রাজশাহী শহরের আওতা বাড়িয়ে মেগাসিটি গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে ভোটের মাঠে এগিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বিভিন্ন সভা সমাবেশে তিনি এমন আশ^াস দিচ্ছেন। তার স্বপ্নের কথা জানাচ্ছেন নগরবাসীকে। নির্বাচিত হলে গত পাঁচ বছরে পিছিয়ে যাওয়া রাজশাহীতে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে লিটনের। ইতিমধ্যে রাজশাহী নগরীকে প্রায় সাড়ে তিনশ বর্গকিলোমিটারে মেগাসিটির ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, নির্বাচিত হলে নতুন প্রজন্মের বড় অংশের কর্মস্থানের টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছেন তিনি। বিভিন্ন সভায় তার পরিকল্পার কথাও তুলে ধরছেন লিটন। তিনি বলেন, শিল্প-কারখানা স্থানের মাধ্যমে রাজশাহীতে লক্ষাধিক ছেলে-মেয়ের চাকরি ব্যবস্থা করা সম্ভব। সুযোগ পেলে আগামীতে এ কাজ করবেন তিনি।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গত টার্মে রাজশাহীতে গ্যাস এনেছি শুধু বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহারে জন্য নয়। রাজশাহীতে একশ শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করার জায়গা আছে। আগামীতে গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শিল্প কারখানা, গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আর এর মাধ্যমে রাজশাহীতে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হবে।
পাঁচ বছর আগে রাজশাহী নগর উন্নয়নে যে গতিধারা শুরু হয়েছিলো তা ক্রমেই পিছিয়ে পড়েছে। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনের পর রাজশাহীকে অন্তত ১৫ বছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। উন্নয়নে পিছিয়ে দেয়া সেই নগরে আবারো গতি ফেরানোর টার্গেট এবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের। আর এমন ভাবনা ভোটারদের মধ্যে জাগ্রত করতে এবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে রাজশাহী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধিন ১৪ দল। এ জন্য তরুন ভোটারদের কাছে টানার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজশাহী সিটিতে এবার বিপুল সংখ্যক নতুন ভোটার হয়েছেন। তারাও লিটনের পক্ষে উন্নয়ন ভাবনায় যুক্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাদশা বলেন, ‘খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র থাকাকালে রাজশাহীর যে উন্নয়ন হয়েছে তার সুনাম এখনও আছে। ঢাকায় গেলে সবাই বলে, রাজশাহী একটা পরিচ্ছন্ন শহর। কিন্তু এই শহরের সৌন্দর্য অনেকটাই বিলিন হয়ে গেছে, শুধু গত সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার কারণে। এ কারনে তিনি রাজশাহীর উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি।
এদিকে লিটন-বাদশার ভাবনার সঙ্গে এক হয়েছেন এবার রাজশাহীর ভোটাররা। বিশেষ করে তরুন ভোটাররা এবার অগে থেকেই উন্নয়নের জন্য লিটনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। রাজশাহী নগরীর তরুন ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা উন্নয়নের পক্ষে। গত ৫ বছর রাজশাহী যেভাবে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে তারা তা টের পেয়েছেন।
কলেজ পড়–যা তাসনীম তন্নী, মাহাজুবা লীন, পল্লব মন্ডল, আবু আহমেদ এবার রাজশাহী নগরীর প্রথম ভোটার হয়েছেন। খায়রুজ্জামান লিটন ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের দুই টার্ম তুলনা করে নতুন এই ভোটাররা এরই মধ্যে লিটনের পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন। তারা বলছেন, নিজের চোখে লিটনের ৫ বছর আর বুলবুলের ৫ বছর দেখেছেন। কিভাবে উন্নয়নের গতিধারা স্থবির করে দেয়া হয়েছে তাও অবলোকন করেছেন। রাজশাহীর উন্নয়নে লিটনের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে নতুন ভোটারদের একটি অংশ বলেন, এক সময় পদ্মাপাড়ে তরুণদের ভিড় থাকতো সবসময়। এখনও তরুণরা আসে। তবে আগের সেই উৎসাহ নেই। বিকল হয়ে আছে ওয়াইফাই জোন। বিনোদনকেন্দ্রগুলোর অবস্থাও বেহাল। বুলবুলের কোনো উন্নয়ন তাদের চোখে পড়েনি বলেও জানান নতুন ভোটাররা।
রাজশাহী নগরীর সাংস্কৃতিক কর্মী কামারুল্লাহ সরকার বলেন, লিটনের আমলে রাজশাহীর পদ্মাতীরকে মনোরম বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। সেখানে সংযোজন করা হয় ওয়াইফাই। ল্যাপটপ নিয়ে তরুণের মেলা বসত সেখানে। নগরবাসীর প্রায় সবার প্রাণের কেন্দ্রে পরিণত হয় পদ্মাতীরের এই ওয়াইফাই জোন। এখনো এখানে অনেক মানুষ আসছে। কিন্তু তাদের মধ্যে আগের সেই উৎসাহ নেই।
কারন দীর্ঘদিন ধরে ওয়াইফাই প্রযুক্তি বিকল। এখন আর সেই সুবিধা নেই। এখন সবাই আসে পদ্মার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তবে নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না এলাকাটি। নগরীর বড়কুঠির বিনোদনকেন্দ্র, উন্মুক্ত মঞ্চ ও তালাইমারী শহীদ মিনার চত্বরের পরিবেশ দিন দিন নোংরা হয়ে গেছে। পদ্মাপাড়ে এখন গরুর খামার গড়ে তোলা হয়েছে। গত ৫ বছরেও মেয়র বুলবুল তা সরাতে পারে নি। এমন মেয়র আর নয় বলেও মত দেন তিনি।
আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি ভোট। কিন্তু গেল ৫ বছরে রাজশাহী বদলে গেছে অনেকটা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী অনেকটা বিবর্ণ। নেই ওয়াইফাই জোন, থমকে আছে বহুতল ভবন নির্মাণ। বেতনভাতা নিয়ে রাসিক কর্মীদের আন্দোলন চলছেই। পদ্মাপাড়ের সেই পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যের শহরে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। সাড়ে চার বছরে বিমোহিত রূপ কোথায় যেন উধাও! নতুন ভোটার ছাড়াও বাইরে থেকে যারা আসছেন শুধু তারাই নন, স্থানীয়দের কাছেও শহরের সৌন্দর্যের এ অবনতির বিষয়টি পরিষ্কার। নগর হাসপাতাল, বিনোদনকেন্দ্রের অবস্থা বেহাল; থেমে গেছে মশক নিধন কার্যক্রম। বেশিরভাগ মানুষ একবাক্যেই বলছেন, গত নির্বাচনে (২০১৩) মেয়র পরিবর্তনের পর সব সেবায় ধস নেমেছে।
এ অবস্থায় সদ্য বিদায়ী মেয়রের মেয়াদকাল মূল্যায়ন করে সাবেক মেয়র এবং আসন্ন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মনে করেন, নগরীর সেবা কার্যক্রমগুলো ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। নতুন কোনো কাজ করেন নি বিএনপির মেয়র। তিনি মনে করেন সদ্য বিদায়ী মেয়রের যোগ্যতা ও নেতৃত্বের ঘাটতির কারনে রাজশাহী পিচিয়ে পড়েছে। গতি পায়নি কোনো উন্নয়ন কার্যক্রমে।
তবে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, নগরীতে মানুষ বাড়লেও সেই তুলনায় কর্মী ও যন্ত্রপাতি বাড়েনি। তারপরেও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে তার আমলে। এ অবস্থায় আগামীতে সুযোগ পেলে পরিষ্কার নগরীর প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন তিনিও।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন