অবকাঠামোসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজশাহী নগরীর সপুরায় অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরী। সেগুলোর সমাধান না করে বিসিক কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি করে চলেছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এদিকে, উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এই এলাকায় শিল্প সৃষ্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
আব্দুল মালেক রাজশাহী বিসিক শিল্প নগরীর একজন পুরাতন প্লট মালিক, শিল্প উদ্যোক্তা ও বিসিক এলাকার ব্যবসায়ী নেতা। স্বাধীনতার পূর্বে লেখাপড়া করেছেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। তার ভাষায়, পরের হয়ে চাকরি না করে, নিজে শিল্প গড়ে তুলবেন ও অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন; এই আশায় ১৯৭২ সালে রাজশাহীর বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় একটি প্লট নিয়ে টেক্সটাইল মিল গড়ে তোলেন।
চায়না থেকে সুতো এনে কাপড় তৈরি করতেন সেখানে। এক সময় রমরমা ছিলো তার টেক্সটাইল। তবে নানা প্রতিবন্ধকাতায় দেশের অন্যান্য টেক্সটাইলের মতো তারটিও বন্ধ হয়েছে। এখন সেই জায়গায় গড়ে তুলেছেন একটি বেকারী। পাশেই রয়েছে অন্য কোম্পানির তৈরি করা টাইলসের একটি শোরুম।
ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা মালেক প্রশ্ন করে বলেন, কর্মসংস্থানসহ এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য কথায় কথায় রাজশাহীতে শিল্পায়ন সৃষ্টির কথা বলা হয়। অথচ এখানে যে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলোই টিকিয়ে রাখা মুশকিল হচ্ছে। তাদের দুর্দশার খোঁজ রাখা হচ্ছে না। বিসিক শিল্প এলাকায় যোগাযোগ ও পয়নিস্কাসন ব্যবস্থার দুরাবস্থা, জ্বলানী ও বিদ্যুত সংকটে জর্জরিত। এঅবস্থায় নতুন করে কী শিল্পান করবেন?
বিসিক শিল্প নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ১৯৫৭ সালে প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর ২০২টি প্লট নিয়ে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী। আবেদনের প্রেক্ষিতে ও পর্যাপ্ত মূল্যের বিনিময়ে ৫৮-৫৯ সাল থেকে প্লটগুলো ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর শুরু হয়। উদ্দেশ্য ছিলো শিল্পায়নের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া এই রাজশাহী অঞ্চলে কর্মস্থানের পাশাপাশি উন্নয়ন ঘটান।
তবে সময়ের পরিক্রমায় বিসিক কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকারের হটকারী সিদ্ধান্ত, সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা, উপযুক্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের অভাবে এই শিল্পনগরী সংশ্লিস্ট ব্যবসায়ীরা এখন হারাতে বসেছে তাদের মূল পূজি। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন উৎপাদনমুখি শিল্প থেকে।
কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এই শিল্প নগরী শুরু হওয়ার পর বিসিক কর্তৃপক্ষ একর প্রতি (তিন বিঘা) সার্ভিস চার্জ নিতো ৫০০ টাকা। সেই সার্ভিস চার্জ এখন একর ছেড়ে বর্গফুটের হিসেবে এসেছে। ২০১৫ সাল থেকে কর্তৃপক্ষ প্লটের মালিকদের কাছথেকে প্রতি বর্গফুট জায়গার জন্য নিচ্ছে তিন টাকা। অথচ কোন সার্ভিস দিচ্ছে না তারা।
এলাকাটির রাস্তাগুলো ভাঙাচোরা। যানবাহন চলাচলের অযোগ্য প্রায়। ড্রেনগুলোরও বেহাল দশা। ড্রেনের পানি উপচে রাস্তায় জমে। পোলগুলোতে পর্যাপ্ত লাইট না থাকায়, রাতে অধিকাংশ রাস্তা অন্ধকার থাকে। পুরো এলাকায় নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবসস্থা। বিদ্যুত ও জ্বালানী সংকটতো আছেই। বহুদিন থেকে এই শিল্প নগরীতে সংস্কার মূলক বা উন্নয়নমূলক কোন কাজ করে না কর্তৃপক্ষ। যার সবই করার কথা বিসিক কর্তৃপক্ষের। বারংবার অভিযোগ করেও দশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এককথায় কর্তৃপক্ষের উদাশিনতায় বর্তমানে রাজশাহী বিসিকের পরিবেশ মোটেও ব্যবসা বান্ধব নয়।
এদিকে পাবনা, বগুড়াসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বিসিক কর্তৃপক্ষ যেসব শিল্প নগরী গড়ে তুলেছে, তার পুরোটাই প্রাচির দিয়ে ঘেরা। আর রাজশাহীর এই শিল্প নগরীটি সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। এর চতুর দিকে প্রায় ১৬টি মতো রাস্তা রয়েছে। যেগুলো ব্যবহার করে যেকেউ অনায়াশে প্রবেশ বা বাহির হতে পারছে। এক কথায় অনিরাপদ আমাদের রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী।
সরেজমিনে বিসিক শিল্প নগরীর মূল প্রবেশ সড়কসহ বেশ কয়েকটি রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে এই রাস্তাগুলোর অধিকাংশই ভাঙা বা গর্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। আবার রাস্তার ধারে বহু অংশই দখলদারদের কবলে। ড্রেনগুলোতে ময়লা পানি উপচে পড়ছে। শিল্প কলকারখানাগুলোতে নেই বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি)। স্থানীয় কারখানার অপরিশোধিত পানি সরাসরি রাজশাহীর উত্তর প্রান্তের পবা উপজেলার বারনই নদীর পানিতে গিয়ে মিশছে। অভিযোগ রয়েছে এই বিসিকের অপরিশোধিত পানির কারণে আশপাশের নদী-নালার পানি দুষিত হয়ে পড়ছে।
রাজশাহী বিসিক শিল্প নগরীর বাৎসরিক সার্ভিস চার্জ বাবদ কী পরিমাণ আয় হয় এমন প্রশ্নের তাৎখনিক কোন উত্তর দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির স্টেস অফিসার মো : ওয়ইসকুরুনী।
রাজশাহী বিসিকের রিজেওনাল ডাইরেক্টর তামান্না রহমান ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানান, অনেক প্লট হোল্ডার তাদের সার্ভিস চার্জ ঠিক মতো পরিশোধ করেন না। সেই সাথে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়া যাওয়ায় আমরা এই সপুরা শিল্প নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে হাত দিতে পারছি না।
তিনি আরো জানান, রাজশাহী বিসিকের শিল্প নগরীটি বেশ পুরাতন। তাই এখানকার অবকাঠামো উন্নয়নে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সহযোগীতায় আমরা এই শিল্প নগরীর রাস্তা ও ড্রেন উন্নয়নে কাজ শুরু করেছি।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ Daily Sunshine