংরক্ষণ করতে পারেন, তাহলে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারবেন। না হলে তাদের পরিণতি হবে আরও ভয়াবহ। নিকট ভবিষ্যতে এমন অনিশ্চয়তা দেখে এখনই মাথায় হাত পড়েছে চামড়া ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে এবারের কোরবানির মৌসুমে।
সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলছেন, পুঁজি সংকটে রাজশাহীর আড়তদাররা চামড়া কিনতে পারছেন না। এছাড়া সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম একবারেই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ওপর আবার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রাজশাহী মহানগরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ইচ্ছে দামে চামড়া কিনেছেন। না বুঝে ব্যবসা করতে এসে এখন আড়তদারদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন তারা।
বিভিন্ন এলাকার চামড়ার অস্থায়ী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির গরুর প্রতিপিস ছোট চামড়ার দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, মাঝারি আকারের প্রতিটি চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং বড় চামড়া ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর বকরির চামড়া ১০ টাকা ও খাসির চামড়া ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে এ দাম গত বছরের তুলনায় অর্ধেক। এগুলো ছিল কাঁচা চামড়া। এখন লবণ দিয়ে সংরক্ষণের পর যা খরচ পড়বে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতে গেলে তার পুঁজিই উঠবে না।
এবারের কোরবানির মৌসুমে সরকার গত বছরের মত গরুর কাঁচা চামড়া প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, গরুর কাঁচা চামড়ার দাম রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খাসির কাঁচা চামড়ার দাম সারাদেশে ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির কাঁচা চামড়ার দাম হবে সারাদেশে ১৩ থেকে ১৫ টাকা।
এখন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লোকসান থেকে কীভাবে বের হতে পারেন এ পরামর্শ জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রৌফ বলেন, যদি পর্যাপ্ত লবণ দিয়ে তারা চামড়াগুলো সংরক্ষণ করেন, তাহলে আড়ৎ থেকে সরকার নির্ধারিত দাম পাবেন। আর তা না করে হুজুগে পড়ে চামড়া বিক্রি করে দিলে কারোরই কিছু করার থাকবে না।
এদিকে, রাজশাহী জেলা চামড়া গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, এমন পরিস্থিতি সম্ভবত এ প্রথম। বলতে গেলে গরুর চামড়ার দামই নেই। আর বকরি ও খাসির চামড়ায় খাজনার চেয়ে বাজনায়ই বেশি। বকরির কাঁচা চামড়া ১০ টাকা কিনে ১৮ থেকে ২০ টাকা লাগছে লবণসহ তা সংরক্ষণের খরচ।
আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের টাকা বকেয়া রেখেছেন। বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা আর্থিক সংকটে রয়েছেন।
পুঁজি সংকটের কারণে এ অঞ্চলের ১২৭ জন ব্যবসায়ী থাকলেও বর্তমানে ব্যবসা করছেন মাত্র ৮-১০ জন। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ট্যানারি ও বড় বড় চামড়ার আড়তে বাকিতে মাল দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বকেয়া টাকা কবে নাগাদ ফেরত আসবে তারও নিশ্চয়তা নেই। পুঁজি হারিয়ে অনেকে এরইমধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
তার মত অনেকেই কোনো রকমে ব্যবসা ধরে রেখেছেন। এর ওপর গত কয়েক বছর ধরেই কমেছে চামড়ার দাম। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে সন্তুষ্ট নন তারা। আর এবার যা অবস্থা তাতে চামড়ার দাম পাওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন এ অঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বিপুল পরিমাণ চামড়া পাচারের আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীদের এ নেতা।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর