ভোগান্তি যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না ঈদে ঘরমুখো মানুষের। বাসে-ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়ের ফাঁদে পড়তে হচ্ছে তাদের। রাজশাহীর বাস টার্মিনাল এবং রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে ঘরমুখোদের দীর্ঘ অপেক্ষার চিত্র দেখা গেছে।
মাঝপথে এসে এমন অপেক্ষা কারো কারো কাছে বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও ক্লান্তি ছাপিয়ে ঘরে ফিরতে পেরেই আনন্দিত সবাই।
ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি নওগাঁর পোরশায় যাচ্ছেন আইনুল ইসলাম। গতকাল রাত ১২টায় রাজশাহীগামী কোচে উঠেন তিনি। রাজশাহীতে এসে পৌঁছেন দুপুর ১২টায়।
তিনি বলেন, পথে দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তির অন্ত ছিল না। তারপও ক্লান্তিকর যাত্রা শেষে রাজশাহীতে এসে পৌঁছলাম। বাস থেকে নেমেই সোজা যাই নগরীর বিন্দু মোড়ের বিআরটিসি কাউন্টারে।
কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে, টিকিট দুদিন আগেই শেষ। পরে মেইন কাউন্টারে গিয়েও টিকিট পাইনি। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাড়ির পথে রওনা দিই।
একই দৃশ্য রাজশাহী-নওগাঁ, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের যাত্রীদের। দীর্ঘসময় ধরে নগরীর ঢাকা বাসস্ট্যান্ড, রেলগেট, গৌরহাঙ্গা, বিন্দুর মোড়, সিটি বাইপাসসহ বিভিন্ন কাউন্টারে ঘরমুখোদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
আন্তজেলা বাস কাউন্টারগুলোর দায়িত্বশীলরা জানায়, রাজশাহী থেকে ঈদ করতে যারা বাড়ি ফিরবেন তারা আগেই টিকিট নিয়ে রেখেছেন। আর যারা বাইরে থেকে আসছেন তারা দীর্ঘ অপেক্ষা করে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
ন্যাশনাল ট্রাভেলসের কাউন্টার মাস্টার পারভেজ শেখ বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাত ১২টার গাড়ি রাজশাহীতে পৌঁছেছে দুপুর ১২টায়। সকাল ৬টার গাড়ি বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ পৌঁছেছে মাঝপথে। সেগুলো রাতে পৌঁছবে। সেই হিসাবে সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী বাসগুলোর লাগবে ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা। রাতে ১২ ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। সকাল থেকে তা আরও বেড়েছে। যানজটের কারণে ৬ ঘণ্টার যাত্রায় এত সময় লাগছে।
রেলেও রয়েছে শিডিউল বিপর্যয়। তবে বাসের চেয়ে কিছুটা কম। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা থেকে এক ঘণ্টা বিলম্বে দুপুর পৌনে ২টায় রাজশাহীতে পৌঁছেছে ধুমকেতু এক্সপ্রেস। তবে নির্ধারিত সময় সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস।
আর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নির্ধারিত সময় বিকেল ৪টার ১০ মিনিট পর ছেড়ে গেছে। এক ঘণ্টা বিলম্বে দুপুর ১টা ১৬ মিনিটে চিলাহাটি থেকে রাজশাহী এসে পৌঁছে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস। খুলনা থেকে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস পৌঁছেছে আধাঘণ্টা বিলম্বে।
ধুমকেতু এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে এসে নেমেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরের বাসিন্দা সোহরাব আলী। পরিবার নিয়ে ঈদ করতে যাচ্ছেন গ্রামে।
তিনি জানান, বাসে গন্তব্যে পৌঁছাতে ভোগান্তির সীমা থাকবে না। তাই বসে আছেন ট্রেনের অপেক্ষায়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কমিউটার ট্রেনের টিকিট কেটেছেন তিনি। ৩টার ট্রেন ছেড়েছে ৪টায়। ততক্ষণ পরিবার নিয়ে বসে ছিলেন প্ল্যাটফর্মে। কেবল তিনি নয় অনেকেই ট্রেনের টিকিট কেটে অপেক্ষা করছেন। ঈদে সবাই বাড়ি ফিরছেন, পথে ভোগান্তি থাকা স্বাভাবিক বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মইন উদ্দিন আজাদ বলেন, রাজশাহীতে শিডিউল বিপর্যয় নেই বললেই চলে। বিভিন্ন গন্তব্যের এক্সপ্রেস, কমিউটার, মেইল এবং লোকাল ট্রেন প্রায় সময় মতো ছেড়ে গেছে। কিছুটা বিলম্বে পৌঁছায় ছেড়ে যেতেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে মাত্র।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ জাগোনিউজ২৪