চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে এবং করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে দায়িত্বপালনকালে কেউ আক্রান্ত হলে পদমর্যাাদা অনুযায়ী ৫-১০ লাখ টাকা এবং মারা গেলে ২৫-৫০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবিমা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একইসঙ্গে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য একটা বিশেষ ইন্সুরেন্স করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) সকালে গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে তিনি এ ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দায়িত্ব পালনকালে কেউ যদি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হন তবে তার চিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা সরকার নেবে। তাদের জন্য একটা স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা আমরা করে দেবো। যারা আক্রান্ত হবে তাদের জন্য আমরা পদমর্যাযদা অনুযায়ী ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার একটা স্বাস্থ্যবিমা করে দেবো। আর খোদা না করুক কেউ যদি মৃত্যুবরণ করেন তবে তাদের জন্য এই বিমাটা আমরা ৫গুণ বাড়িয়ে দেবো।’
দায়িত্বপালনকারী সবাইকে বিশেষ ইন্সুরেন্স দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য আমরা একটা বিশেষ ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থা করে দেবো। সেটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমি বলে দিয়েছি। আমরা একটা ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থা করছি।’
করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের পুরস্কৃত করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মী মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের খালি মুখে ধন্যবাদ নয় তাদের পুরস্কৃত করতে চাই। তাদের পুরস্কৃত করতে হলে তাদের তালিকাটা আমার দরকার। যারা এই ধরনের সাহসী স্বাস্থ্যকর্মী তাদের উৎসাহ দেওয়া আমাদের প্রয়োজন। তাদের একটা সম্মানীও দিতে চাই। সেজন্য ইতোমধ্যে তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছি। তালিকা তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।’
যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিজেদের সুরক্ষার জন্য পালিয়ে আছে তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে এটা তাদের জন্যই করবো যারা এই করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে যারা কাজ করেছেন। জানুয়ারি থেকে করোনা ভাইরাস শুরু। মার্চ থেকে এটা ব্যাপকভাবে দেখা দেয় এই মার্চ মাসে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন এই বিমাটা তাদের জন্য। যারা কাজ করেননি, নিজেদের সুরক্ষার জন্য পালিয়ে আছেন, যেখানে দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসা পাননি, অন্য সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা পাননি তাদের জন্য এই প্রণোদনা না। তারা এটা পাবেন না।’
শর্ত দিয়ে কাউকে চিকিৎসাসেবায় আনা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি শর্ত দেয় আমাদের দিলে আমরা আসবো। আমি বলবো আগামীতে কিভাবে কাজ করেন আমরা পর্যবেক্ষণ করবো। সেখানে দেখবো যদি কেউ সত্যিকারে মানুষকে সেবা দেন তাহলে তাদের কথা আমরা চিন্তা করবো। কিন্তু শর্ত দিয়ে আমি কাউকে কাজে আনবো না।’
‘যাদের মধ্যে এই মানবতা বোধটুকু নেই। তাদের প্রণোদনা নিয়ে নিয়ে আসার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি বাংলাদেশে সে ধরনের দুযোর্গ আসে প্রয়োজনে বাইরে থেকে আমরা চিকিৎসক নিয়ে আসবো। বাইরে থেকে নার্স নিয়ে আসবো। এই ধরনের দূর্বল মানসিকতা দিয়ে আমাদের কাজ হবে না। এটা হলো বাস্তবতা।’
যারা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন না তারা ভবিষ্যতে ডাক্তারি করতে পারবে কি, তাদের চাকরি থাকবে কি না তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন রোগী এলে চিকিৎসা করাবে তার জন্য নিজেকে সুরক্ষিত করা যায়। এপ্রোন পরে নেন মুখে মাস্ক লাগান, গ্লাভস নেন, স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন, হাত ধুয়ে রোগী দেখেন। রোগী কেন ফেরত যাবে। আর একজন রোগী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে সে রোগী কেন মারা যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র কেন মারা যাবে। এই রোগী কোনো কোনো জায়গা গিয়েছে সেখানে কোনো কোনো ডাক্তারের দায়িত্ব ছিল আমি তাদের নামটাও জানতে চাই। কারণ ডাক্তারি করার মতো, চাকরি করবার মতো তাদের সক্ষমতা নাই। তাদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া উচিত। আমি মনে করি।’
‘বরং ভবিষ্যতে তারা ডাক্তারি করতে পারবে কি না সেটাই চিন্তা করতে হবে। ডাক্তার আমাদের প্রয়োজন আছে এটা নিয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু এই মানসিকতা থাকবে কেন, মানবতা বোধ হারাবে কেন। ’
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি এটা আতঙ্ক। সবাই সুরক্ষিত থাকবে এটা সত্য। কিন্তু একজন ডাক্তার তার একটা দায়িত্ব থাকে। তাদের সুরক্ষিত করার জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করে যাচ্ছি। আমরা আরও করবো। সেক্ষেত্রে আমরা কোন কার্পণ্য করছি। সারা বিশ্বব্যাপী এই সমস্যা।’
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ