করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে রাজশাহীতে চলছে অঘোষিত লকডাউন। বন্ধ হয়ে গেছে খেটে-খাওয়া মানুষের আয়-রোজগার। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় ফোন কলে সরাসরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনেছেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন। এ সময় তিনি প্রত্যেকের সমস্যার সমাধানের আশ^াস দিয়েছেন।
শনিবার রাতে রাজশাহীর কমিউনিটি রেডিও পদ্মায় ‘বাঁচতে হলে জানতে হবে’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। খুব আন্তরিকতার সঙ্গেই তিনি সবার কথা শোনেন। কথা চলাকালেই তিনি সবার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন। লিখে নেন তাদের নামও। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সমস্যার সমাধানের আশ^াস দেন তিনি।
নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা থেকে এক ব্যক্তি ফোন করে বলেন, তার বাড়ি গাইবান্ধা। রাজশাহী শহরে তিনি ভাঙাড়ি কুড়ান। তার স্ত্রী অন্যের বাসায় কাজ করেন। এভাবে তাদের সংসার চলে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে তাদের স্বামী-স্ত্রীর কাজ বন্ধ। তার সরকারের কোনো খাদ্যসহায়তাও পাননি। কোথাও ত্রাণের জন্য গেলে তাকে বলা হচ্ছে তিনি এখানকার ভোটার নন, তাই সহায়তা পাবেন না। সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা তার নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে নিয়ে দ্রুত খাদ্যসহায়তা পাঠানোর ব্যবস্থা করার আশ^াস দেন।
নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে একজন রিকশাচালক ফোন করেন। তিনিও তার দুঃখ-দুর্দশার কথা জানান। তাকেও সহায়তার আশ^াস দেন বাদশা। নগরীর পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ফোন করেন একজন ছাত্রী। তিনি জানান, তার বাড়ি নাটোর। রাজশাহীতে থেকে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খরচ জোগাতে টিউশনি করান। কিন্তু এখন তার টিউশনি বন্ধ। লকডাউনে বাড়িও যেতে পারছেন না। পড়েছেন বেকায়দায়। সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা তারও ফোন নম্বর সংগ্রহ করে সহায়তার আশ^াস দেন।
এভাবে অনেকের সঙ্গে কথা বলে সবার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন বাদশা। যেসব ফোন এসেছিল তার প্রায় সসবগুলোই খাদ্যসহায়তার জন্য। শুধু নিজের নির্বাচনি এলাকা নয়, উপজেলা থেকেও ফোন আসে বাদশার কাছে। পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর এলাকা থেকে এক ব্যক্তি ফোন করে তাদের অসহায়ত্বের কথা জানান। তখন ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসনকে জানাবেন। জেলা প্রশাসন পুঠিয়া উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ওই গ্রামে ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।
নিজের এলাকার উন্নয়নের জন্যও ফোন করেন কেউ কেউ। শুধু নিজের নির্বাচনি এলাকা নয়, শহরের বাইরে থেকেও ফোন করেন কেউ কেউ। পবা উপজেলার হড়গ্রাম ইউনিয়নের ঠাকুরমারা গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি ফোন করে বলেন, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা শুধু নিজের নির্বাচনি এলাকা নয়, গোটা বাংলাদেশের জন্যই রাজনীতি করেন। সে জন্যই তিনি ফোন করেছেন। সংসদ সদস্য বাদশা তাকেও হতাশ করেননি। বলেছেন, তার দাবি পূরণে তিনি দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালকের এক প্রশ্নের উত্তরে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, রাজশাহীকে করোনামুক্ত রাখতে বিভাগের এক জেলার সঙ্গে আরেক জেলার যোগাযোগ বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বিভাগীয় এই শহরে বাইরের জেলার অনেকেই আটকা পড়েছেন। তারাও এখন বেকায়দায় রয়েছেন। কিন্তু এলাকার ভোটার নয় বলে তার মুখে খাবার উঠবে না এটা হতে পারে না। দুর্যোগকালীন এই মূহুর্তে প্রত্যেকের খাদ্যের ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব। সেভাবেই আমরা কাজ করছি।
করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ, প্রশাসন, চিকিৎসক, সিটি করপোরেশন এবং সংসদ সদস্য হিসেবে আমি-প্রত্যেকেই আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি। সে জন্য ঢাকার বাইরে আমরা রাজশাহীতে করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন করতে পেরেছি। আরেকটা ল্যাব স্থাপনের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আমরা যত বেশি পরীক্ষা করতে পারব, তত বেশি মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারব। রাজশাহীকে করোনাভাইরাস মুক্ত রাখতে আমরা সবাই মিলে কাজ করছি। এখন জনগণেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা যেন অপ্রয়োজনে কোনোভাবেই ঘরের বাইরে বের না হন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন