রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে আগে সড়কপথই বেছে নিতেন ব্যবসায়ী আসিফ বিন করিম। কিন্তু প্লেনের ভাড়া নাগালের মধ্যে থাকায় ও ভোগান্তি কম হওয়ায় এখন আকাশপথই পছন্দ তার।
একই কারণে আসিফ বিন করিমের মতো অনেকেই এখন আকাশপথকে ব্যবহার করছেন। ফলে যাত্রীর অভাবে দু’বার বন্ধ হয়ে যাওয়া রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরে এখন প্রতিদিনই বাড়ছে যাত্রীর চাপ। ফলে টিকিট মেলে না প্রায় সময়েই।
রাজশাহী-ঢাকা রুটে প্রতিনিয়ত যাত্রী সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা তাদের ফ্লাইট সংখ্যাও বাড়াচ্ছে। ৩৫ বছর আগে নির্মিত এই বিমানবন্দরে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান ও বেসরকারি দু’টি সংস্থা মিলিয়ে প্রতিদিন ছয়টি ফ্লাইট যাত্রী পরিবহন করছে।
অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হওয়ায় হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে দেশের তিনটি এয়ারলাইন্স। এগুলো হচ্ছে- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। প্রতিটি এয়ারলাইন্সের দু’টি করে মোট ৬টি ফ্লাইট প্রতিদিন চলাচল করছে। ফলে এই রুটে সপ্তাহে মোট ৪২টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।
অথচ যাত্রী অভাবে ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে অভ্যন্তরীণ এই রুটে প্লেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আট বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে আবারও রাজশাহী-রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। এ সময় বাংলাদেশ বিমান ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের দু’টি উড়োজাহাজ ফ্লাইট পরিচালনা করে। পরে বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে।
শুরুতে এয়ারলাইন্সগুলোর সপ্তাহে ২-৩ দিন ফ্লাইট থাকলেও, যাত্রী চাপ বাড়ার ফলে এখন সপ্তাহে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এর পরও প্রায়ই টিকিট পাওয়া যায় না প্লেনের।
রাজশাহী-ঢাকা রুটে বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে, নভোএয়ার এয়ারলাইন্স এটিআর ৭২-৫০০ মডেলের উড়োজাহাজে সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সরকারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিট (প্রতিদিন) ও ৫টা ১৫ মিনিটে (শুক্রবার) ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের অভ্যন্তরে আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত ও নিরাপদ হওয়ায় যাত্রীদের আগ্রহ বাড়ছে। সড়ক ও রেলপথে ভোগান্তি, দুর্ঘটনার শঙ্কা ও মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির ফলে আকাশপথে যাত্রী চাহিদা বেড়েছে। সময়মতো ঝামেলাবিহীন গন্তব্যে পৌঁছাতে তারা আকাশপথ বেছে নিচ্ছেন। সড়ক পথে বিড়ম্বনা এড়িয়ে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও এখন আকাশপথকে বেছে নিচ্ছেন। ফলে রাজশাহী-ঢাকা রুটের যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। আগের তুলনায় হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরে যাত্রী বেড়েছে কয়েকগুণ।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সরেজমিনে বিমানবন্দরে এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিট কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজকের ফ্লাইটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ৭৬ আসনের উড়োজাহাজে ৬৫টি, নভোএয়ার এয়ারলাইন্সের ৭২ আসনের মধ্যে সবক’টি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৭৩ আসনের মধ্যে ২৫টি টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে।
ঢাকাগামী ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যাত্রী শায়না ফারহিন শিমু বলেন, ‘ঢাকায় আমার পরিবার রয়েছে। প্লেনে ভ্রমণ করলে সময় বাঁচে এবং দ্রুত যাওয়া যায়। তাই প্লেনেই ভ্রমণ করি’।
নভোএয়ার এয়ারলাইন্সে ঢাকা থেকে এসেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হামিদুল হক। তিনি বলেন, ‘বাসে যাতায়াতে যে ঝক্কি ঝামেলা, আর ট্রেনের টিকিট পাওয়াই মুশকিল। তাই আকাশপথেই যাতায়াত করি। তাছাড়া সড়কপথের তুলনায় আকাশপথ অনেক নিরাপদ’।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের রাজশাহী স্টেশন ম্যানেজার মোশাররফ হোসাইন বলেন, ‘আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত ও নিরাপদ হওয়ায় যাত্রীদের আগ্রহ বাড়ছে। আমাদের নির্ধারিত আসনের মধ্যে ন্যূনতম ৮০ শতাংশ টিকিট ফ্লাইটের কয়েকদিন আগেই বিক্রি হয়ে যায়’।
নভোএয়ার এয়ারলাইন্সের রাজশাহী স্টেশন ম্যানেজার সাব্বির হোসেন বলেন, ‘ঈদ বা আমের মৌসুমের পাশাপাশি স্বাভাবিক সময়েও টিকিটের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। অনেক সময় আসনের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে টিকিট দেওয়া সম্ভব হয় না’।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রাজশাহী স্টেশন ম্যানেজার মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দিনে দিনে দেশের অভ্যন্তরে আকাশপথ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন অভ্যন্তরীণ এই বিমানবন্দর বন্ধ থাকার পর রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিমানই সর্বপ্রথম ফ্লাইট চালু করে। শুরুতে সপ্তাহের নির্দিষ্ট কিছু দিনে ফ্লাইট থাকতো। চাহিদা বাড়ায় এখন প্রতিদিনই ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়’।
রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সেতাফুর রহমান বলেন, বর্তমানে তিনটি এয়ারলাইন্স রাজশাহী-ঢাকা রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
এছাড়া ‘গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমি’ এখান থেকে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাই যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গুরুত্ব বিবেচনায় গত বছর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) আলাদাভাবে ‘বিমানবন্দর থানা’ স্থাপন করেছে। ফলে দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার চেয়ে এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোনো অংশে কম নয়।
যে কারণে রাজশাহীর যাত্রীরা নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য এখন আকাশপথকেই বেছে নিচ্ছেন বলেন মন্তব্য করেন বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর