রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্কের কথা মনে আসলেই আগে মনে পড়ে উষা সিল্কের নাম। সিল্ক বলতে ঐতিহ্যবাহী ‘উষা সিল্ক’। তাই প্রতি ঈদে একটিবার হলেও উষা সিল্কের শোরুমে আসতে হয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি ঈদে তাদের গ্রাহদের জন্য এমনসব নতুন ডিজাইনের পোশাক তৈরি করে; যা না কিনে শোরুম থেকে বের হওয়া যায় না। এমনটাই বলছিলেন উষা সিল্কের শোরুমে আসা একজন ব্যংক কর্মকর্তা নিউটন।
নিউটন শুক্রবার বিকেলে স্বপরিবারের এসেছিলেন নগরীর সপুরা বিসিক এলাকায় অবস্থিত উষা সিল্কের শোরুমে। এসময় তিনি স্ত্রীর পছন্দকরা সিল্কের একটি শাড়ি কেনেন। তিনি আরও বলেন, বিয়ের আগেও আমি এখানে এসেছি। কখনও আমার জন্য পাঞ্জানি কিনতে, আবার কখনও মা-বোনের জন্য শাড়ি বা থ্রিপিস কিনতে। উষা সিল্ক রাজশাহীর একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান।
সিল্কের জগতে উষা সিল্কে’র রয়েছে অনন্যতা, একই সাথে তাদের পোশাগুলোতে রয়েছে বৈচিত্রতা, নতুনত্ব ও আভিযাত্য। শুধু সিল্কের কাপড় তৈরিই নয় সেই কাপড়ে নতুনত্ব এনে দেয় বাহারি ডিজাইন ও কারুকাজ। সেই কারুকাজের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে দক্ষ জনবল।
প্রতিষ্ঠানটির দেয়া তথ্য মতে, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিা পায় উষা সিল্ক। প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর নির্মিত প্রতিষ্ঠানটিতে একদিকে যেমন রয়েছে তৈরি সিল্ক পোশাকের শোরুম; তেমনি রয়েছে নিজস্ব কারখানা। সরেজমিনে উষা সিল্কের সুবিশাল সোরুমটিতে ঢুকে দেখা যায়, সুসজ্জিত ও পরিপাটি করে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তাদের পণ্য। রঙিন কাপড়গুলো দেখে যে কারও মন আনন্দে ভরে উঠবে। পুরুষ সেলস ম্যনদের পাশাপাশি এখানে রায়েছে নারি সেলস মেন। তারা সবসবয় ক্রেতাদের সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। প্রতিটি পণ্যের মূল লেখা রয়েছে। এতে করে ক্রেতাদেরকে তাদের পছন্দের পাশাপাশি বাজেটের মধ্যের পোশাক বেছে নিতে সুবিধা হয়। এত বিশার পরিসরে পরিপাটি প্রতিষ্ঠানটিতে ঢুকলে একদিকে যেমন দেখা মেলে বাহারি পোশাক; তেমনি অভিজ্ঞতা মেলে সিল্ক কাপড় তৈরি দেখার বাস্তব চিত্র।
উষা সিল্ক কর্তৃপক্ষ পণ্য তৈরি ও বিক্রয়ের পাশাপাশি ক্রেতাদের সুবিধার্থে এই ঈদে ফ্যামিলি অফার চালু করেছে। এই অফারে একজন ক্রেতা ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাচ্ছেন উষা সিল্কের পোশাক পণ্যে। এখানেই শেষ নয়! শোরুম থেকে মাত্র ১০হাজার টাকার পোশাক কিনলে ক্রেতাদের জন্য রয়েছে ‘মাস্টার কার্ড’ ব্যবস্থা। এই কার্ড দেখিয়ে শোরুমের পণ্য ক্রয়ে আজীবন একজন ক্রেতা ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পেতে পারেন। এবারের ঈদে উষা সিল্কের পোশ পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।
এবার ঈদে প্রতিষ্ঠানটিতে চাহিদার শীর্ষে থাকা পণ্যের মধ্যে রয়েছে মসলিন সিল্কের তৈরি শাড়ি, থ্রিপিস, টুপিস। এই শাড়ি, থ্রিপিস ও টুপিসগুলোতে হাতের কাজ ও এ্যম্ব্রডারি করে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। একেতো গরম তার ওপর আবার ঈদ। এই দুই বিষকে মাথায় রেখে উষা সিল্ক তাদের পোশাক পণ্যে এবার ভিন্নতা এনেছেন। এবারের ঈদে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে মসলিন সিল্কের শাড়ি। হাতের কারুকাজ করা মসলিন সিল্কের শাড়ি মান ভেদে ১৫শ থেকে ১৮হাজার টাকা, থ্রিপিস দুই হাজার থেকে চারহাজার পাঁচশ করে বিক্রয় করা হচ্ছে। সেই সাথে বলাকা সিল্কের ওপর কাঁথা স্ট্রিচ এর কাজ করা শাড়ি ও থ্রিপিসের ও চাহিদা লক্ষ করা গেছে। মান ভেদে এই বলাকা সিল্কের শাড়ি ছয় হাজার থেকে ১৪হাজার টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে এনডি ও জয়ত্রী সিল্কের চাহিদা। সেই সাথে পুরুষদের পাঞ্জাবি, সাট ও ফতুয়ার চাহিদাও রয়েছে। পাঞ্জাবি মান ভেদে নয়শ থেকে চার হাজার পাঁচশ করে বিক্রয় হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির জিএম জহুরুল ইসলাম বলেন, সিল্ক রাজশাহীর একটি ঐতিহ্যবহী পণ্য। এই সিল্ক রাজশাহীকে সরা দেশের পাশাপাশি বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের এই দীর্ঘ পথ চলায় ক্রেতাদের সন্তুষ্ট অর্জনে জন্য পোশাকের মাণের দিকেই আমরা বেশি নজর রেখেছি। ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের পণ্যের চাহিদা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরাদের ক্রেতা শুধু রাজশাহী কেন্দ্রীর নয়; পুরো উত্তরবঙ্গ অর্থাত জয়পুরহার, দিনাজপুর, বগুড়া, নওগা, কুিড়গ্রামসহ সারা দেশের মানুষ আমাদের এই শোরুমে আসেন তাদের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক কিনতে। আমাদের এই শোরুমে ঢুকে আপনি সব ধরণের, সব বয়সের মানুষের পোশাক পাবেন। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের কথা মাথায় রেখেই আমর আমাদের পোশাক পণ্যগুলোকে সাজিয়ে থাকি।
তিনি আরও জানান, শোরুমের বাইরে বিভিন্ন অনলাইন প্রতিষ্ঠান আমাদের পণ্য সেল করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ডার দেখে মনে হচ্ছে তারাও অনলাইনে ভালোই সাড়া পাচ্ছেন। সময়ের সাথে সিল্কের চাহিদা বেড়েছে। এক্ষেত্রে সিল্কে কাপড়ের পাশাপাশি, কারুকাজের ওপরও নজর দিচ্ছেন ক্রেতারা। শুধু কাপড় ভালো হলেই এখন চলে না। তাই সময়ের সাথে ক্রেতাদের রুচির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়। যা প্রতিনিয়তই পরিবর্তন ঘটছে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন