নগরীতে প্রায় ৪০ বছর ধরে কান পরিস্কার করে যাচ্ছেন চারঘাটের রতন আলী। তার বয়স এখন ৫৬ বছর চলছে। সেই ১৯৮০ সাল থেকে এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন। রতন আলী চারঘাট উপজেলার খোর্দ্দগোবিন্দপুর চকরপাড়া থেকে প্রায় প্রতিদিনই রাজশাহী নগরীতে আসেন। নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লা অফিস ঘুরে ঘুরে কান পরিস্কার করেন। কান পরিস্কার ছাড়াও কানের ব্যাথা, কানে পুঁজ, রক্তপড়া ইত্যাদির চিকিৎসা করে।
দীর্ঘদিন এ পেশার সাথে জড়িত রতন আলীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন ‘৪০ বছর ধরে এখন পর্যন্ত আমি এই পেশার সাথে আছি। সংসার জীবনে তিনি তার স্ত্রী, দুই ছেলে ইনছান আলী ও জীবন আলী। আর এক মেয়ে মুক্তা। চার বছর আগে পুঠিয়ায় মুক্তার বিয়ে দিয়েছেন। জামাই জুয়েল হোসেন সবজির ব্যবসা করেন। বড় ছেলে ইনছান আলী বিয়ে করে পৃথক রয়েছে। ছোট ছেলে জীবনও শ্রমিকরে কাজ করে। অভাবের সংসার আমার’।
তিনি জানান, দিনে এখন ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা উপার্জন হয়। এ উপার্জিত টাকায় পরিবার চলে। তবে আগে আরও বেশি হত। আবার জিনিসপত্রের দামও কম ছিল। তবে এই উপার্জন থেকে বাড়ির ৬ কাঠা ও বিলে ৫ কাঠা কিনেছে সে।
এখন আয় কম হয় কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখন তো দেশে ডাক্তার বেশি। তাছাড়া ডাক্তাররা মানুষকে আমাদের কাছ থেকে কান পরিস্কার করতে নিষেধ করেন। তারা সবায়কে বোঝায় আমাদের কাছ থেকে কান পরিস্কার করলে নাকি ক্ষতি হয়। কানে সমস্যা হয়, কানে পচন ধরে। কিন্তু এটা একদম মিথ্যা কথা। বরং আমরা যেভাবে কান পরিস্কার করি সেভাবে অনেক ডাক্তাররাও পারেননা। কেউ যদি কানের ডাক্তারের কাছে যায় তাহলে তারা ফি নেয় ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। তারা মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা ফাঁকি দিয়ে নিয়ে নেয়।’
ডাক্তারদের কথা অযৌক্তিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একদম অযৌক্তিক না, কারণ অনেকেই আছে কান ভাল করে পরিস্কার করতে পারেনা। অনেকেই নতুন কাজ শুরু করে মানুষের কানের বারোটা বাজায়। কান দিয়ে রক্ত বের করে দেয়। আর এ কারণে মানুষ আমাদের কাছে আসতে চায় না। আবার ডাক্তাররাও তো নিষেধ করে। কিন্তু তারা জানেনা আমাদের মধ্যে যারা দক্ষ তারা ডাক্তারের চেয়ে ভালো কাজ করতে পারি।’
রতন বলেন, ‘শুধু তুলা দিয়ে কানের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য নেয় ২০ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া কানে ঔষধ দিয়ে পরিষ্কার করলে নেয় ৫০-৬০ টাকা। কান পরিষ্কার করতে হাইড্রোজেন প্যারাসাইড, বেটনোভেট, অলিভ অয়েল, কামেলা ও পানি ছাড়াও কয়েক প্রকার ওষুধ ব্যবহার করেন বলে জানান তিনি। কানের অতিরিক্ত ময়লা জমে খৈল তৈরি হয়। যার কারণে মাঝ মাঝে প্রচুর ব্যাথা করে। এ সমস্যার সমাধান এরা সহজেই করতে পারি’।
কানের কী কী ধরনের চিকিৎসা করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র কান পরিস্কার ছাড়াও কানের ব্যাথা, কানে পুঁজ, রক্তপড়া ইত্যাদির চিকিৎসা করি।’
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন