করোনা মহামারির প্রভাবে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। রাজশাহীতেও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। তবে বন্ধ সময়ে যে শিক্ষার্থীরা মেসে থাকতেন তাদের অনেকেই ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে এমনই দুশ্চিন্তার কথা জানা গেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে পরিবারের পক্ষ থেকে মেসের ভাড়া দেওয়া কঠিন। আর যারা টিউশনি করে চলতাম কিন্তু এখন তো বসে আছি কীভাবে মেস ভাড়া দিবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা না থাকায় আশপাশের এলাকায় মেসে থাকেন। কেউ কেউ বাসা বাড়ির রুম ভাড়া নিয়েও থাকেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। এছাড়া বিশেষ কিছু প্রয়োজনে কিছু শিক্ষার্থী রাজশাহীতে আছেন। তবে শিক্ষার্থীরা বাসায় অবস্থান করেও মেস ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। কেননা মেস মালিক কিংবা ম্যানেজার, বাসার মালিক ফোন করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে ভাড়া পরিশোধের কথা বলছেন। যা অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে!
বিশেষ করে যে শিক্ষার্থীরা পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে টিউশনি করে চলতেন তারাও বিপাকে পড়েছেন। যদিও এই করোনা পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত। এরমাঝে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল জেলা প্রশাসক বরাবর যেসব শিক্ষার্থীরা মেস ও ভাড়া বাসায় থাকেন অথচ এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তাদের ভাড়া মওকুফের আবেদন জানান। একইসঙ্গে মেস ও বাসার মালিকদের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার অনুরোধ জানান। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়ে ও ভাড়া প্রদানের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ‘ভাড়া মওকুফ করা হলে সবাই উপকৃত হবে।’ পুরোটা মওকুফ করা না গেলেও যতটুকু কমানো যায় করা উচিত কেননা এ সময়ে সবার কল্যাণে সবাইকে ত্যাগ করতে হবে।’ আরেক শিক্ষার্থী সারা দেশের মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের ২ মাসের ভাড়া মওকুফের দাবি জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আবেদন জানান। সম্প্রতি রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষার্থী ‘ছাত্র-ছাত্রীদের মেস ভাড়া মওকুফ প্রসঙ্গে মানবিক আবেদন’ শীর্ষক একটি স্ট্যাটাস দেন। আর বিষয়টি বিবেচনার জন্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। সেখানে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মন্তব্য করেন, ‘ন্যায্যতা রয়েছে দাবি সম্পর্কিত আবেদনটির। এ বিষয়ে মেস মালিক নিশ্চয়ই বিষয়টি গুরুত্বসহ দেখবেন। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে তাঁদের দায়িত্বের হাত বাড়াবেন আশা করি।’
রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। উৎপাদিত ফসলের টাকায় চলি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে মেস ম্যানেজার যোগাযোগ করেছেন ভাড়া প্রদানের জন্য যা দুশ্চিন্তার বিষয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি টিউশনি করে নিজের খরচ বহন করতাম। আর মেসে থেকেই পড়াশোনা করছি। তবে এখন মেস মালিক জানিয়েছেন ভাড়া দিতে কিন্তু কীভাবে ভাড়া দিবো সেটাই বুঝছি না। এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমি চলতি মাসেই মেস ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়া মেস ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। অথচ মেস মালিক ফোন দিয়ে বলেন, একজন মেয়ে নাকি ওই সিটে আসবে। আমি তো শুনে অবাক এই পরিস্থিতিতে শিফট করবে। পরে জানতে পেরেছি, যদি আমি ভাড়া প্রদান করি তাহলে তিনি বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন। কিন্তু সেটি তো অমানবিক ও অযৌক্তিক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ভারপ্রাপ্ত ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, যারা মেসে থাকে সবাই অসচ্ছল পরিবারের নয়। যারা অসচ্ছল পরিবারের তারা যাতে মেসের ভাড়া না দেয় সে বিষয়ে মেস মালিকের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। মেস মালিকের পক্ষ থেকে জানিয়েছে, যেসব শিক্ষার্থীরা দরিদ্র ও অসচ্ছল তাদের ভাড়া মওকুফ করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী মেস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘মানবিক দিক দিয়ে পরিস্থিতি খারাপ। তবে হ্যাঁ, কেউ তিন মাসের ভাড়া দেয়নি; কেউ দুই মাসের ভাড়া দেয়নি। বন্ধ হওয়ায় সব শিক্ষার্থী চলে গেছে। এভাবেই আমাকে একটা ছাত্রবাস থেকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন। যদি এ সময়ে যদি বিশ^বিদ্যালয়গুলো দুইমাসের বেশি বন্ধ থাকে তাহলে মানবিকতার দিক থেকে আমাদের পক্ষ থেকে কিছু না কিছু সমর্থন থাকবে। যাতে দুজনেরই চলে।
কিছু মেস মালিক ভাড়া চেয়েছেন এ প্রসঙ্গে বলেন, কিছু মেস মালিক আছেন তারা এমন করেই থাকে। তবে টাকা চেয়েও পাবে না। কারণ কয়েকজন শিক্ষার্থী ফোন করে জানিয়েছে এই দুর্যোগের মধ্যে টাকা দিতে পারবে না। পরিস্থিতি শান্ত হলে সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর এই মুর্হূতে যাতে শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা না চায় সে বিষয়টি দেখবো।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন