কোটা আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলায় আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চায় তার পরিবার।
প্রতিদিন তরিকুলের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। তার দরিদ্র পরিবার এ ব্যয়ভার বহন করতে পারবে কি না তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে। অসহায় পরিবারটি চায়, তরিকুলের চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
শুক্রবার (৬ জুলাই) রাতে তরিকুলকে নগরীর রয়্যাল হাসপাতালে দেখতে গেলে বাংলানিউজের প্রতিবেদকে এসব কথা বলেন তার বোন ফাতিমা খাতুন।
তরিকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। তার মাস্টার্স চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে। কোটা আন্দোলনে রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি।
জানা যায়, গত ২ জুলাই বিকেলে কোটা অন্দোলনকারীরা জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল বের করলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের মধ্যে তরিকুলকে একা পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রামদা, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে তাকে আঘাত করেন। এতে তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের দু’টি হাড় ভেঙে যায়। এছাড়া মাথায় গুরুতর জখম হয়। ওইদিন বিকেলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কিন্তু বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) বিকেলে তার চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই রামেক হাসপাতাল থেকে ‘জোরপূর্বক’ ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরে তার বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম ও সহপাঠীরা মিলে তাকে রয়্যাল হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
তরিকুলের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম বগুড়া আজিজুল হক কলেজে মার্কেটিং বিভাগে অনার্স করছেন। বোন ফাতিমা খাতুন বগুড়ার অন্য একটি মহিলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স করছেন। পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র আয়ের উৎস বাবার কৃষিকাজ।
তরিকুলের বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তার বোন ফাতেমা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ভাই খুবই শান্তশিষ্ট স্বভাবের। সে কখনো কারো সঙ্গে ঝামেলায় জড়ায়নি। কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নয়। অনেক কষ্টে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছি। তাকে যেভাবে মারধর করা হয়েছে, তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। একটু নড়াচড়া করলেই সে কাতরে উঠছে। ভাইয়ের কষ্ট আমার সহ্য হচ্ছে না।
তার চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, তরিকুলের সহপাঠী, বড় ভাই, পরিচিতজনদের সহায়তায় তার চিকিৎসা চলছে। তরিকুলের সহপাঠীরা অর্থ সংগ্রহ করে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করছে। তাকে দিনে দু’টি ইঞ্জেকশন দিতে হয়, যার একেকটির দাম ১৫০০ টাকা। হাসপাতালের সিট ভাড়া, ডাক্তারের ফি, ওষুধপত্র সবমিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়ে ফাতেমা খাতুন বলেন, তরিকুলের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার ব্যয়ভার কীভাবে বহন করবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের পক্ষে তার চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব নয়। আমরা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার ভাইয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতের মুখে। তরিকুলকে বাঁচাতে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সহায়তা চাই।
হাসপাতালে তরিকুলকে দেখতে আসা তার সহপাঠীরা জানান, তরিকুলের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিন চিকিৎসার পেছনে অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। তারা নিজেরা সহায়তা করছেন আবার পরিচিতজনদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। কিন্তু এসব আর্থিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে তার পরিবারের পক্ষে চিকাৎসা করানো সম্ভব হবে না।
রয়্যাল হাসপাতালের চিকিৎসক সাঈদ আহমেদ বাবুর তত্ত্বাবধানে তরিকুলের চিকিৎসা চলছে। সাঈদ আহমেদ বাবু জানান, হাতুড়িপেটায় তরিকুলের ভেঙে যাওয়া ডান পায়ের হাড় জোড়া লাগতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হতে পারে। শুক্রবার সকালে তারা তরিকুলের এক্সরেসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করেছেন। সবগুলোর রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। এগুলো পেলেই তাকে হাসপাতালে কতোদিন থাকতে হবে বা অস্ত্রোপচার লাগবে কি না তা জানা যাবে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪