ঈদ সামনে রেখে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কালুহাটির জুতা কারখানাগুলোতে চলছে চরম ব্যস্ততা। কথা বলার ফুরসত পাচ্ছে না এখানকার কারিগরসহ মালিকরা। ঈদকেন্দ্রিক উত্তরাঞ্চলের জুতা-স্যান্ডেলের চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পণ্য তৈরি করছেন তারা। সম্প্রতি কালুহাটি গ্রামে গিয়ে বেশ কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখা গেল এমনই চিত্র।
স্থানীয়রা জানান, বছরের অন্যান্য সময়ে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে প্রতিটি কারখানা এখন কর্মচঞ্চল। দিন-রাত সমান তালে চলছে তাদের কার্যক্রম। অন্য বছর কালুহাটির জুতা-স্যান্ডেলের ব্যবসা আশানুরূপ না হলেও গত কয়েক বছর ব্যাপক চাহিদার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কালুহাটি গ্রামে ৫০টি জুতা-স্যান্ডেল কারখানা রয়েছে। এখানকার তৈরি পণ্য উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ জেলাতে যাচ্ছে। এতে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানালেন কারখানার মালিকরা।
স্থানীয় জুতা-স্যান্ডেল কারখানা মালিকদের নিয়ে গঠিত কমিটির সভাপতি আবদুুল মান্নান যুগান্তরকে জানান, কালুহাটি গ্রামে গড়ে ওঠা ৫০টি কারখানায় তৈরিকৃত জুতা-স্যান্ডেলের সুনাম রয়েছে দেশজুড়েই। তবে বেশির ভাগ জুতা-স্যান্ডেল যাচ্ছে, উত্তরাঞ্চলের কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, নওগা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগা, লালমনিরহাটসহ আশপাশের প্রায় জেলাতেই।
তিনি জানান, এই গ্রামে প্রায় ৪০ বছর ধরে জুতা-স্যান্ডেল তৈরি হয়ে এলেও সরকারিভাবে ইতিপূর্বেও কেউ কখনও এগিয়ে আসেনি। ফলে আর্থিক সংকটের কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হতে বসেছিল। কিন্তু হঠাত করেই ২০১৪ সালে চারঘাট-বাঘার সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এই গ্রামের শিল্পের ওপর সুদৃষ্টি দেন। এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে নেন নানা ধরণের উদ্যোগ। তারই প্রচেষ্টায় ওই বছরই স্বল্প সুদে ঢাকা ব্যাংক থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন কারখানা মালিকদের। এরপর গত বছর ঢাকা ব্যাংক থেকে এসইমি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আরো ৫ কোটি টাকা ঋনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। ঋণের সেই টাকা হাতে পাওয়ায় কারখানা মালিকরা আবারো ঘুরে দাড়িয়েছে। ফলে বর্তমানে রেকর্ড পরিমাণ পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ঢাকার মার্কেটে কালুহাটি এলাকার জুতা-সেন্ডেল প্রবেশ করাতে দরকার আরো অর্থের। যা সংগ্রহ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয় বলে জানালেন তিনি।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে কালুহাটি গ্রামে যে পরিমাণ জুতা-স্যান্ডেল তৈরি হচ্ছে তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে মন্ত্রীর সহযোগিতার কারণে।
মান্নান বলেন, আগে কয়েকটি কোয়ালিটির পণ্য তৈরি হলেও বর্তমানে ছেলে ও মেয়েদের আধুনিক ডিজাইনের জুতা-স্যান্ডেল তৈরি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন নামি-দামি কোম্পানির স্যান্ডেলের তুলনায় কালুহাটি গ্রামে তৈরিকৃত জুতার মান কোনো অংশেই কম নয়। ভালো মান ও ডিজাইনের জুতা-স্যান্ডেল তৈরির কারণে বিভিন্ন মোকাম থেকেও অর্ডার আসছে ব্যাপকভাবে।
এখানকার উদ্যোক্তাদের আশা ঢাকার মার্কেটে কালুহাটির জুতা-স্যান্ডেল প্রবেশ করাতে পারলে এই এলাকার পণ্যের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কনিকা সুজ কারখানার মালিক সোহেল রানা জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর জুতা-স্যান্ডেলের চাহিদা যেমন বেড়েছে তেমনি সংশ্লিষ্ট উপকরণের দামও বেড়েছে কয়েক গুণ।
তিনি জানান, প্রতি পিস সোলের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, পেস্টিং আঠা অন্য বছরের চেয়ে এ বছর বেড়েছে গ্যালনপ্রতি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এভাবে প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়েছে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ Daily Sunshine