মাথার ওপর সূর্যের তির্যক রশ্মি দেখে বোঝার উপাই নেই ধরায় আষাঢ় নেমেছে। সকাল থেকে প্রখর রোদ। গরমও ধারণ করেছে চরম আকার। এর মধ্যেই চলছে ঈদের ছুটি। এক মাস সিয়াম সাধনার পর কাঠফাটা রোদে ঈদের জামাত শেষে প্রথম দিনের অলস দুপুর কেটেছে তাই গৃহবন্দি থেকেই।
ঈদের দিন ভ্যাপসা গরমে বিকেলটাও ছিল ক্লান্তিময়। বেশিরভাগ মানুষই প্রাণভরে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বাড়ির বাইরে বের হতে পারেননি। কিন্তু গরম তো আর কমছেই না! তাই দ্বিতীয় দিন খরতাপ মাথায় নিয়েই বিনোদনপ্রেমী মানুষ পা বাড়িয়েছেন বাইরে। এজন্য রোববার (১৭ জুন) সকাল থেকে বিনোদনকেন্দ্রে মানুষের ঢল নেমেছে। তবে সকালের চেয়ে ভিড় বেশি বিকেলেই।
পরিবার-পরিজন কিংবা প্রিয়জন নিয়ে সবাই ভিড় জমাচ্ছেন রাজশাহীর সবচেয়ে বড় বিনোদন কেন্দ্র শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায়। কেবল শহর থেকেই নয়, দূর-দূরান্ত থেকে বাস কিংবা মিনিট্রাক ভাড়া করেও দলবেঁধে এখানে ছুটে আসছেন ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে। তাই ঈদের দ্বিতীয় দিনে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা।
রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ছাড়াও জিয়া শিশু পার্ক, ভদ্রা শিশু পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের সমান ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঈদের ছুটিতে রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা মানুষগুলোও দীর্ঘদিন পর পরিবার নিয়ে বের হয়েছেন।
শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানের ভিড় চোখে পড়ার মতো। বাড়তি বিনোদনের জন্য দর্শনার্থীরা দূর-দূরান্ত থেকে এখানে এসেছেন। সকাল গড়িয়ে বিকেল হতেই কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে।
মহানগরীর ভদ্রা এলাকা থেকে তিন কন্যাকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন জাহাঙ্গীর হোসেন ও নাসরিন সুলতানা দম্পতি। জানতে চাইলে তারা বলেন, মেয়েদের আবদার মেটাতে চিড়িয়াখানায় চলে এসেছি। কিন্তু এখানে খাঁচার মধ্যে ‘বাঘ’ ও ‘সিংহ’ না দেখে হতাশ।
নাসরিন সুলতানা বলেন, বাচ্চারা তাদের বাবাকে তেমন একটা পায় না। তিনি সারাদিনই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে পড়ে থাকেন। এজন্য ঈদের ছুটি পেয়েই মেয়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে বের হওয়ার জন্য। তাই তীব্র গরমের মধ্যেই মেয়েদের নিয়ে চলে আসা।
উপশহর ২ নম্বর সেক্টর থেকে থেকে বাবার সঙ্গে চিড়িয়াখানায় এসেছে ফাহমিদা আক্তার মীম। প্রথম শ্রেণীর এই শিক্ষার্থী জানায়, ঘুরতে এসে খুব মজা করেছে সে। বাঘ না পেলেও হরিণ দেখেছে, বক দেখেছে। আরও অনেক কিছু দেখেছে। আজকের দিনটিও তাই ঈদের দিন মনে হচ্ছে তার কাছে।
মীমের বাবা আরাফাত সিদ্দিকী জানান, আবহাওয়াটা মোটেও ভালো নয়, রোদের তাপ বেশি। তাই গরমও বেশি। বেড়াতে এসে হাঁটতে গিয়ে ঘেমে যাচ্ছে। তাই রুমাল দিয়ে বার বার মেয়ের মুখ মুছে দিতে হচ্ছে। কিন্তু বেড়াতে আসতে পেরে এই গরমের মধ্যেও তার মেয়ে মহাখুশি। তাই তিনিও খুশি।
এদিকে শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ঘুরে দেখা যায়- সবাই যেন ঈদের অনাবিল আনন্দে ভাসছে। এই রোদ-গরমও যেন তাদের বিনোদনে ছেদ ঘটাতে পারছে না। বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীতে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো উদ্যান ও চিড়িয়াখানা এলাকা। দুপুরের পর পরই অন্যতম এই বিনোদনকেন্দ্রটি দর্শনার্থীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। কিছুটা হতাশ হলেও কোন খাঁচায় প্রাণী আছে আর কোনটিতে নেই তা নিয়ে ক্ষোভ নেই কারও মনেই। চিড়িয়াখানার প্রতিটি প্রাণীর খাঁচার সামনেই সমান ভিড় করছেন তারা।
ছোট্ট শিশুরা এক পা দু’পা হেঁটে বাবা-মায়ের হাত ধরে চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখছে। আর উদ্যানের সবুজ নির্মল পরিবেশে সবাই যেন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ছোটরা বিভিন্ন রাইডস উপভোগ করছে। কেউ রঙিন রঙিন গাড়ি চালাচ্ছে, কেউ দোলনায় উঠছে কেউ আবার লোহার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে পিচ্ছিল পাতে বসে চোখের পলকেই সুড় সুড় করে নিচে নামছে। সে এক বাঁধভাঙা আনন্দ।
বড়রা উদ্যানের কৃত্রিম খালের সবুজ টলটলে পানিতে থাকা বোট নিয়ে ঘুরছেন। জলকেলিতে মেতে উঠছেন, কৃত্রিম পাহাড়ে চড়ছেন। কেউ আবার সবুজ বেষ্টনীতে ঘেরা বেঞ্চের ওপর বসে হাওয়া খাচ্ছেন। উদ্যানের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত হেঁটে সাবার অনন্দ উদযাপনের দৃশ্য উপভোগ করছেন কেউ কেউ।
রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার তত্ববধায়ক ডা. ফরহাদ উদ্দিন ঈদ উপলক্ষে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটছে এখানে। প্রথম দিন ভিড় একটু কম থাকলেও আজ বেশি। সূর্যাস্ত পর্যন্ত খোলা থাকবে উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, তাই দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪