রাজশাহী মহানগরীর দড়িখরবোনাস্থ বাসার গলি দিয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে ফুটপাতে দাঁড়ালেন মেহেদী হাসান। এরপর পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরলেন। গত পরশুই কিনেছেন মাস্কটি। এর আগে ব্যবহার না করলেও এখন প্রতিদিনই মাস্ক পরেই কর্মস্থলে যাচ্ছেন। দেশে ৩ জন করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পরে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন বলে জানালেন তিনি।
মেহেদী হাসানের মত অনেকেই পূর্বে ব্যবহার না করলেও, করোনা আতঙ্কে মাস্ক পরছেন নিয়মিত। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত বিভাগীয় শহর রাজশাহীতেও হঠাৎ করে বেড়েছে মাস্কের ব্যবহার। সংক্রমণ ঠেকানো ও ধুলোবালি থেকে সুরক্ষা পেতে এর ব্যবহার বেড়েছে। বাজারে তৈরী হয়েছে সঙ্কট, বেড়েছে দামও। এছাড়াও বেড়েছে হ্যান্ডওয়াশ, সাবান ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার। বিক্রি বেড়েছে দোকানগুলোতে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসি, মেগা শপ ও ফুটপাথের হকারদের দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চাহিদা বাড়ায় বেশি দামে মাস্ক বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামেও অনেকের কাছে নেই মাস্ক। অনেক দোকানেই ‘মাস্ক নাই’ কার্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। কৃত্রিম সঙ্কট তৈরী করে দাম বাড়াতেই এই কার্ড ঝুলানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন জন-সাধারণ।
রাজশাহী মহানগরের লক্ষ্মীপুর, সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টসহ একাধিক ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে মাস্কের চাহিদা বেড়ে গেছে। ওষুধের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের সংখ্যাও বেড়েছে। কেউ কেউ আগাম সর্তকতার জন্য পুরো বক্স সহকারে মাস্ক কিনছেন। আবার মাস্কের সরবরাহও কমে গেছে৷ অর্ডার দিয়েও কোম্পানির কাছ থেকে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।
নগরীর ফার্মেসিতে মিলছে বিভিন্ন ধরনের মাস্ক। মানভেদে একেকটি মাস্কের ভিন্ন ভিন্ন দাম। ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতারা বলছেন, সার্জিক্যাল মাস্ক, ফিল্টার মাস্ক, রেসপিরেটর হিসেবে তৈরি ফেস মাস্ক, কটন মাস্ক, স্পঞ্জ অ্যান্টি ডাস্ট মাস্ক বিক্রি হচ্ছে বেশি।
চাহিদা বেশি থাকায় বেড়েছে দামও। আগের তুলনায় দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। আগে যেখানে প্রতিপিস মাস্ক ২০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪০-৫০ টাকায়।
ওষুধ দোকানগুলোতে কথা বলে জানা গেছে, আগে প্রতিবক্স মাস্ক তারা কিনতেন ৭০ টাকায়। যা প্রতিপিস তিন টাকা দরে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন বক্স প্রতি দাম পড়ছে ৭৫০ টাকা। চাহিদার কারণে দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তবুও মাস্কের সংকট রয়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের বিষয়টি ছড়ানোর খবরেই বাজারে মাস্ক বিক্রি হয়েছে দ্বিগুণ দামে। এরপর কোথাও কোথাও তা বিক্রি হচ্ছে তিনগুণ দামে। আর এজন্য বাজার মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করছেন তারা।
উপশহরের ড্রীম ফার্মেসীর কর্ণধার বলেন, করোনা ভাইরাস আসার পর দোকানে থাকা সব মাস্ক শেষ হয়েছে। অনেকেই এসে ফিরে যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে চাহিদা খুব বেশি।
সাহেববাজারে একটি ফার্মেসীতে মাস্ক কিনতে আসা আব্দুল কাদির বলেন, বেশ কয়েকটি দোকানে গেলাম, প্রথমে সেগুলোতে মাস্ক পাইনি। পরে যে দুইটাতে পেলাম, সেখানে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
এছাড়াও নগরীর দোকানগুলোতে বিক্রি বেড়েছে সাবান, হ্যান্ডওয়াস, স্যানিটাইজার-সহ বিভিন্ন জীবানুনাশক পণ্যের। সাহেবাজারের একটি দোকান থেকে স্যানিটাইজার ও হ্যান্ডওয়াস কিনতে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশে করোনা সনাক্ত হওয়ার পরে জনমনে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তাই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাটাই শ্রেয় মনে করছি। ঘরে থাকলে হ্যান্ডওয়াস দিয়ে হাত ধুয়ে নেব। আর বাইরে থাকলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করব। করোনা সতর্কতাস্বরুপ এগুলো কিনলাম।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পার্থ মনি গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা ভাইরাস শুধু চীনেই নয়। অন্যান্য দেশেও ছড়িয়েছে। তাই সতর্কতার সঙ্গে বাইরে চলাফেরা করতে হবে। ঠাণ্ডা জ্বর, সর্দি করোনার লক্ষণ। যদিও মাস্ক ব্যবহারে এ ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়। এরপর যে কোনো ‘ফ্লু’ এড়াতে মাস্ক ব্যবহার করাটা ভালো।
তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কেউ নিজেকে অসুস্থ মনে করলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন