রাজশাহীর বিস্তীর্ণ বাগান থেকে এখন ভেসে আসছে পাকা আমের সুমিষ্টি ঘ্রাণ। সেই ঘ্রাণ সুবাস ছড়াতে শুরু করেছে বাজারেও। মধুময় সুবাস ছড়িয়ে আসতে শুরু করেছে চেলার বিভিন্ন বাজারে। রাজশাহী শহরের আড়তেও দেখা মিলেছে পাকা আম। তবে সেই অনুযায়ী এখনো জমেনি কেনাবেচা। এ নিয়ে চিন্তিত আম ব্যবসায়ী ও পাইকাররাও।
রাজশাহীতে মধুমাস জৈষ্ঠ্যের প্রথম দিনেই আম পাড়ার উপর থেকে কেটেছে আইনি জটিলতা। আমের প্রকার ভেদে দিনক্ষন নির্ধারণ করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এদিকে আম পাড়া শুরুর ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও পুরোপুরি বেচাকেনা শুরু হয়নি এখনো। তবে আমচাষি ও ব্যবসায়িরা বলছেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে জমে উঠবে আমের বাজার।
শুক্রবার জেলার সর্ববৃহৎ আমের বাজার বানেশ্বর কাচারি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রকার গুটি জাতীয় আম সীমিত পরিসরে নিয়ে এসেছেন চাষিরা। এরই মধ্যে বাজারে এসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকাররা। তবে কেনাবেচাও চলছে একটু ঢিলেঢালা।
গত ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রানী প্রসাদ ও লক্ষণ ভোগ, ২৮ মে হিমসাগর বা খিরসাপাত আম পাড়া শুরু হয়েছে। এখন রাজশাহীর বাজারে প্রতিমণ গুটি জাতীয় আম প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭শ’ টাকা থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত। আর গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে ১৩শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা দরে। তবে বাজার জমে না ওঠায় রাণী প্রছন্দ, লক্ষণভোগ, খিরসাপাত আম পাড়া শুরু করেনি চাষিরা।
আমপাড়ার মৌসুম শুরু থেকে রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ বাজার, বেলপুকুর, শাহবাজপুর, শিবপুরহাট এলাকা গুলোতেও অস্থায়ী ভাবে গড়ে উঠেছে আমের বাজার। স্থানীয় আম আড়ৎদার রফিকুল ইসলাম বলেন, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাগমারা, বাঘা, চারঘাট, নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাগান মালিকরা আম বিক্রি করতে আসেন বানেশ্বর হাটে।
তবে অনেক চাষি দর দেখতে স্বল্প পরিসরে আম নিয়ে আসছেন বাজারে। যার কারণে এ বছর এখনো পুরোপুরি আমের বাজার জমে উঠেনি। পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান বলেন, আম আড়ৎ গুলোতে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক মনিটরিং করা হচ্ছে। কোথাও কোনো অনিয়মের খবর পেলে তৎক্ষনিক আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া কোন আম কখন পাড়তে হবে তার একটি দিক নির্দেশনা ক্রেতা-বিক্রেতাদের দেয়া হয়েছে।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জেলা প্রশাসক এক সভায় স্থানীয় বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের কয়েকটি ধাপে আম ক্রয়-বিক্রয়ের নিদের্শনা দেন। সে নির্দেশনা মোতাবেক গেল ১৫ মে থেকে আটি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। গোপালভোগ ২০ মে, রানী পছন্দ ও লক্ষণ ভোগ ২৫ মে, হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৮ মে শুরু হয়েছে। তবে ল্যাংড়া আসবে আগামী ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন এবং আশ্বিনা আমপাড়া শুরু হবে ১০ জুলাই থেকে।
ইতিমধ্যে ঘূনীঘর আম্পান ও কালবৈশাখীতে এবার বিপুল পরিমান আম ঝরে গেছে গাছ থেকেভ কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁয় যে পরিমাণ আম ঝরে পড়েছে তার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় তিনশো কোটি টাকা। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও যে পরিমাণ আম বাগানগুলোতে আছে তা সঠিকভাবে পরিচর্যা করে বাজারজাত করলে ভালো দাম পাবে বাগান মালিকরা।
রাজশাহী কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের বাগানগুলোতে এবার আমের মুকুল কিছুটা কম এসেছিল। সে অনুযায়ী আমের উৎপাদনও কম হয়েছে। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে বহু গাছ উপড়ে পড়ে ডালপালা ভেঙে গেছে।
সর্বশেষ আঘাত হেনেছে সুপার সাইক্লোন আম্পান। ওই সময় আম্পানের তাণ্ডবে আমের বিরাট একটা অংশ ঝরে যায়। এই অবস্থায় আম বাগানের মালিকরা বলছেন, তারা এমনিতেই করোনাভাইরাসের কারণে আম বাজারজাতকরণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তার ওপর একের পর এক ঝড়ের তাণ্ডব তাদের চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন জানান, ঝড়ে ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। তারপরেও পরিবহন সংকট কেটে গেলে আমের বাজার জমে উঠবে। লাভবান হবে ব্যবসায়ী ও চাষিরা।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন