আজ রবিবার আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে এ সভার আয়োজন করা হচ্ছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ও তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থান ও নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি এ প্রতিনিধি সভার আয়োজন করছে। রাজশাহী বিভাগের সকল জেলা ও মহানগর, জেলা শহরের পৌরসভা এবং উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের সকল সংসদ সদস্যরা এ প্রতিনিধি সভায় অংশ নেবেন।
দলীয় সূত্রমতে, গত এক দশক ধরে এ বিভাগটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। এছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদও এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। তবে বেড়েছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব। বিভাগের প্রতিটি জেলাসহ সকল ইউনিটে রয়েছে নেতাদের কোন্দল। বিশেষ করে গত নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী এমপি বিরোধীরা রয়েছেন কোণঠাসায়। ফলে সাংগঠনিক দিক থেকে ততোটা শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারেনি ক্ষমতাসীন দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় তাদের ক্ষমতায়িত করলেও কমেছে সাংগঠনিক শক্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী আওয়ামী লীগে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব এখন আর জেলা কিংবা মহানগরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। দ্বন্দ্ব ছড়িয়েছে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যন্ত। গত ১১ বছরে নেতাদের দ্বন্দ্ব যতোটা শক্ত হয়েছে, দল ততোটা শক্ত হয়নি বলে দাবি প্রবীণ নেতাদের। তাদের দাবি, আগামী সম্মেলনে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ক্লিন ইমেজের নেতাদের নেতৃত্বে আনতে হবে। নইলে আগামী নির্বাচনে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে।
রাজশাহী জেলা ও মহানগর ছাড়াও দ্বন্দ্ব প্রকট রয়েছে উপজেলা পর্যায়েও। গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে দুই ভাগ। তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী গত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে রাজশাহী-১ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরোধীতা করেছিলেন। আর গোদাগাড়ীতে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে এমপির বিরোধীতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান।
রাজশাহীর পবা ও মোহনপুর নিয়ে রাজশাহী-৩ আসন। এখানে এমপি লীগ আর আওয়ামী লীগ দু’ভাগে বিভক্ত কর্মীরা। বাগমারায় এমপি বিরোধীরা এখন কোণঠাসা। উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি এমপি বিরোধী হিসেবে পরিচিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু।
দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৫ আসনে গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি দুইবারের এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা। আর মনোনয়ন পেয়েই নিজের বলয় গড়ে তুলেছেন বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমান। সেখানে কোণঠাসা হয়ে রয়েছেন দারাপন্থীরা।
এদিকে তৃণমূলের মতো জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য। গত দুই বছর ধরে জেলার সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপির সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব চলে আসছে সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেন। তারা একসঙ্গে কোন অনুষ্ঠান করেন না। এ কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আট মাস আগে। জেলার মতো মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন না। তাদের মধ্যে রয়েছে শীতল সম্পর্ক।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি বলেন, ক্ষমতাসীন বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগে নেতা বেশী। তাই নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে, এটি থাকবে। এখনো কোন দ্বন্দ্ব নেয়। তবে যারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ড করে আগামীতে তাদের পদ দেবে কি না সে ব্যাপারে নেতাকর্মীরা সিদ্ধান্ত নেবে।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। তবে কে কোন পদে আসবে আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না। দলের নেতাকর্মীরা সিদ্ধান্ত নেবে, আগামী কাউন্সিলে কে কোন পদে আসবে।
এদিকে, আগামী ১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজনস্থল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন পরির্দশন করেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। শনিবার দুপুরে পরির্দশনে যান মেয়র। পরির্দশনকালে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন