ঘরের দরজায় ঈদ উল আজহা। কোরবানীর ঈদ হওয়ায় এ ঈদের পশুর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। প্রতি বছর চাহিদা বাড়লেও রাজশাহীর অধিকাংশ খামারিদের পালন করা পশু দিয়ে জেলার কোরবানীর চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার পশু বেশি থাকে। তবে এবার রাজশাহীতে ব্যতিক্রম ঘটেছে। খামারিরা পশুপালনে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। যার কারণে জেলায় এবার প্রায় দুই লাখ পশু সংকটে পড়েছে। গো খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে এবারে খামারিরা পশু পালন করেনি।
খামারিরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে লাগামহীন ভাবে গোখাদ্যের দাম বেড়ে চলছে। বেশি দামে এক বছর ধরে গো খাদ্য কেনে পশুপালন করে সে অনুপাতে বাজারে দাম না পেয়ে গত বছর লোকসান গুণতে হয়েছে। লাভ তো দুরের কথা অনেক ছোট ছোট খামারিরা পথে বসে গেছে। অনেক ছোট-বড় খামারিরা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। সে কারণে এ বছর পশু সংকট দেখা দিয়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় কোরবানি চাহিদা রয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার পশু। জেলার ১১ উপজেলায় ছোট বড় মিলে ১৭ হাজার ৭০০টি খামার আছে। এসব খামারে মজুদ আছে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০৯ কোরবানীযোগ্য পশু।
এর মধ্যে রয়েছে ষাড় ১৮ হাজার ৭১২টি, বলদ ৩ হাজার ৭২৯টি গাভী ৬ হাজার ৮৩৪টি, মহিষ ২ হাজার ৬০৪টি, ছাগল ৮৫ হাজার ৩১৭টি, ভেড়া ৭ হাজার ৭৮০টি অন্য ৫৩৩টি পশু মজুদ আছে।
কোরবানীতে জেলার চাহিদার চেয়ে প্রায় দুই লাখ পশু সংকট আছে। এ হিসাব চলতি বছরের মে মাসে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের থেকে ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে জেলা প্রাণিসম্পাদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার বলছে কোরবানী ঈদ আসতে আসতে পশু সংখ্যা একটু বাড়তে পারে।
গত বছর রাজশাহী জেলায় চাহিদা ছিল তিন লাখ ১০ হাজার পশু। আর জেলার খামারগুলোতে মজুত ছিল তিন লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোরবানীযোগ্য পশু। চাহিদার থেকে ৪৩ হাজার পশু বেশি ছিল।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামের বুলবুল হোসেন দুই আগে তিনটি দেশি জাতের গরু নিয়ে বাড়িতে ছোট আকারে খামার গড়ে তুলেছিলেন গতবার। গত কোরবানী ঈদে বিক্রি করে তিন গরুতে তার ২৪ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। তাই তিনি চলতি বছর আর গরু পালন করেননি।
বুলবুল বলেন, গত বছরে তিনটি গরু পালন করতে বেশ খরচ হয়েছে। গোখাদ্যের দাম বেড়েগেছে কয়েক গুণ। বেশি দামেও গরু কিনতে হয়েছে। তার পরে গত ঈদে ভারতীয় গরু বেশি উঠায় গরু দাম না পাওয়া গত বছর লোকসানে গরু বিক্রি করতে হয়েছে। তাই গোখাদ্য অতিরিক্ত টাকায় কেনে সে অনুপাতে পশুর দাম না পাওয়াই চলতি বছর তিনি আর পশু পালন করেনি বলে জানান।
গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়নের পাকড়ি কসায় পাড়ার মোমেনা বেগম। তিনি এবার ছোট আকারে বাড়ি খামার করে দুইটি গরু পালন করেছে। ঈদ উল আজহা উপলক্ষে গরুটি পাল শুরু করেন তিনি।
মোমেনা বেগম বলেন, গত বছর ছোট সাইজের দুইটি ষাঁড় কিনে ছিলেন ৮০ হাজার টাকায়। ভাল করে লালন পালন করাই গরুর সাইজ ভালই হয়েছে। এক বছরে খড় ভুষিসহ গরু পালনের প্রয়োজনি তে খরচ হয়েছে আরো ১৮ হাজার টাকা।
বাড়িতে গরুর পাইকের এসে দুই ষাঁড়ের এক লাখ ৫ হাজার টাকা দাম বলে গেছে। সোমবারের মুণ্ডুমালা হাটে গিয়ে বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
রাজশাহীর জেলা অতিরিক্ত প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, চলতি বছর রাজশাহীতে যে দুই লাখ পশু সংকট আছে তা মে মাসের জেলার প্রায় ১৭ হাজার ছোট বড় খামারীদের পালন করা পশুর হিসাব ধরে করা হয়েছে। পুনরাই চলতি মাসে হিসাব করা হচ্ছে। ঈদ আসতে আসতে এর সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, কয়েক বছরে গোখাদ্যের দাম বাড়ায় পশু পালনে দ্বিগুণ খরচ বেড়েছে। এত খরচ করে খামারারি সে ভাবে লাভবান হতে পারছেন না। সে কারণে অনেক ছোট খামারিরা পশু পালন ছেড়ে দিচ্ছে।
ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন আরো বলেন, রাজশাহী জেলায় শুধু ১৭ হাজারের বেশি ছোট বড় গবাদিপশু খামার গড়ে উঠেছে। দেশে দেশি গরুর চাহিদ ও দাম ভাল পাওয়ার আশায় অনেকে অন্য পেশা বাদ দিয়ে পশু খামারের দিকে ঝুকেছিল। গত বছর কোরবানী আগে ভারতীয় গরু বাজারে আসায় দেশের গরুর দাম কমে যাওয়াই অনেক ছোট খামারিদের লোকসান গুণতে হয়েছিল। গত বছরে লোকসান ও গোখাদ্যের দাম বাড়ায় এ বছর খামার করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন