প্রকৃতিতে আগমন ঘটেছে বসন্তের। বসন্ত এসেছে বলেই মুকুল ধরেছে আম্রকাননে। বসন্ত এসেছে বলেই ফুটেছ হাজারো ফুল। বইতে শুরু করেছে দখিনা হাওয়া। কোকিলের কুহুতানে মাতাল হয়ে উঠেছে বসন্তরাণী।
হৃদয়ে ফুটেছে ভালবাসার স্পন্দন। বাংলার রূপময় নিসর্গ ছুঁয়েছে হলুদিয়া রঙ। কারণ আজ পহেলা ফাল্গুন। সবুজ বাংলার ষড়ঋতুর দেশের শেষ ঋতুর প্রথম দিন। দুয়ারে আগুন রাঙা বসন্ত দেখে তাই আজ সবার মন যেন ছুটে যেতে চাইছে অরণ্যে; যেখানে কাননে কাননে উৎসবের রঙের কোলাহলে মেতে উঠেছে চারদিক।
বাসন্তী উৎসবে আজ মেতে উঠেছে পদ্মাপাড়ের রাজশাহী। বাঁধ ভাঙা আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় নানা আয়োজনে সবাই ঋতুরাজকে সাড়ম্বরে বরণ করে নিচ্ছে।
বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পহেলা ফাল্গুন সকাল থেকেই বসন্ত বরণ উৎসবে মুখোরিত হয়ে উঠেছে পদ্মার তীরে গড়ে ওঠা উত্তরের এই প্রাচীন নগর। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ ভিন্ন আবহে প্রাণ উজাড় করে যোগ দিয়েছেন বসন্ত বরণ উৎসবে।
বাসন্তী রঙের বর্ণিল শোভাযাত্রা, কবিতাপাঠ, নাচ আর গানের ছন্দে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে চলছে ফাল্গুনী উৎসব। স্বপ্নজয়ী তারুণ্যের ঢেউ লেগেছে যেনে সব আয়োজনেই। বরাবরের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস; বিশেষ করে চারুকলা এবারও রয়েছে বসন্তের মূল আকর্ষণ।
প্রতি বছরের মতো এবারও সেখানে বেজে উঠেছে নতুন প্রাণের স্পন্দন। এছাড়া রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসেও লেগেছে বাসন্তী উৎসবের ঢেউ।
শীতের শুকনো পাতার মড় মড় ধ্বনি ভেঙে উৎসাহ উদ্দীপনায় শিক্ষক-শিক্ষিকা, বন্ধু আর সহপাঠীদের নিয়ে সবাই আনন্দে মেতে উঠেছেন প্রাণের ক্যাম্পাসে।
পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী কলেজ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মুহা. হবিবুর রহমান শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। এতে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
বাদ্য-বাজনার ছন্দে ছাত্রীদের হলুদ শাড়ি আর ছাত্রদের হলদে পাঞ্জাবি বরণে বাসন্তী শোভাযাত্রাটি পুরো শহরে যেন জানান দেয় আজ বসন্তের দিন। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি মহানগরীর বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলেজে চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে, বসন্ত বরণ উপলক্ষে মহানগরীর বিভিন্ন বিনোদন স্পটেও তরুণ-তরণী যুবক-যুবতীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের ঢল নেমেছে। মেয়েদের পরনে হলুদ রঙের শাড়ি, খোপায় গাঁদা ফুল, আবার কারও কারও খোপায় রঙিন ফুলের রিং।
ছেলেদের পরনে রয়েছে হলুদ অথবা সফেদ রঙের পাঞ্জাবি। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে গিয়ে মোবাইল ফোন দিয়েই অনেককে ফটোসেশন সারতে দেখা গেছে। বন্ধুদের নিয়ে জটলা করে মোবাইলের ক্যামেরায় সেলফি তুলেও তা স্মৃতিবন্দি করছেন অনেক তরুণ-তরুণী।
সকাল থেকে রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, জিয়া পার্ক, বড়কুঠি পদ্মাপাড়ে, টি-বাঁধ, ভদ্রার শহীদ মনসুর রহমান পার্ক, পদ্মা গার্ডেনসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। কেউ বন্ধুদের, কেউবা আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন বাহনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। বিনোদন কেন্দ্রগুলো তাই রঙিন হয়ে উঠেছে।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু কলেজেও বসন্ত বরণ ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের। সভাপতিত্ব করেন কলেজ অধ্যক্ষ নূরুল ইসলাম। আবৃত্তি পরিষদ মহানগরীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করবে বিকেল সাড়ে ৪টায়।
বিকেল সাড়ে ৫টায় শাহ মখদুম কলেজে আবৃত্তি পরিষদের রয়েছে আলোচনা সভা। এছাড়াও অনুষ্ঠিত হবে কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য ও গান।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪