পুঁজি সংকটে রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা। এবার কোরবানি ঈদে পশুর চামড়া কিনতে গিয়ে বেগ পেতে হবে তাদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের ১৫ কোটি টাকা পড়ে আছে। গত বছরের চামড়া বিক্রির এই টাকা ব্যবসায়ীরা এখনও হাতে পাননি। ফলে এবার পড়েছেন চরম পুঁজি সংকটে। গত দুই যুগ ধরেই খুঁড়িয়ে চলছে এখানকার চামড়া ব্যবসা।
তবে বিসিক বলছে, রাজশাহীতে চামড়া শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের চামড়া শিল্পের সুদিন ফিরবে।
রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, মূলত কাঁচা চামড়া কিনে কিছুদিন সংরক্ষণের পর সেগুলো তারা ট্যানারিগুলোতে সরবরাহ করেন। চামড়া প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এভাবেই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন বংশ পরম্পরায়।
তবে আগে ট্যানারি মালিকরা সময়মতো চামড়ার মূল্য পরিশোধ করতেন। কিন্তু এক যুগের বেশি সময় ধরে এক মৌসুমের চামড়ার দাম পরের মৌসুমেও পাওয়া যায় না। বেশি লাভের আশায় চামড়া বিক্রি করে অনেকেই বকেয়া তুলতে পারেননি। পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে ব্যবসায়ীরা। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ ব্যবসা ছেড়েছেন।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় চামড়া ব্যবসায়ীদের একজন হাজি ফহিমুদ্দিন। তিন ছেলেকে নিয়ে চামড়া ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন তিনি। পুঁজি হারিয়ে দুই যুগ আগে ছেড়ে দেন ব্যবসা।
বড় ছেলে রফিকুল ইসলাম খুলে বসেন ইজিবাইক গ্যারেজ। মেজ ছেলে নূরুল ইসলাম মুদিখানা ও কাপড়ের ব্যবসায় নাম লিখান।
ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের বর্তমান কমিটির কোষাধ্যক্ষ। তিনিই কোনোমতে ধরে রেখেছিলেন চামড়া ব্যবসা। টানা মন্দায় তিনিও শেষ পর্যন্ত ব্যবসা গুটিয়ে নেন। এখন ছাত্রাবাস গড়ে সেটির দেখাশোনা করেন।
আনোয়ার হোসেনের ভাষ্য, চোখের সামনেই চামড়া ব্যবসায়ীদের উত্থান-পতন দেখলেন। কেউ কেউ পুঁজি হারিয়ে, ব্যাংকের দেনার দায়ে পথে বসেছেন। কেউ কেউ ব্যবসা ছেড়ে নেমেছেন অন্য পেশায়। রাজশাহীর চামড়া ব্যবসার এ সংকট দুই যুগ আগেও ছিল না।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ। তিনি বলেন, রাজশাহী জেলাজুড়ে চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছেন ১২২ জন। দিন দিন কমছে ব্যবসায়ীর সংখ্যা। এ ক’জন ব্যবসায়ী ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রির ১৫ কোটি টাকা পাবেন।
গত বছর চামড়া নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেনি ট্যানারিগুলো। আগামী সোমবারের মধ্যে কিছু টাকা দেয়ার কথা। ওই টাকা হাতে না পেলে এবার চামড়া কেনা নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হবে তদের। তবে স্থানীয় পর্যায়ে চামড়া শিল্প গড়ে উঠলে এখানকার চামড়া ব্যবসার সংকট কেটে যাবে।
সভাপতি আরও বলেন, গত রোজার ঈদের পরও গরুর চামড়া ১২শ থেকে দেড় হাজার টাকা ছিল। এখন তা নেমে এসেছে অর্ধেকে। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে তাতে গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৬শ টাকায় এবং খাসির চামড়া ৫০ টাকায় কেনা যাবে। তাছাড়া লবণের বাজার এখন পর্যন্ত স্থীতিশীল।
রাজশাহীর কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় এখানে চামড়ার দাম অর্ধেক। এই সুযোগে চামড়া পার হয়ে যেতে পারে ভারতে। তবে এমন আশঙ্কা নেই জানিয়ে সভাপতি বলেন, রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের ছাড়পত্র নিয়ে চামড়া পরিবহন হয়। তাছাড়া প্রশাসন পাচার রোধে কঠোর অবস্থানে।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিসিকের আঞ্চলিক পরিচালক প্রকৌশলী আজাহারুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীতে ১০০ একর এলাকা নিয়ে আধুনিক চামড়া শিল্পনগরী গড়ে উঠছে। গত ১২ আগস্ট এ সংক্রান্ত একটি কমিটি সম্ভাব্য তিনটি স্থান পরিদর্শন করেছে।
এর মধ্যে নগরীর উপকণ্ঠ বেলপুকুর বাইপাস এলাকাটি রয়েছে পছন্দের শীর্ষে। ২০২০ সালের মধ্যে এ শিল্পনগরী যাত্রা শুরু করবে। চালু হলে দেশের দ্বিতীয় চামড়া শিল্পনগরী হবে এটি। এতে পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের চামড়া শিল্পের দৃশ্যপট।
জানা গেছে, কেবল রাজশাহীতেই প্রতি বছর কোরবানি হয় প্রায় ৪০ হাজার গরু-মহিষ, ২০ হাজার ভেড়া এবং এক লাখ ছাগল। স্থানীয় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে আড়তে পৌঁছে দেন। আড়তগুলো এসব চামড়া লবন দিয়ে সংরক্ষণের ১৫ থেকে এক মাসের মধ্যে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ জাগোনিউজ২৪