দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে পদ্মাপাড়ের বিভাগীয় শহর রাজশাহী। অগ্নিদহনে যেন বিবর্ণ হয়ে উঠেছে রাজশাহীর সবুজ প্রকৃতি! রুক্ষ আবহাওয়ায় গাছের পাতাও যেন নড়ছে না। টানা দাবদাহে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের।
এরই মধ্যে সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাজশাহীতে দিনের তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে রাজশাহীতে এবার ৪৭ বছরের রেকর্ড ভেঙে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে ২০০৫ সালের ১২ জুন রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০১৪ সালের ২১ মে উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল উঠেছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পরে আর এই তাপমাত্রা অতিক্রম করেনি উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে৷
এছাড়া ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড তাপমাত্রা। এরপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত ওই রেকর্ড ভাঙেনি।
বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে রাজশাহীতে। অব্যাহত দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণীকূল। সারাদিন কাঠফাটা রোদ আর প্রচণ্ড গরমে স্থবিরতা নেমে এসেছে কর্মজীবনেও। বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবখানেই যেন গরম আর গরম। একটু স্বস্তি মিলছে না কোথাও। দিনের বেলায় দূরে থাক রাতেও গাছের পাতা নড়ছে না। আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সব জিনিসপত্রই তেঁতে উঠেছে। ট্যাপ দিয়ে বের হচ্ছে যেন ফুটন্ত পানি।
বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় মাথার উপরে ফ্যানটাও দিচ্ছে গরম বাতাস। কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীর আবহাওয়ার আর তেমন কোনো হেরফের হচ্ছে না। প্রতিদিনই ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি অথবা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে রাজশাহীতে। এ অবস্থায় প্রশান্তির বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে এ বরেন্দ্রঞ্চালে।
এদিকে, তীব্র দাবদাহের কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে হাসপাতালের তিনটি শিশু ওয়ার্ডে যেন ধাপ ফেলার জায়গা নেই। বেড, ফ্লোর সবখানেই গরমজনিত কারণে রোগী আর রোগী। চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, তাপমাত্রা কেবলই বাড়ছে। এতে ঘরে ঘরে ডায়রিয়া, হিটস্ট্রোক, হিস্টিরিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে এ তীব্র গরমে।
এসময় বয়ঃবৃদ্ধ ও শিশুদের রোদে না বের হয়ে ঠাণ্ডা পরিবেশের মধ্যে থাকার জন্য বলেন। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি, ডাব ও দেশি ফলমূল বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক শহীদুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কখনোই ২৫ ডিগ্রির নিচে নামেনি। রোববার দুপুরে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপামাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সোমবার বিকেল সোয়া ৩টায় রাজশাহীতে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটিই ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
শহীদুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীতে মৃদু দাবদাহ বিরাজ করছিল। পরে এটি মাঝারিতে রূপ নেয়। আজ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠায় তীব্র তাপদাহে রূপ নিলো রাজশাহীর আবহাওয়া। এ কারণে গরমের পরিমাণ অনেকটা বেশি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দু’এক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে গত কয়েকদিন মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আজ থেকে তা আরও তীব্রতায় রূপ নিলো। এ অবস্থায় একটানা ভারী বৃষ্টিপাত ছাড়া আবহাওয়া শীতলতা বা স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানান এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: আবহাওয়া অধিদফতরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের কয়েকটি স্থানের উপর দিয়ে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি ও বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া দেশের অন্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে।
এসময় আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। দিনের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহ মৃদু থেকে মাঝারিতে রূপ নিয়েছে। তা তীব্র হতে পারে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ঢাকা ও রাঙামাটি অঞ্চলে চলতে পারে। এতে দিন ও রাতের তাপমাত্রা দেশের প্রায় সব স্থানেই অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪