হালের ফ্যাশন নিয়ে নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে বছরজুড়েই। তবে হালহকিকত বোঝা যায় ঈদ মৌসুমে। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরে নানান রং ও ডিজাইনের পোশাকের সাজে ফ্যাশন হাউসগুলো। ঈদে সবার স্বতন্ত্র পোশাক চাই-ই চাই!
সেই সঙ্গে লাগবে পোশাকে আভিজাত্যের পরশ। পোশাকে আভিজাত্য আনতে বিকল্প নেই রেশমের। আর যখনই রেশমের কথা উঠবে, তখনই মনে পড়বে রাজশাহীর নাম। শিক্ষা নগরী বা আমের রাজধানীসহ যে নামেই পরিচয় হোক না কেন, রেশমনগরী হিসেবে রাজশাহী পরিচিতি আরও আগের। ঐতিহ্যের পরম্পরায় ‘রেশম’ ও ‘রাজশাহী’ দু’টি নামই বহন করছে একে অপরের পরিচিতি।
রাজশাহীর মানুষের ঈদ আর রেশম একই সুতোয় গাঁথা। রেশমের পোশাক ছাড়া যেনো ঈদের খুশিই বেমানান। বাহারি রঙের থ্রিপিস, রেশমি শাড়ি, না হয় পাঞ্জাবি।
রেশমের শাড়ি, থ্রি-পিস বা লেহেঙ্গার প্রতি নারীদের বিশেষ টান যেমন নতুন কিছু নয়, তেমনি এমন অনেক পুরুষ রয়েছেন যাদের রেশমি পাঞ্জাবি লাগবেই। হয়তো এজন্যই নতুন চটকদার ভিনদেশি সব নাম আর দামের কাপড়ের ভিড়ে রেশমের অভিজাত্য এতোটুকু কমেনি। এখনও রাজশাহীর মানুষ রেশমি পোশাক ছাড়া ঈদ বা অন্য কোনো উৎসবের কথা ভাবতেই পারেন না।
অন্তত রমজানের শেষভাগের ঈদ বাজার ঘুরে দেখলে বোঝা যায় ক্রেতাদের মধ্যে রেশমের চাহিদা কতো। বিষয়টি মাথার মধ্যে রেখেই এখনও রাত-দিন এক করে কাজ যাচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী রাজশাহীর বিভিন্ন সিল্ক ফ্যাক্টরির কারিগর ও মালিকরা। সিল্ক সুতা দিয়ে বাহারি সব রঙের নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস ও শিশুদের পোশাক তৈরি করে চলেছেন দিন-রাত।
রাজশাহীর সপুরায় থাকা রেশমপল্লীতে ঈদের প্রস্তুতিটা শেষ হয়ে যায় রমজান শুরুর আগেই। এরপরও ক্রেতাদের চাহিদা থাকায় পুরো রমজান জুড়েই কাপড় বুননের কাজ চলে তাদের। চাঁদরাত পর্যন্ত তাদের ব্যস্ততার শেষ নেই। বাড়তি পারিশ্রমিক নিয়ে সমানতালে কাজ করেন শ্রমিকরা। আর ব্যবসা ভালো থাকায় ফ্যাক্টারির মালিকরাও থাকেন খুশি। কারণ ঈদ দিয়েই বছরের মন্দাভাব কাটে তাদের।
মঙ্গলবার (১২ জুন) ২৬ রমজান। অর্থাৎ, ঈদের আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। মহানগরীর সপুরায় থাকা রেশমপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, ঈদ সামনে রেখে প্রতিটি শোরুমই এখন ক্রেতায় ঠাসা। রমজানের শেষ দশ দিন শুরুর পরপরই কেনাকটা পুরোদমে জমে উঠেছে রাজশাহীর সিল্ক হাউসগুলোতে। প্রতিটি পোশাকেই যেনো বর্ণিল আলোর ঝিলিক। চোখ ধাঁধানো রং আর বাহারি ডিজাইনের অভিজাত রেশমি পোশাকের টানে সেখানে ছুটছেন তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের ক্রেতারা।
হাজার কপড়ের ভিড়ে নিজের ও পরিবারের প্রিয় মানুষগুলোর জন্য সেরা এবং স্বতন্ত্র পোশাকটি পরখ করে নিচ্ছেন তারা। এমনও দেখা গেছে অনেক তরুণী সিল্ক বাজারে ঢুকে বাহারি রং আর গুণে মুগ্ধ হয়ে কোনটা রেখে ঠিক কোনটা নেবেন ধন্ধে পড়ে যাচ্ছেন। তাই সাহায্য নিচ্ছেন প্রিয়জনের।
রাজশাহীর সপুরা সিল্কে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ফারহানা কবীর কথা জানান, যতই পোশাকই থাক সবগুলোই রেশমের নিচে। রেশমি পোশাকের আলাদা সৌন্দর্য, আলাদা কদর। তাই ঈদে রেশমি পোশাক কিনবেন। এজন্যই এসেছেন শেষ মুহূর্তে কেনাকাটা সারতে। কিন্তু সব পোশাকই তার ভালো লাগছে। কোনটা রেখে কোনটা নেবেন বুঝে উঠে পারছেন না। এরপরও নিজের ও অন্যের সহায়তায় দু’টি পোশাক নিয়ে ফেলেছেন।
সপুরা সিল্ক ফ্যাক্টরির শোরুম ঘুরে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে এবার রেশমের বিপুল পণ্যের সমাহার ঘটিয়েছেন তারা। বলাকা কারচুপি, সিল্ক কাতান, এন্ডি, সুই-সুতা কাতান, কোটি সিল্ক, জয়শ্রী, থ্রি স্টার কাতান, জামদানি কাতান, র-কাতান, ওয়াটার কাতান, ধুপিয়ানা, ঝরনা কাতান, কারুচুপিসহ হরেক নামের শাড়ি-কাপড়, থ্রিপিস, ওড়না, পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া এবং স্কার্প থরে থরে সাজানো। লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি- বর্ণিল সব রঙের আলোয় নতুন পোশাকগুলো যেন ঝলমল করছে।
সপুরা সিল্কে শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮শ ৯৯ টাকা থেকে ২২ হাজার টাকার মধ্যে। পাঞ্জাবি রয়েছে ৮শ ৯৯ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকার মধ্যে। সিল্ক ছাড়াও সুতির পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। মসলিন সিল্ক রয়েছে ৫ হাজার ৫শ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। মটকা সিল্ক রয়েছে ৩ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার ৫শ টাকার মধ্যে। থ্রি-পিস রয়েছে ২ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায়। সিল্কের শার্ট রয়েছে ৭শ থেকে ১ হাজার ৬শ ৫০ টাকার মধ্যে।
ফুলহাতা ও হাফহাতা ডিজাইনের বিভিন্ন রঙের ফতুয়া রয়েছে সাড়ে ৫শ থেকে ১ হাজার ৮শ টাকার মধ্যে। সুতি শার্ট রয়েছে ৮শ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। সফট সিল্ক শাড়ি রয়েছে ১ হাজার ৬শ ৫০ থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে। এন্ডি সিল্ক রয়েছে ৩ হাজার ৭শ থেকে ৫ হাজার টাকায়।
বলাকা সিল্ক রয়েছে ৪ হাজার ২শ থেকে ৫ হাজার টাকায়। র-মসলিন রয়েছে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। বলাকা স্টিচ শাড়ি রয়েছে ৬ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া শোরুমে রয়েছে কন্ট্রাস্ট থান শাড়ি ও বিভিন্ন ধরনের সুতি পোশাক, স্যান্ডেল, জুতাসহ নানান পণ্যের সমারোহ।
সপুরা সিল্কের ম্যানেজার সাইদুর রহমান বলেন, ঈদে তারা নতুন নতুন আইটেম যোগ করছেন। বিশেষ করে গ্রীষ্ম-বর্ষা সব ঋতুতেই পরার উপযোগী করে এবার বিভিন্ন ডিজাইনের মসলিন সিল্কের পোশাক তৈরি করা হয়েছে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় ভিড় বেশি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের বেচাকেনা। চাঁদরাত পর্যন্ত দম ফেলার ফুরসত নেই।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪