রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা গ্রামের কৃষক জলিল সরদার। মাত্র ছয়মাস আগে বাড়ির পাশে পতিত ১০ শতক জমিতে রোপন করেছিলেন বারি-৪ জাতের ৮০টি আম গাছ। বছর না পেরোতেই তার প্রতিটি গাছে ঝুঁলছে চোখ ধাঁধাঁনো সুস্বাদু জাতের সেরা আম। প্রতিটি আমের ওজন ৫০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম।
আম চাষী জলিল সরদার জানান, মাত্র ৬ মাস আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের থেকে ৮০টি গাছ সংগ্রহ করেছিলেন।
আমের চারা রোপণের তিন মাসের মধ্যে মুকুল এসেছিল গাছে। বর্তমানে গাছে প্রচুর আম ধরেছে। প্রতিটি আমের ওজন এখন ৫০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অল্প সময়ে এতো আম গাছে ধরবে তিনি ভাবতেই পারেনি। তার বাগানে আম দেখতে নিজ গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রামের চাষীরা প্রতিদিনই আসে। এবং অনেকে আম বাগান করার আগ্রহের কথা জানান।
এমন আম শুধু তানোরের কৃষক জলিজ সরদারে বাগানে একাই নয়, রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে শত শত কৃষক বাগানে সোভা পাচ্ছে এমন সুস্বাদু আম। বিশেষ করে অল্প সময়ে বাগান থেকে আম পাওয়া যাবে এমন জাতের আম বাগানের দিকে ঝুঁকছে চাষীরা।
গত কয়েক বছরের রাজশাহীঞ্চলের, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলায় হাজারো চাষী বানিজ্যিক ভাবে অল্প সময়ের আম বাগান করেছেন। এতে ভাল ফল পাচ্ছেন বলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত দেশের প্রথম শংকর জাতের বারি আম-৪। দেশি নাবি জাত আশ্বিনার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রোরিডা থেকে সংগৃহীত রঙিন আমের সংমিশ্রণে উদ্ভাবন করা হয় বারি আম-৪ জাত।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৯৩ সালে বারি আম-৪ উদ্ভাবন করে। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রথম চাষ শুরু হয়।
একই জমিতে আম চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের রবি শষ্য ও শাক-সবজি উৎপাদন করছেন। এতে লাভবান হচ্ছেন তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের বিজ্ঞানী কৃষিবিদ জহরুল ইসলাম বলেন, দেশি নাবি জাত আশ্বিনার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রোরিডা থেকে সংগৃহীত রঙিন আমের সংমিশ্রনে উদ্ভাবন করা হয় বারি আম-৪ জাত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত করেন এ জাতের আম। এ জাতের আম উত্তরঞ্চলের মাটিতে চাষের উপযোগী হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। সুস্বাদু এ জাতের আম শেষ সময়ে পাক ধরে। তাই এ আমের অন্য সব আমের চেয়ে কদর বেশি। চাষীরা বাজারে মুল্য বেশি পাই। তাই অল্প সময়ে এমন আমের বাগান করতে বেশ আগ্রহ বেড়েছে রাজশাহীঞ্চলের কৃষকদের।
এ কৃষিবিদ আরো জানান, এ জাতের গাছ প্রতি বিঘায় ১৫০ টি পর্যন্ত রোপন করা যায়। তার মধ্যে রবি সশ্যসহ শাক সবজি চাষ করে ভালবানও হচ্ছেন চাষীরা। তাই বারি-৪ আমের গাছে দিকেই ঝুঁকছেন কৃষকেরা।
চারা রোপণের এক বছরে থেকে দেড় বছরের মাথায় আম তুলতে পেরে খুশি হয় চাষিরা। বারি আম-৪ এর মুকুল আসে ফাল্গুন মাসে। আর আম পাকে শ্রাবণ মাসে। প্রতিটি ফলের ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় হালকা সবুজ আর পাকলে হলুদ। রসাল আঁশ বিহীন আমটি উচ্চ ফলনশীল।
বিজ্ঞানী জহুরুল ইসলাম জানান, শুধু বারি আম-৪ নয়, এই অঞ্চলের চাষিরা এখন বারি আম-৮, ব্যানানা, গোরমতি জাতের বাগানও করছেন। চাষিদের সাফল্য দেখে অনেকে চলতি বছর নতুন বাগান করছেন। এভাবে আম চাষ অব্যাহত থাকলে উৎপাদিত আম বিদেশে রফতানী করেও আয় করা সম্ভব।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন