রাজশাহীর ঐতিহাসিক বড়কুঠি সংস্কার ও সংরক্ষণের মাধ্যমে জাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। এ জন্য মঙ্গলবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বড়কুঠি পরিদর্শন করেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একজন প্রকৌশলীকে সঙ্গে নিয়ে ভবনটির ছবি ও নকশাসহ মাপজোক করেছেন তারা। পদ্মার কোল ঘেঁষে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে নির্মিত এই বড়কুঠি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক প্রাচীন এই ইমারতের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। বড়কুঠির প্রাচীরে শ্যাওলা জন্মেছে। খসে পড়ছে দেয়ালের পলেস্তারা। দরজা, জানালা ও কাঠের সিঁড়িতে ঘুণ ধরেছে। একইসঙ্গে রয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব।
বগুড়ার আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘এখনও রাবি কর্তৃপক্ষ এই ভবন হস্তান্তর করেনি। তবে মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশের পর সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য চলতি অর্থবছরে একটি প্রকল্প তৈরি করা হবে।
তিনি বলেন, ভবনটির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এটি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে এই ভবনে একটি জাদুঘর করলে পদ্মাপাড়ে বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসুরা ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন। তাই আমরা এটিকে তালাবদ্ধ করে রাখতে চাই না। তবে এসব বাস্তবায়ন করা দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার।’
এদিকে সংরক্ষিত এই পুরাকীর্তিতে সম্প্রতি কমিউনিটি সেন্টার বানানো হয়েছিল। সেখানে বিয়ে ও নৈশভোজ পার্টির আয়োজন করা হতো। অথচ এসব বিষয় নাকি জানা নেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর বা রাবি কর্তৃপক্ষের! এ নিয়ে নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কেউ আমাদের বিষয়টি অবহিত করেনি কিংবা অনুমতি নেয়নি। আমাদের অগোচরে এ ধরনের অনুষ্ঠান হয়েছে। তবে এখন থেকে কেউ আর এমন সুযোগ পাবে না। মঙ্গলবার পরিদর্শন শেষে সেটি তালাবদ্ধ করা হয়েছে।’
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের কোনও এক সময় ব্যবসায়িক কাজে ডাচরা বড়কুঠি নির্মাণ করেন। দেশভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে সরকারি সম্পত্তিতে পরিণত হয় এটি। ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে বড়কুঠি সেখানে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে এটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। বড়কুঠির বহির্ভাগের দৈর্ঘ্য ২৪ মিটার (৮২-০) ও প্রস্থ ১৭ দশমিক ৩৭ মিটার (৬৭-০)। দ্বিতল এই ইমারত বিভিন্ন আয়তনের মোট ১২টি কক্ষে বিভক্ত। দ্বিতলে একটি সভাকক্ষসহ ছয়টি কক্ষ আছে। কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পূর্ব-পশ্চিমে ৯ দশমিক ৬০ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৬ দশমিক ৩০ মিটার আয়তনের সভাকক্ষের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে বারান্দা রয়েছে। উত্তরের বারান্দা ৯ দশমিক ৬০ ও ৫ দশমিক ৮৫ মিটার এবং দক্ষিণের বারান্দা ৯ দশমিক ১৮ ও ৫ দশমিক ৮৫ মিটার। কক্ষের পশ্চিম দিকে দুটি ও পূর্ব দিকে একসারিতে তিনটি কক্ষ বিদ্যমান।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন