‘নিরাপত্তাহীনতা’ দেখিয়ে রাজশাহীর আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সব বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। তবে সন্ধ্যা থেকে বাস চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (৩ আগস্ট) সকালে রাজশাহী থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।
হঠাৎ করে পরিবহন শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিশেষ করে আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। তবে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিআরটিসি’র বাসগুলো নিয়মিত সিডিউল অনুযায়ী চলাচল করছে।
এদিকে বাস চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে বিকেল ৫টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপ।
তাৎক্ষণিকভাবে বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর রহমান পিটার বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি তাদেরও সমর্থন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবিই যৌক্তিক। আমরাও শিক্ষার্থীদের মতো নিরাপদ সড়ক চাই। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে তদের যৌক্তিক আন্দোলনের মধ্যে একটি গোষ্ঠী জড়িয়ে পড়েছে এবং তারা ছাত্রদের আন্দোলনের ওপর ভর করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা শুরু করেছেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভিড়ে ঢুকে যানবাহন ভাঙচুরসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের অপচেষ্টা শুরু করেছে গোষ্ঠীটি।
তাই ‘নিরাপত্তাহীনতার’ বিষয়টি চিন্তা করে দিনের বেলায় আপাতত বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সন্ধ্যা থেকে বাস চলাচল করবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানান পিটার।
তবে আকস্মিক বাস বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। শুক্রবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সড়ক পথে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার যোগযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দূর-দুরান্তে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েও যানবাহন না পেয়ে পথে পথে সাধারণ যাত্রীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
রাজশাহীর শিরোইলে শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান বাস টার্মিনাল, ঢাকা বাস টার্মিনাল ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, এসব টার্মিনাল থেকে সকাল ১০টার পর কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে মহানগরের শিরোইল, ভদ্রা ও রেলগেট বাসস্ট্যান্ডে সাধারণ যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
বাস না পেয়ে কেউ কেউ বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। কেউবা আবার ফিরে যাচ্ছেন বাড়ি। অনেকেই আবার রাজশাহী রেলস্টেশনে ভিড় করতে দেখা গেছে। এতে চাপ বাড়ছে ট্রেনে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকায় সিট না পেলেও স্ট্যান্ডবাই টিকেট নিয়ে যাত্রীরা রওয়ানা দিচ্ছেন। এতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীমুখী যাত্রীরা।
এছাড়া রাজশাহী থেকে রংপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, নাটোর, পবানা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস চলাচল করায় ভুক্তভোগীরা মহানগরের কুমারপাড়া ডিপো ও রেলগেট বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছেন। তবে সব সময় বিআরটিসির বাস না থাকায় দুর্ভোগ কাটছে না সাধারণ যাত্রীদের। ফলে ছুটির দিনে মাইক্রোবাস, সিএনজি ও দূরের যাত্রার জন্য রেলপথকেই বেছে নিচ্ছেন অনেক যাত্রী।
রাজশাহীর শিরোইলে ঢাকা বাস টার্মিনালে আসা মহানগরের উপশহর এলাকার শফিকুল ইসলাম বলেন, সকালে জরুরি কাজে তার ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টার্মিনালে আসার পর তিনি জানতে পারেন বাস চালাচল বন্ধ। বিকল্প হিসেবে তিনি দুপুরের ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার কথা ভাবছেন। কিন্তু স্টেশনে গিয়ে দেখেন দুপুরে ট্রেনে টিকিট নেই।
শাইলা ইসলাম নামে অপর এক নারী যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, সকালে ঢাকা যাওয়ার জন্য হানিফ পরিবহনের কাউন্টার থেকে গত ২৬ জুলাই আগাম টিকেট নিয়ে ছিলেন তিনি। টিকেটে তার মোবাইল নম্বরও দেওয়া ছিল।
কিন্তু বাস চলাচল না করার বিষয়টি কাউন্টার থেকে তাকে জানানো হয়নি। সকাল ১০টার তিনি এসে দেখেন বাস চলাচল বন্ধ।
কাউন্টার থেকে এরই মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আকস্মিক বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় তার যাত্রা বাতিল করতে হচ্ছে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪