আসন্ন ঈদুল ফিতরে যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামলাতে এবার তিন জোড়া ‘ঈদ স্পেশাল’ ট্রেন পেতে যাচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। মোট তিনটি রুটে এই ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়া রাজশাহী-ঢাকা রুটে নিয়মিত চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে সংযোজন করা হবে অতিরিক্ত বগি। বাড়তি বগি পেতে যাচ্ছে একমাত্র বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেসও।
রাজশাহী-ঢাকা রুটের ট্রেনবহরে সদ্যই নতুন বিরতিহীন আন্তঃনগর বনলতা এক্সপ্রেস যুক্ত হওয়ায় তিন বছর পর এবারই প্রথম ‘ঈদ স্পেশাল’ নামে এই রুটে কোনো ট্রেন থাকছে না।
জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) এএমএম শাহ নেওয়াজ মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালানোর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ট্রেনগুলোর শিডিউল চূড়ান্ত করেছেন। আগামী ২ জুন থেকে এই ট্রেনগুলো শিডিউল অনুযায়ী চলাচল করবে। আর যথাসময়ে (১০ দিন আগে) টিকিটও ছাড়া হবে।
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ২৯ মে। টিকিট বিক্রি চলবে ২ জুন পর্যন্ত। এর মধ্যে আগামী ২৯ মে ৭ জুনের, ৩০ মে ৮ জুনের, ৩১ মে ৯ জুনের, ১ জুন ১০ জুনের ও ২ জুন ১১ জুনের আগাম ফিরতি টিকিট বিক্রি হবে বলেও উল্লেখ করেন রেলওয়ের এই কর্মকর্তা।
তিনি জানান, ঈদুল ফিতর সমনে রেখে যাত্রীদের সুবিধার্থে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে তিন জোড়া নতুন স্পেশাল ট্রেন চালু করতে যাচ্ছে। আপ-ডাউন মিলে এক জোড়া ট্রেন একটি রুটে চলবে। এভাবে তিনটি রুটেই তিন জোড়া ট্রেন চলবে। রুটগুলো হচ্ছে- ঈশ্বরদী-ঢাকা, খুলনা-ঢাকা ও লালমনিরহাট-ঢাকা। ঈদ স্পেশাল নাম দিয়ে ঈদের আগে ২ জুন থেকে ট্রেনগুলো চলাচল করবে। আবার ঈদের ছুটির শেষে পরবর্তী সাত দিন এই তিন জোড়া স্পেশাল ট্রেন চালাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে।
এছাড়া আগামী ৩১ মে থেকে রাজশাহী-ঢাকা রুটে নিয়মিত চলাচলকারী আন্তঃনগর সিল্কসিটি, পদ্মা ও ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন তিনটিতে একটি করে অতিরিক্ত শোভন কোচ বাড়ানো হবে। গত ২৫ এপ্রিল থেকে চালু হওয়া পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একমাত্র বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটিতেও অতিরিক্ত একটি শোভন চেয়ার কোচ ও একটি করে স্নিগ্ধা (এসি) কোচ সংযুক্ত করা হবে।
ঈদ স্পেশাল ট্রেনের শিডিউল সম্পর্কে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার ফুয়াদ হোসেন আনন্দ বলেন, মৈত্রী র্যাকে খুলনা-ঢাকা রুটে ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলবে মাত্র একদিন। ট্রেনটি আগামী ৩ জুন দিনগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকা ছাড়বে।
খুলনা পৌঁছাবে সকাল ৮টা ৩৫ মিনেট। খুলনা থেকে ছাড়বে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে। ঢাকা পৌঁছাবে রাত ১১টা ১০ মিনিটে। এরপর বন্ধ। ঈদের আগে এই রুটের স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস এক দিনেরই। তবে ছুটির পর পরবর্তী সাতদিন নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী এ রুটে স্পেশাল ট্রেন চলবে।
আগামী ২ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত চলবে ঈশ্বরদী-ঢাকা রুটের ঈদ স্পেশাল ট্রেন। ট্রেনটি ঢাকা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে আসবে। ঈশ্বরদী পৌঁছাবে রাত ১১টা ১০ মিনিটে। ঈশ্বরদী থেকে ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে ছাড়বে। ঢাকা পৌঁছাবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে। লালমনিরহাট-ঢাকা রুটের ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলবে ২, ৩ ও ৪ জুন এই তিন দিন। ট্রেনটি লালমনিরহাট থেকে ছাড়বে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে।
এটি ঢাকা পৌঁছোবে পরদিন সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। ঢাকা থেকে ছাড়বে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে। লালমনিরহাট পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টায়। তবে এই ট্রেনটি ৪ জুন ঢাকা থেকে লালমনিরহাট যাবে। কিন্তু ওইদিন আর লালমনিরহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে না। কারণ ওইদিন চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ। তাই ওইদিন লালমনিরহাট গিয়ে ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এছাড়া ঈদের ছুটির পর নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী ঈদ স্পেশাল ট্রেনগুলো পরবর্তী সাতদিন চলাচল করবে বলেও উল্লেখ করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার ফুয়াদ হোসেন আনন্দ।
এদিকে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বলেন, যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে এবার তিন জোড়া ‘ঈদ স্পেশাল’ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ঈদযাত্র নিরাপদ করতে এবার সম্ভব সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। যা ব্যবস্থা আছে তা দিয়ে শতভাগ সেবা দিতে পারবো বলে আমি আশা করি।
তিনি আরও জানান, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে’ মানুষের নিরাপদ ভ্রমণের আস্থার প্রতীক। আমরাও তাই সর্বোচ্চ সেবা দিতে অবিচল। প্রতিবছরই ঈদের সময় যাত্রীদের বাড়তি চাপ থাকে। তাই ট্রেনের সূচিতে যাতে কোনো বিপর্যয় না ঘটে, সেদিকে তারা বাড়তি নজর রাখছেন।
টিকিট কালোবাজারি রোধ ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান মহাব্যবস্থাপক।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪