করোনা সংক্রমণরোধে লকডাউন রাজশাহী। প্রথম রমজানে তাই অচেনা রাজশাহীকে দেখল নগরবাসী। বিখ্যাত ও বাহারী ইফতারের পশরা ছিলনা সুনামধন্য দোকান, হোটেল ও রেস্তোরাগুলোতে।
লকডাউনের কারণে বন্ধ ছিল রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী বাটার মোড়ের জিলাপির দোকান। তবে রমজান উপলক্ষে এই জিলাপির দোকানটি চালু করা হচ্ছে। গতকাল রোববার বিকেলেও জিলাপি ভাজা শুরু হয়। এরপর চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আর এই ঐতিহ্যবাহী জিলাপি কিনতে বিকেল থেকেই নগরবাসী ভিড় জমাতে শুরু করেন বাটার মোড়ে।
সরেজমিন দেখা যায়, দোকানের সামনে অর্ধ-শতাধিক লোকের ভিড়। সবাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। অপেক্ষা ঐহিত্যবাহী, সুস্বাদু বাটার মোড়ের ঝিলাপীর জন্য। সুস্বাদু এই ঝিলাপী ছাড়া যেন রাজশাহীবাসীর ইফতার জমে না। জিলাপির দোকান মালিকের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আগত ক্রেতাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে একে একে দেওয়া হচ্ছে জিলাপি।
দোকানের কর্মচারী রমজান আলী বলেন, আগত ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে দূরত্ব বজায় রেখে সবাইকে লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে। এরপর একে একে তাদের কাছে জিলাপি বিক্রি করা হচ্ছে।
ক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, রাজশাহীর সুস্বাদু খাবারের মধ্যে অন্যতম এই বাটার মোড়ের ঝিলাপী। এই ঝিলাপী ছাড়া ইফতারে যেন পরিপূর্ণতা আসে না। প্রথম দিনে ঝিলাপী ছাড়াই ইফতার করেছি। আজ যখন জানতে পারলাম, বাটার মোড়ের ঝিলাপীর দোকান খুলেছে। তখন আর থাকতে পারিনি। লকডাউনের মধ্যেও ঝিলাপী কেনার জন্য চলে এসেছি।
এই দোকানের আছে সুদীর্ঘ ৬৬ বছরের ঐতিহ্য। ৬৬ বছর আগে জিলাপির যেমন স্বাদ ছিল এখনো ঠিক তেমনি অক্ষুণ আছে। শুধু রাজশাহী নয় আশপাশের জেলার মানুষের কাছে একনামে পরিচিত ‘বাটার মোড়ের জিলাপি’। রাজশাহীতে থেকেছেন অথচ জীবনে একবার হলেও এই জিলাপির স্বাদ নেন নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একবার খেলেই যেন জিহবায় স্বাদ লেগে থাকে বহুদিন। জিলাপির বিশেষত্বই হল ৬৬ ধরে একই স্বাদ, একই মান বজায় রয়েছে।
জিলাপি কড়াই থেকে তুলতে না তুলতেই দোকানে উপচেপড়া ভোজন রসিকদের পেটে চলে যায়। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় এই জিলাপি কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভোজনরসিকরা। আর রমজান মাসে ইফতারিতে এ জিলাপি মানে তো কথায় নেই।
সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি এই জিলাপি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন প্রায় আড়াই থেকে তিন মণ জিলাপি বিক্রি হয়। মজাদার ইফতারের জন্য মহানগরবাসীদের কাছে যেন অমৃত স্বরূপ এই বাটার মোড়ের জিলাপি।
১৯৫২ সালে রাজশাহী নগরীতে ‘রানীবাজার রেস্টুরেন্ট’ নামের একটি দোকানের পথচলা শুরু হয় ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিনের হাত ধরে। তখন মিষ্টির পাশাপাশি জিলাপি বিক্রি করতেন তিনি। ১৯৭৪ সালে তমিজ উদ্দিনের ছেলে শোয়েব উদ্দিন মিষ্টি বাদ দিয়ে শুধু জিলাপি দিয়ে রেস্টুরেন্ট চালু করেন।
সময়ের পরিবর্তনে রানীবাজার রেস্টুুরেন্টের নাম হারিয়ে যায়। যা পরে স্থানের নাম অনুসারে বাটার মোড়ের জিলাপি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কালের বিবর্তনে ছয় যুগ পার হওয়া বাটার মোড়ের জিলাপির বর্তমানে হাল ধরেছেন তমিজ উদ্দিনের চার নাতি।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন