করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর থেকেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করে দিয়েছেন রাজশাহীর চিকিৎসকরা। ফলে বন্ধ রয়েছে এখানকার বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
এতে জরুরি সেবা নিতে রোগীরা যাচ্ছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। তবে সেখানেও করোনা সংক্রমণ আতঙ্ক। ফলে সাধারণ অসুখ নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন না অনেকেই। কেউ কেউ রোগ নিরাময়ে বেছে নিচ্ছেন হোমিও চিকিৎসা। ফলে আগের চেয়ে নগরীর হোমিও চিকিৎসকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিয়েই চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তারা।
হোমিও চিকিৎসকদের সংগঠন-স্বাধীনতা হোমিও প্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, কেবল রাজশাহী নগরীতেই হোমিও চিকিৎসক রয়েছেন দুই শতাধিক। এদের অর্ধেকের বেশি এখন রোগী দেখছেন। সবমিলিয়ে গড়ে দিনে হাজারখানেক রোগী দেখছেন হোমিও চিকিৎসকরা। আগে হোমিও চিকিৎসকরা মোট রোগীর ৪৫ শতাংশ দেখতেন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশের উপরে।
ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতেও সাত সকালে রোগী দেখা শুরু করেন নগরীর বাটারমোড়ের রাজশাহী হোমিও সিন্ডিকেটের চিকিৎসক ডা. মাহমুদ হোসেন। করোনার কারণে এখন রোগীর চাপ বেশি। প্রতিদিনই ৮০ থেকে ১০০ জন রোগী আসছেন। এদের মধ্যে নতুন রোগীই বেশি। যারা অধিকাংশই জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে আসছেন। এটি করোনার প্রাথমিক উপসর্গ হলেও হোমিওতে লক্ষণ দেখে ওষুধ দিলেই সেরে যাচ্ছে।
একই ভাষ্য নগরীর মালোপাড়া এলাকার মক্কা হোমিও ফার্মেসির চিকিৎসক ডা. হুমায়ুন কবীর মিঠুর। তিনি বলেন, বরাবরই আমি ক্রণিক রোগী বেশি দেখি। কিন্তু করোনার কারণে এখন জ্বর-সর্দি নিয়ে আসছেন রোগীরা। লক্ষণ দেখে ওষুধ দিচ্ছি। উপসমও হচ্ছে।
নতুন রোগী বাড়লেও করোনা আতঙ্কে পুরনো রোগী দশভাগের এক ভাগে নেমেছে বলে জানিয়েছেন একই এলাকার সামাদিয়া হোমিও ফার্মেসির চিকিৎসক ডা. গোলাম সারোয়ার।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে জটিল-কঠিন রোগীরা তাদের কাছে আসতেও সাহস পাচ্ছেন না। অনেকেই ফোন করছেন, ওষুধ চাইছেন। তারা সাধ্যমতো চিকিৎসা দিচ্ছেন। জ্বর-সর্দি নিয়ে যারা আসছেন তারা অধিকাংশই নতুন। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হোমিওতেই ভালো হচ্ছেন লোকজন।
চলমান লকডাউনে বাইরে থেকে রোগীরা আসতে পারছে না বলে জানিয়েছেন মালোপাড়া এলাকার বিসমিল্লাহ হোমিও ফার্মেসির চিকিৎসক ডা. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, এখন যেসব রোগী আসছেন, তারা নগরীর বাসিন্দা। বাইরে থেকে রোগীরা আসতে পারছেন না। তবুও এই সংখ্যা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। জ্বর-সর্দি ও কাশিসহ মৌসুমী অসুখ নিয়ে আসছেন বেশিরভাগ রোগী। এদের বড় অংশ আবার শিশু।
চিকিৎসায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার রোকিয়া হোমিও হলের চিকিৎসক ডা. আবদুল মতিন।
তিনি বলেন, করোনা থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষায় আমরা সরকারিভাবে সরবরাহকৃত পিপিই পড়ছি। রোগীদেরও চেম্বারে প্রবেশের আগে হাত ধোয়ানো হচ্ছে। বসানোর ক্ষেত্রে সামাজিদ দূরত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে। ঝুঁকি এড়াতে সবখানেই তারা বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করছেন।
জানতে চাইলে যে কোনো পরিস্থিতিতে নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবায় কাজ করে যাবার কথা জানান, রাজশাহী জেলা স্বাধীনতা হোমিও প্যাথিক চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল খালেক বিশ্বাস।
জাতীয় করোনা প্রতিরোধ কমিটির এ সদস্য হোমিও চিকিৎসকদের করোনা চিকিৎসা ঘুরে ঘুরে দেখভাল করছেন । প্রত্যেকের হাতে হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন পিপিই।
তিনি জানান, দেশের এই ক্রান্তিকালে হোমিও চিকিৎসকরা মানুষের পাশে রয়েছেন। তারা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। বিভিন্ন দেশে হোমিও চিকিৎসা চলছে জোরেসোরেই। দিনে দিনে হোমিওর প্রতি মানুষের
আস্থাও বাড়ছে।
এ চিকিৎসক নেতা আরও বলেন, এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রি সরবরাহ প্রক্রিয়া চলমান। কিছু ঘাটতিও আছে। এ ঘাটতি পূরণে হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে
নগরীকে করোনামুক্ত রাখতে নগর কর্তৃপক্ষের সহায়তাও কামনা করেন।
বিভাগীয় পরিচালকের দপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে এসেছেন ৮৪০ জন। এছাড়া কোয়ারেন্টাইন শেষ করেছেন ৫০৭ জন। ১০ মার্চ হতে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব মিলিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ২২ হাজার ৩৫২ জন। এরই মধ্যে কোয়ারেন্টাইন শেষ করেছেন ১৩ হাজার ৫৮৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৫ জনকে। এছাড়া আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২৫ জন। এ সময় করোনা ধরা পড়েছে সাতজনের। আর করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মাত্র একজন।
অন্যদিকে, ১০ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয় ৩০৪ জনকে। এদের ১০২ কোয়ারেন্টাইন শেষ করেছেন। ওই সময়ের মধ্যে আসোলেশনে নেয়া হয় ১৮১ জনকে। এদের ১৩১ জন ছাড়া পেয়েছেন।
এ পর্যন্ত বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০৩ জনের। এদের মধ্যে ৩৪ জনই চিকিৎসাধীন হাসপাতালে। সুস্থ হয়েছেন মাত্র দুজন। গত ২৬ এপ্রিল বিভাগের একমাত্র করোনা রোগী মারা যান রাজশাহীর আইডি হাসপাতালে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ জাগোনিউজ২৪