প্রাণঘাতী ভাইরাস কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী বিভাগে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনারোগীর সংখ্যা। কিন্তু সংখ্যা অনুপাতে এখনো জেলাভিত্তিক রেড জোনে পড়েনি রাজশাহী। তবে এরই মধ্যে পড়েছে ইয়েলো জোনে।
দেশের করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন বা লাল, হলুদ ও সবুজ- এই তিন ভাগে ভাগ করে জোনভিত্তিক লকডাউন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এরই মধ্যে কোথায় কী ধরনের সতর্কতা থাকবে তার রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও।
তবে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাইড লাইনে থাকা সংখ্যা অতিক্রান্ত না হওয়ায় এখন ইয়েলো জোনে পড়েছে বিভাগীয় শহর রাজশাহী। তাই রেড জোনে না আসা পর্যন্ত আপাতত লক ডাউনের আওতায় আসছে না রাজশাহী সিটি করপোরেশনসহ আশপাশের অন্য কোনো উপজেলা এলাকা।
এদিকে রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পাওয়া এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মহানগর ও জেলা আজ পর্যন্ত ১৪৫ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকাতেই রয়েছেন সর্বোচ্চ ৪৯ জন। ২ হাজার ৪০৭.০১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার ৩০টি ওয়ার্ডে ১৩৪টি মহল্লার মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ লাখ। এক লাখে ১০ জনের ওপরে থাকা সংক্রমণের এই হিসাব অনুযায়ী এখনও রেড জোনের নিচে রয়েছে রাজশাহী।
তবে পড়েছে ইয়েলো জোনে। স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কাতামূলক গাইড লাইন অনুযায়ী রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়াও শহরের বাইরে তানোর ও চারঘাট উপজেলায় করোনা সংক্রমণের হারে পড়েছে ইয়েলো জোনের মধ্যে।
অন্যান্য উপজেলা আছে গ্রিন জোনে। সংক্রমণের হারে ১৪ দিন পর পর এই পরিসংখ্যান পরিবর্তন হবে। গত ১৩ জুন উল্লেখিত তিন এলাকাকে ইয়েলো ও অন্যান্য উপজেলাকে গ্রিন জোন চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদনও গেছে।
এ অবস্থায় জেলার কোনো এলাকা রেড জোনে নেই বলে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক।
তিনি বলেন, গাইড লাইন অনুযায়ী রাজশাহীর কোথাও সংক্রমণ নেই। তাই কোনো এলাকা রেড জোনে পড়েনি। লকডাউনও নেই। তবে সংক্রমণ বাড়লে রেড জোনে পড়ার আশঙ্কা থাকছেই।
তাই এই মুহূর্তে রাজশাহীবাসীকে সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করা ছাড়া কোনো উপাই নেই। বাইরে বের হলে মাস্ক পড়ে বের হওয়া, ঘনঘন হাত ধোয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্যও এ সময় সবার প্রতি অনুরোধ জানান, রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য বলেন, প্রতি ১৪ দিন অন্তর অন্তর এই জোনের হিসাব পরিবর্তন করা হবে। যদি কোনো এলাকায় এক লাখে তিন জন করোনা পজিটিভ রোগী থাকে তাহলে সেই এলাকা থাকবে গ্রিন জোনের আওতায়। অর্থাৎ সংক্রমণের হার কম।
কোনো এলাকায় যদি এক লাখে ৩ থেকে ৯ জন করোনা পজিটিভ থাকে তাহলে সেই এলাকা থাকবে ইয়েলো জোনের আওতায়। আর কোনো এলাকায় যদি এক লাখে ১০ জনের ওপরে করোনা পজিটিভ রোগী থাকে সেই এলাকা থাকবে রেড জোনের আওতায়। সেই এলাকা লকডাউনের আওতায় আনা হবে। জেলা প্রশাসক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ‘লকডাউন’ ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করবেন জেলা সিভিল সার্জন।
এর মানে হচ্ছে, করোনার সংক্রমণের হার ও পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাই হবে রেড জোন। মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ হবে ইয়েলো জোন। আর যেসব এলাকায় সংক্রমণ নেই বা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সংক্রমণ হয়েছে সেসব এলাকা থাকবে গ্রিন জোনের আওতায়। যোগ করেন- রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।
এখন পর্যন্ত রাজশাহী জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ করোনারোগী শানাক্ত হয়েছে মোহনপুর উপজেলায়। এই উপজেলায় এখন করোনা পজিটিভ রোগী আছে ১৮ জন। এছাড়া রাজশাহীর তানোর উপজেলায় ১৭, চারঘাটে ১৪, বাঘায় ১১, পুঠিয়ায় ১১, বাগমারায় ১১, পবায় ৮, দুর্গাপুরে ৫ এবং গোদাগাড়ী উপজেলায় ১ জন করোনারোগী আছেন।
রাজশাহীতে ১৫ জুন পর্যন্ত ৯৮ জন করোনারোগী চিকিৎসাধীন আছেন। সুস্থ হয়েছেন ৪৪ জন করোনা পজিটিভ রোগী। এছাড়া করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ