জ্বর-সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৩ জন। গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হওয়া এই ১৩ জনের মধ্যে সাতজনকে মিশন হাসপাতালে, তিনজনকে সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে এবং তিনজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনাভাইরাস পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড ৩৯ ও ৪০ নং ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস।
তিনি বলেন, জ্বর-সর্দি-কাশিসহ যারা সন্দেহভাজান তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা মিশন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর যাদের শ্বাসকষ্টও রয়েছে তাদের সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে এবং অন্য রোগে আক্রান্ত যে রোগিদের জ্বর রয়েছে তাদের রাখা হয়েছে পর্যবেক্ষন ওয়ার্ডে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে যে রোগে ভর্তি রয়েছেন তার শারীরিক অবস্থা ভাল রয়েছে। এছাড়াও ওই রোগির স্ত্রী ও ছেলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে বলে জানান ডা. সাইফুল ফেরদৌস।
এদিকে এই রাগির সংস্পর্সে যাওয়ায় রামেক হাসপাতালের ডাক্তারসহ ৪২ স্বাস্থ্যকর্মীকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। বুধবার তাদের নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্সে যাওয়ায় মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ২১ চিকিৎসকসহ ৪২ জনকে কোয়ারেন্টিানে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে ছয়জন চিকিৎসক ও ১৫ জন ইন্টার্নি চিকিৎসক। বাকিদের মধ্যে ১২ জন নার্স ও নয়জন সহায়ক (আয়া-পরিছন্নকর্মী)। এদের মধ্যে ছয় চিকিৎসককে পর্যটন মটেল প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বাকিরা প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।
মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, যাদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে তারা জরুরী বিভাগ, রেডিয়োলজি বিভাগ, ৪২ ও ৩৯ নং ওয়ার্ডে কর্মরত ছিলেন। আগামী দুই দিনের মধ্যে সবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। মঙ্গলবার দিনভর তাদের চিহ্নিত করা হয়। সন্ধ্যায় তাদের কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও লকডাউন করা হয়েছে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড। পরবর্তি নির্দেশনা দেয়া না পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডের কোন রোগি প্রবেশ ও বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সাইফুল ফেরদৌস বলেন, রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন রোগির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আব্দুস সোবহান নামের ৮০ বছর বয়সের ওই রোগি গত ১৭ এপ্রিল রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। বাঘা থেকে আসা এই রোগিকে প্রথমে তাকে ৪২ ও পরে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে নেয়া হয়। পরের দিন তার এক্স-রে করার পর করোনার লক্ষণ পাওয়া গেলে তাকে সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। সোমবার তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর করোনা পাওয়া যায়।
এই করোনা রোগি নিয়ে হাসপাতালকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ্য করে চিকিৎসকদের প্রকাশ্যে নিয়মিত ব্রিফিং বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের গেটে করোনাভাইরাসের রাজশাহীর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে চিকিৎসকরা ব্রিফিং করতেন। মঙ্গলবার ঘোষণার পর বুধবার সকালে ব্রিফিং করা হয়নি।
রাজশাহী জেলার আটজনের মধ্যে পুঠিয়া উপজেলায় পাঁচজন, বাঘায় একজন, বাগমারায় একজন ও মোহনপুরে একজন আক্রান্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে চারজন নারী ও চারজন পুরুষ। তাদের মধ্যে সাতজন ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে এসেছেন। আর বাঘার ওই বৃদ্ধের ছেলে এসেছেন ঢাকা থেকে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন