শুক্রবার মানেই ছুটির দিন। আর এই ছুটির দিনে নগরবাসীকে শান্তির নগরী খ্যাত রাজশাহীতে এক চিলতে প্রশান্তি এনে দেয় সুদীর্ঘ পদ্মার পাড়, যা বরাবরই নগরবাসীর মনে বিনোদনের একমাত্র স্থান করে নিয়েছে। শুধু ছুটির দিন শুক্রবারেই নয়, যে কোনো ছুটির দিনেই বিনোদনপ্রেমী মানুষের জনস্রোতে রূপান্তরিত হয় পদ্মার পাড়।
সকাল বেলায় তেমন লোকজন ঘুরতে না আসলেও বিকেলের দিকে পরিবার-পরিজন নিয়ে দলবেঁধে আসতে থাকে মানুষ। জমে ওঠে পদ্মার পাড়। বাদাম, ভুট্টা, চা, চটপটি, ফুচকা, আইসক্রিম ও হরেক রকমের আচারের দোকানগুলোতে দেখা যায় জনসমারোহ। এছাড়া বিভিন্ন হস্তশিল্প, কারুশিল্প ও হরেক রকমের শিশুদের খেলনা নিয়ে চাঞ্চল্যতার দেখা মেলে পদ্মার পাড়ে।
শুক্রবার (২৮ মে) পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে পদ্মার পাড়ে ঘুরতে এসেছেন বিনোদনপ্রেমীরা। নগরীর নবগঙ্গা, হাইটেক পার্কের পাশে অবস্থিত ছোট আই বাঁধ, পুলিশ লাইনের টি-বাঁধ, সিমলা, সীমান্তে নোঙ্গও, লালনশাহ মুক্তমঞ্চ, পদ্মাগার্ডেন, ফুদকিপাড়া, আলুপট্টি, তালাইমারি শহীদ মিনার ও ফুলতলার জাহাজঘাটে মানুষের পদচারণা।
নগরীর সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. মাসুদ রানা। পেশায় তিনি একজন অনলাইন ফ্রিল্যান্সার। ছুটির দিনে পরিবারসহ বিনোদনের আশায় লালন শাহ মুক্তমঞ্চের পদ্মার পাড়ে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘মূলত শুক্রবার ছুটির দিন ছাড়া অন্য কোনো দিনে বাইরে তেমন বের হই না। রাজশাহীতে শুক্রবারের দিনেই মানুষ বেশ ঘুরতে পছন্দ করে। তাই পরিবার নিয়ে পদ্মার পাড়ে নির্মল বাতাসে প্রকৃতির মাঝে একটু বিনোদনের আশায় ঘুরতে আসা আর কি!’
সারাক্ষণ মোবাইলে ব্যস্ত সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী শিশু রাফসান। রাফসানের বাবা রাশেদ চাকরি করেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে। তাই ব্যস্ত সময় কাটে সপ্তাহজুড়ে। শুক্রবার অবসরে এসেছেন নদীর ধারে ছেলে রাফসানকে নিয়ে।
জানতে চাইলে রাশেদ বলেন, ‘কর্মব্যস্ততার কারণে সময় হয়ে ওঠে না পরিবার নিয়ে বাইরে যাওয়ার। শুধু শুক্রবার ছুটির দিনটা খানিকটা সময় মেলে। তাই প্রতি শুক্রবারে নদীর ধারে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি পদ্মার পাড়ে। যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছু সময়ের জন্য প্রকৃতির মাঝে সময় কাটিয়ে ভালো লাগে।’
নদীর ধারে ফুচকা বিক্রি করেন রিমন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘করোনায় ব্যবসা পুরাই বন্ধ ছিল। কোনো মানুষ নাই, তাই ইনকামও ছিল না। কিছুদিন থেকে মানুষ নদীর ধারে আসছে, তাই ব্যবসাটাও একটু-আধটু হচ্ছে। তবে সন্ধ্যা নামলেই পুলিশ এসে নদীর ধারে বেড়াতে আসা মানুষদের বাঁশি মেরে মাইকিং করে তুলে নেয়। এতে কিছুই ব্যবসার ক্ষতি হয়। তারপরও শুক্রবার ও ছুটির দিনগুলো পদ্মার পাড়ে মানুষের অনেক ভিড় হওয়ায় ব্যবসা ভালোই হয়।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ও নগর মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘বর্তমানে করোনায় পুরো বিশ্বের পরিস্থিতি টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। এজন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসচেতনতায় বেশি বেশি করে মাইকিং করা হচ্ছে যেন প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে না বের হন। এ বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর তাই সন্ধ্যার পরপরই পদ্মার পাড় ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো থেকে জনসমাগম সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।’
খবর কৃতজ্ঞতাঃ জাগোনিউজ২৪