সেই তিন দশক আগে কাঁচা রাস্তাটি প্রথম পাকাকরণ করা হয়েছিল। তারপর থেকে আর কোন সংস্কার হয়নি। রাস্তার পিচ পাথর তো উঠেছেই, নিচের ইট বালি উঠে কাঁদাতে পরিণত হয়েছে। অনেক জায়গা বড় গর্তে সৃষ্টি হয়েছে। এমন রাস্তায় প্রায় দিনই ছোট বড় যানবহন বিকল হয়ে পড়ে সড়কের মাঝে। কোথাও কোথাও যাত্রীরা নেমে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে যানবহনগুলোকে পারাপার করছে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা-আমনুরা প্রধান সড়কের চিত্র এটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে যাতায়েতের আর কোন বিকল্প রাস্তা না থাকায় অনেকটা বেকায়দায় পড়ে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে তানোর ও মোহনপুর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
শুধু মুণ্ডুমালা-আমনুরা সড়কেই নয়,তানোরের সাথে গোদাগাড়ী উপজেলার যোগাযোগের এক মাত্র সড়কটি অবস্থায়ও অনেকটা করুণ। মুণ্ডুমালা হতে গোদাগাড়ীর জটে বটতলা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার রাস্তাটি ১৫ বছর ধরে সংস্কার না হওয়াই এমন পর্যায়ে গেছে যে দেখে মনে হবে এটি পাকা সড়ক নয়। যে কাদাময় কোন গ্রামের রাস্তা। পিচ পাথর ইট বালুর কোন চিহ্ন নেই। বড় বড় গর্ততে পরিণত হয়েছে। গোদাগাড়ী হতে মুণ্ডুমালা পর্যন্ত চলছিল বাস। এ করুণ রাস্তার কারণে ৭ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে বাস চলাচলও।
তানোর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সুত্রে মতে, ১৯৯২ সালের প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা আমনুরার থেকে তানোর হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত প্রধান সড়ক কাচা থেকে পাকাকরণ করা হয়। এর মধ্যে আমনুরার ধামধুম ব্রিজ থেকে বাগসারা পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার সড়ক তানোর উপজেলার মধ্যে রয়েছে।
তানোর উপজেলার ৩৩ কিলোমিটার পাকা সড়কের মধ্যে মুণ্ডুমালা বাজার হতে-বাগসারা পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়ক একাধিকবার সংস্কার করা হলেও মুণ্ডুমালা-থেকে আমনুরা ধামধুম পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কটি ১৯৯২ সালের পরে ২৮ বছরের একবারেও সংস্কার করা হয়নি। যার কারণে এ সাত কিলোমিটার সড়কের এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে রাস্তা পিচ পাথর উঠেছে তো বটে নিচ থেকে ইট বালি সরে গিয়ে কাদা পানিতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, আমনুরা থেকে মুণ্ডুমালা মাত্র সাত কিলোমিটার রাস্তার জন্য পোরশা, রহনপুর, নাচোল, আড্ডার উপজেলার কয়েক লাখ মানুষকে ৪০ কিলোমিটার ঘুরে গোদাগাড়ী হতে রাজশাহী শহরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে খরচ ও সময় দুটোই বেশি লাগছে। আর ৪০ কিলোমিটার ঘুরে রাজশাহী যাতায়াতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে রোগিবহনকারী যানবহনগুলো।
বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিন মুণ্ডুমালা-আমনুরা সড়কে গিয়ে দেখা যায়, জুমারপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে একাধিক বড় গর্ত। সে গর্তে আসা দিকে চালবোঝায় একটি ও আমনুরা যাওয়ার পথে খড়ি বোঝায় একটি টলি রাস্তার মাঝ পথে বড় গর্তে পড়ে আটকা পড়েছে। এ দুই টলির আটকা পড়ায় দুই দিক থেকে আসা অর্ধশত যানবহন আটকা পড়েছে। দুই টলি গর্তে থেকে উঠতে পারছিলনা। অবশেষে বিভিন্ন যানবহন থেকে যাত্রীরা নেমে আসেন। এবং ২৫-৩০ জন যাত্রী টলি পিছনে কেউ বা সামনে রশি ধরে টেনে ধরলেই সে গর্তে থেকে ঠলি উঠতে পারে। তার পরেই যাত্রীরা পারাপার হতে পারে। এ দৃশ্য শুধু একদিনের নয়,এ রাস্তা পারাপার হতে এমন দৃশ্য প্রতিদিনের।
আমনুরা থেকে রাজশাহী যাতায়াত করে এমন একাধিক বাস চালক জানান, মুণ্ডুমালা থেকে সাত কিলোমিটার আমনুরা সড়কটি চলাচলে অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এ রাস্তায় চলতে হচ্ছে হেলে দুলে। যাত্রীরা ভয়ে জড়সড় হয়ে পড়ে।
তারা আরো জানান, সড়কটি সংস্কারের জন্য একযুগ ধরে সড়ক কর্তৃপক্ষকে বাস মালিক সমিতি পক্ষে অনুরোধ করা হলেও এখন পর্যন্ত তা করা হয়নি। বাস মালিক সমিতি প্রতিবছর এ রাস্তায় ভাঙ্গা চোরা ও বড় গর্তে নিজে থেকে ইটের খোয়া ফেলে। তবু ও কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি একবারের জন্য দেখ ভাল করেনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) তানোর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মুণ্ডুমালা হতে আমনুরা ধামধুম ৭ কিলোমিটার রাস্তা শুধু সংস্কারই নয়, রাস্তার দুই পাশে তিন ফিট করে সম্প্রাসরণ ও করা হবে। ইতিমধ্যে এ রাস্তার জন্য প্রায় ৬ কোটির বেশি টাকার টেন্ডার আহব্বান করা হয়েছে। হয়তো বা চলতি বছরের শেষের দিকে কাজ শেষ হবে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন