যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে ট্রেন। সেতুর ওপরে ট্রেন উঠলে গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় সেতুতে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেতুতে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে রাজধানীর সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ। হুমকিতে রয়েছে যাত্রীদের নিরাপত্তাও। এ থেকে মুক্তির জন্য যমুনা নদীতে নতুন রেলসেতু নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রকল্প হাতে নেওয়ার সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এর অগ্রগতি শূন্যের কোটায়।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে এখন ঝুঁকিপূর্ণভাবে ট্রেন চলাচল করছে। সেতুতে বেশ কয়েক দফায় ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেন ধীরগতিতে চালানো হয়। সেতুতে অপরিকল্পিতভাবে রেলপথ যুক্ত করায় এটি মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ অবস্থায় যমুনা নদীতে বিদ্যমান সেতুর সমান্তরাল পৃথক একটি রেল সেতু স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৬ সালের ০১ জানুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
এতে ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। রেল সেতুটি নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দেবে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।
প্রকল্প হাতে নেওয়ার সাড়ে তিন বছর পার হতে চললেও অগ্রগতি শূন্য। এখনও শুরু হয়নি প্রকল্পের মূল কাজ। ঠিকাদার নিয়োগও হয়নি। তবে, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করার আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প পরিচালক ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক কামরুল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি এখনও বলার মতো হয়নি। এখনও ঠিকাদার নিয়োগ দিতে পারিনি। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করবো।
সাড়ে ৩ বছরে অগ্রগতি শূন্য এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাড়ে তিন বছরে ফিজিবিলিটি স্টাডি, সার্ভে ও পরামর্শক নিয়োগের কাজে ব্যয় হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে। রেল সেতুটি স্টিলের হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পৃথক রেল সেতুটি নির্মিত হলে যাত্রাপথ ঝুঁকিমুক্ত তো হবেই সঙ্গে রক্ষা পাবে বঙ্গবন্ধু সেতু। কারণ পৃথক রেলসেতু হয়ে গেলেই সেতুতে অপরিকল্পিতভাবে যোগ করা রেলপথটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সেতুটি করার জন্য ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ নির্মাণ করা হবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা।
এদিকে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা ঋণ দিতে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে জাইকা। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চলমান প্রকল্পটি ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা। সেতুর এক পাশে টাঙ্গাইল এবং অন্য পাশে সিরাজগঞ্জ। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে হবে নতুন এ সেতুর অবস্থান।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মহাসড়কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চার লেনের সেতুটি হবে ডুয়েলগেজ। এতে ওয়াগন ও কন্টেইনার বাল্ক অধিক পরিমাণে বহন করা যাবে। সেতু নির্মাণ হয়ে গেলে উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ নিরাপদ ও দ্রুতগামী রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা পাবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, যমুনায় নতুন রেলসেতু নির্মাণ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। পরিবহন করা যাবে ভারী মালামালবাহী কন্টেইনার। সেতুর বঙ্গবন্ধু সেতু ইস্ট (বিবিই) এবং বঙ্গবন্ধু সেতু ওয়েস্টে (বিবিডব্লিউ) স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার বেজড ইন্টারলিংকিং (সিবিআই) সিগনালিং সিস্টেম থাকবে। থাকবে সেতু বরাবর গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইনও।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, যমুনা সেতুতে ট্রেন উঠার আগে আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকি। এর পরই সেতুতে ট্রেন ওঠে। গতি কমানোর জন্য সেতুতে কন্ট্রোলারও ব্যবহার করা হচ্ছে। এ জন্য আমরা পৃথক রেল সেতু নির্মাণ করছি।
তিনি বলেন, পৃথক রেলসেতু নির্মাণের নানা কারণ আছে। রেল সেতুটি হবে স্টিলের। এর নির্মাণ সম্পন্ন হলে বিদম্যান যমুনা সেতুর স্থায়িত্ব বাড়বে। আশা করছি আমরা প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করতে পারবো।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর