রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এর উপর আগামী তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার মতো কোনো সুখবর নেই।
গত কয়েকদিনের আগুনমুখো আবহাওয়ায় নাকাল হয়ে পড়েছে রাজশাহীর জনজীবন। দুঃসহ গরমে হাঁস-ফাঁস করছে প্রাণ। ট্যাপ দিয়ে বের হচ্ছে গরম পানি। সূর্যকিরণে শরীরের চামড়া পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি মিলছে না। দক্ষিণের মরা পদ্মা থেকে বাতাসে ভেসে আসা ধূলিকণাগুলো যেন শরীরে ছ্যাঁকা দিচ্ছে! লু হাওয়ায় হাঁপিয়ে উঠেছে পশু-পাখিরাও। তাপমাত্রার পারদ কেবল উঠছেই।
আবহাওয়া অফিস বলছে, রোববার (২৮ এপ্রিল) রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) দুপুর ৩টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। যা ছিলো ওইদিন দেশের সর্বোচ্চ।
এদিকে রোববার সকাল থেকে মহানগরীর অধিকাংশ এলাকাতেই বিদ্যুৎবিভ্রাট দেখা দিয়েছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঘরের ফ্যান-বাতিগুলো। ফলে যারপরনাই ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করে রাজশাহীতে বাদ যোহর বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে মহানগরীর বিভিন্ন মসজিদে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ জানায়, তীব্র গরমের কারণে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি, হৃদরোগ ও স্ট্রোকসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ইনডোরে চিকিৎসা নিতে আসছেন। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের সংখ্যাও বাড়ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, হঠাৎ করে আবারও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘরে ঘরে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এ সময় বৃদ্ধ ও শিশুদের রোদে না বের হয়ে ঠাণ্ডা পরিবেশের মধ্যে থাকার জন্য বলেন। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি, ডাব ও দেশি ফলমূল বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক।
রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম জানান, রোববার বেলা ৩টায় মহানগরীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ এবং বিকেল ৩টায় ৫৫ শতাংশ। এটি চলতি মৌসুমের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
তিনি বলেন, তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকলে তাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। এছাড়া তাপমাত্রা ৪০ এর উপরে উঠলেই তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।
রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে গত কয়েকদিন মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। আজ তা মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদফতরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ অবস্থান করছে। এতে দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
কিন্তু আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এর আগে ২০০৫ সালের ১২ জুন রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের ২১ মে উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল উঠেছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর আর সর্বোচ্চ এই তাপমাত্রা অতিক্রম করেনি বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে।
এছাড়া ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে স্মারণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত আর ওই রেকর্ড ভাঙেনি।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪