নানা জাতের আম পাওয়া যায় বাংলাদেশে। এত সব জাতের আম কোথা থেকে এলো, তাদের নামকরণের গল্প, ম ম করা ঘ্রাণ কিংবা স্বাদের রহস্য-সব কিছুর পেছনেই আছে বিজ্ঞান। প্রিয় রাজশাহী এক্সপ্রেস ম্যাগাজিন পাঠক, চলুন জেনে নেই আমের এরকম নানা রহস্যের পেছনের বিজ্ঞান।
আম একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সুস্বাদু ফল। স্বাদে, গন্ধে, বর্ণে ও পুষ্টিমানে আমের বিকল্প শুধু আম, তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। আম সাধারণত কাঁচা, পাকা এমনকি ফ্রোজেন অবস্থায়ও খাওয়া যায়। এছাড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে আম থেকে আমসত্ত্ব, জুস, পিওরি, আচার, চাটনি এসব তৈরি করা যায়। ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি আইসক্রিম, বেকারি পণ্য ও কনফেকশনারিতেও পাকা আম ব্যবহার হয়ে থাকে। আমে প্রচুর পরিমাণ আঁশ, ভিটামিন সি, প্রো ভিটামিন এ, ক্যারোটিন ও বিভিন্ন প্রকার পলিফেনল নামক উপাদান থাকে। বাংলাদেশে মূলত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও পার্বত্য জেলাগুলো বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মে. টন আম উৎপাদিত হয়।
ফলের রাজা আম আর রাজাদের ফল আম। সম্রাট আকবরের আমের প্রতি আসক্তি নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। একবার সম্রাট আকবর এক ভোজসভার আয়োজন করলেন। সেই ভোজসভায় রাজন্যবর্গসহ মন্ত্রী–সভাসদেরা হাজির হলেন। ভোজসভায় সম্রাট আকবরের একজন প্রিয় সভাসদ বীরবলও উপস্থিত ছিলেন। বীরবল পেট পুরে বিভিন্ন খাবার খেলেন। বীরবল সম্রাটকে জানালেন, তিনি এত খেয়েছেন যে তার পেটে আর খাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই, আর নতুন করে কিছু খেতে পারবেন না। এমন সময় বীরবলের পাত্রে একজন খাবার পরিবেশনকারী বেশ কয়েক টুকরা আম রেখে যান। বীরবল আমের লোভ সামলাতে পারলেন না। আমের সেই টুকরাগুলো খেলেন তৃপ্তিসহ। এ দৃশ্য দেখলেন সম্রাট আকবর। তিনি বীরবলকে বললেন, ‘কী বীরবল, তোমার পেটে নাকি জায়গা নেই? আমগুলো তো নিমেষেই সাবাড় করে দিলে!’

বীরবল সম্রাটকে মিনতি করে বললেন, ‘মহামান্য সম্রাট! আপনি যখন রাস্তা দিয়ে যাওয়া শুরু করেন, তখন রাস্তায় লোকজন থাকলেও তারা সরে যায়, রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। মহারাজ আপনিও যেমন সম্রাট, তেমনি আম হচ্ছে সম্রাট বা ফলের রাজা। আমার পেট ভরা থাকলেও সে আমার পেটে জায়গা করে নিয়েছে।’
বীরবলের এ কথায় সম্রাট আকবর বেশ খুশি হলেন। বীরবলকে তিনি এক ঝুড়ি আম উপহার দিলেন। এই হলো আমের ‘ফলের রাজা’ উপাধি পাওয়ার কাহিনি।
অন্যদিকে আমগাছ আমাদের জাতীয় বৃক্ষ। সুপ্রাচীনকাল থেকে রাজন্যবর্গের কাছে আমের সমাদর ছিল সব ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ উপমহাদেশে গড়ে উঠেছে অনেক আমবাগান। এ জন্য আম হলো রাজাদের ফল।
আমের জন্মকথা
বিজ্ঞানী ড. সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, আমের আদি জন্মস্থান আসাম থেকে সাবেক ব্রহ্মদেশ (মিয়ানমার) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল। সে অর্থে বাংলাদেশের পূর্বাংশও আমের জন্মভূমির দাবিদার। যেসব জাতের আম এ দেশে দেখা যায়, তার অধিকাংশ জাতেরই সৃষ্টি সেসব অঞ্চলে। অথচ নিয়তির কী পরিহাস, সেই জন্মস্থানেই আম ভালো হচ্ছে না। ভালো হচ্ছে ঠিক দেশের উত্তরাঞ্চলে ও ভারতের মালদহ জেলায়। কবে কখন আমের জন্ম, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে ফলটি যে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে এ দেশে জন্মে আসছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
নামকরণ
আমের নাম কেন ‘আম’ হলো আর ইংরেজিতেই–বা ম্যাঙ্গো বলা হয় কেন? আমের কি আর কোনো নাম আছে? এসব নিয়ে অনেক কথা। ইংরেজ ও স্প্যানিশরা আমকে বলে ম্যাঙ্গো, পর্তুগিজরা বলে ম্যাঙ্গা। শব্দ দুটি তামিল শব্দ Man-key বা Man-gay থেকে উদ্ভূত। বাংলার আমকে জার্মান, ইতালিয়ান, গ্রিক, হিব্রু, জাপানি ও ইংরেজি ভাষায় বলা হয় ‘ম্যাঙ্গো’। থাইল্যান্ডে আমকে বলা হয় ‘মা-মুয়াং’। প্রকৃতিপ্রেমী আমিরুল আলম খান তাঁর বাঙলার ফল বইয়ে আমের আরও ২৩টি নামের উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো আম্র, কামশর, কামবল্লভ, কামাঙ্গ, কীরেষ্ট, কোকিলবাস, কোকিলোৎসব, চ্যুত, নৃপপ্রিয়, পিকরাগ, প্রিয়ঙ্কু, বসন্তদূত, তুঙ্গভীষ্ট, মধুলী, মাদাঢ্য, মাধবট্টম, মন্মথালয়, মধ্বারস, রসাল, সহকার, সুমদন, সিধুরস, সোমধারা। বলা বাহুল্য, এসবই প্রাচীন পুঁথি বা সাহিত্যনির্ভর বিভিন্ন লেখকের রাখা অর্থবোধক নাম। ফলটা গাছ থেকে পাকলে খসে পড়ে, এ জন্য নাম চ্যুত। আম সব সময়ই রাজাদের প্রিয় ফল, সে জন্য নাম নৃপপ্রিয়। ফলটি রসাল বলে এর নামের সঙ্গে বিভিন্ন নামকারক রস শব্দটা জুড়ে দিয়েছেন। যেমন: মধ্বারস, রসাল, সিধুরস ইত্যাদি। মিষ্টি স্বাদের বলে এর নাম মধুলী। তবে আম হিসেবেই এ উপমহাদেশে সে বেশি পরিচিত।
নানান জাতের আম
আমের রয়েছে বহু জাত আর সেসব জাতের নামকরণের পেছনে রয়েছে মজার মজার ইতিহাস। কিংবদন্তি আছে, মোগল বাদশাহর দরবারে এক বাইজি ছিলেন। নাম ছিল তার ফজল বিবি। বৃদ্ধ বয়সে ফজল বিবিকে বাদশাহ তাঁর আমবাগানের এক কোণে একটা চালা তৈরি করে থাকতে দেন। একসময় ফজল বিবি মারা যান। ফজল বিবির ঘর ছিল একটি আমগাছের তলায়। ফজল বিবি মারা যাওয়ার পর মানুষ ওই বড় বড় আমের নাম দিল ফজলি আম। এখন আমরা যে ফজলি আম খাই, সেটা সেই আদি গাছের আম। তবে সময়ের বিবর্তনে তার আকার ও স্বাদে বেশ বৈচিত্র্য এসেছে। এ জন্য এখন ফজলিরও অনেক উপজাত সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: সুরমাই ফজলি, মালদা ফজলি, নাক ফজলি, কালি ফজলি ইত্যাদি।
প্রাচীন ভারতের আরেক খ্যাতনামা ও শ্রেষ্ঠ নর্তকী ছিলেন আম্রপালি। তাঁর নামেও আধুনিক হাইব্রিড জাতের আরেকটি আমের নাম রাখা হয়েছে আম্রপালি। আমের মধ্যে আম্রপালিই সবচেয়ে মিষ্টি আম। তাই আম্রপালি নর্তকীর মতো এরও এক শ্রেষ্ঠত্বের অধিকার রয়েছে।
এক ল্যাংড়া বৃদ্ধ বেনারসে প্রথম একটি আমগাছ লাগিয়ে অপূর্ব ঘ্রাণের এক আম ফলান। সেই থেকে আমটার নাম হয়ে যায় ল্যাংড়া।
তেমনি ক্ষীরশাপাতি জাতের স্বাদের সঙ্গে লেগে আছে দুধের ক্ষীরের স্বাদ।
সম্রাট শাহজাহান তাঁর ছেলে আওরঙ্গজেবকে খাওয়ানোর জন্য দাক্ষিণাত্য থেকে যে আম আনিয়েছিলেন, সে আমের নামকরণ করা হয়েছিল বাদশাহপসন্দ।
এভাবে দিলপসন্দ, রানিপসন্দ, জামাইপসন্দ ইত্যাদি নামের পেছনেও জড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। আমের অনেক নামের শেষে যুক্ত হয়েছে ভোগ শব্দ। যেমন: গোপালভোগ, ক্ষীরভোগ, মোহনভোগ, রাজভোগ, রানিভোগ, লক্ষ্মণভোগ ইত্যাদি। এসব জাতের মতো অন্তত ১ হাজার ৬০০ জাতের বিভিন্ন নামের আম আছে এ উপমহাদেশে।
আমাদের দেশে প্রায় ১ হাজার জাতের আম রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় এখনো আমের অনেক জাতবৈচিত্র্য দেখা যায়। স্থানীয় সেসব জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্ষীরভোগ, মোহনভোগ, রাজভোগ, রানিভোগ, রানিপসন্দ, সিন্দুরা, সুবর্ণরেখা, কুয়াপাহাড়ি, নাক ফজলি, ফজলি, চিনি ফজলি, সুরমাই ফজলি, চিনিমিছরি, জগমোহিনী, রাখালভোগ, রাঙাগুড়ি, গোবিন্দভোগ, তোতাপুরী, মিছরিকান্ত, জালিবান্ধা, বোম্বাই, ভুতো বোম্বাই, পাহাড়িয়া, গোলাপখাস, কাকাতুয়া, দাদভোগ, চম্পা, সূর্যপুরী, কাঁচামিঠা, কলামোচা, শীতলপাটি, লক্ষ্মণভোগ, গোলাপবাস, কিষানভোগ, বান্দিগুড়ি, রাংগোয়াই, আশ্বিনা, ভাদুড়িগুটি, বনখাসা, বউ ফুসলানি, ক্ষীরমন, দুধসর, রংভিলা, পারিজা, আনোয়ারা, দিলশাদ, আম্রপালি, মল্লিকা, বেগমবাহার, পূজারীভোগ, পলকপুরী, রাজলক্ষ্মী, দুধকুমারী, শ্যামলতা, খাট্টাশে, জাওনা, দমমিছরি, মিছরিমালা, মিছরিবসন্ত, মেসোভোলানি, আনোয়ারা, পলকপুরী, ফুনিয়া, রানিপসন্দ, গোলাপবাস, বাতাসাভোগ, ইটাকালি, গোল্লাছুট, পোল্লাদাগী, মোহনবাঁশি, পরানভোগ, বিড়া, ভারতী, বাদশাহপসন্দ, বেগমপসন্দ, রাজাপসন্দ, বনখাসা, বাগানপল্লি, কালিগুটি, পাকচারা, কালিয়াভোগ, কোহিতুর, কালিগুলি, হাঁড়িভাঙা ইত্যাদি।
এর পাশাপাশি এ দেশে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলের জার্মপ্লাজম সেন্টার থেকে উদ্ভাবিত হয়েছে আমের অনেক আধুনিক ও উন্নত জাত।
আম চাষের ইতিহাস
বিভিন্ন সংস্কৃত সাহিত্যে আজ থেকে প্রায় ৬ হাজার বছর আগেও এ অঞ্চলে আম চাষের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রায় ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আম ভারতবর্ষে দেশীয়করণ হয়। দেশীয়করণের পর তা ধীরে ধীরে এশিয়ার অন্যান্য দেশে বিস্তার লাভ করতে শুরু করে। আনুমানিক ৫০০ থেকে ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে আম পূর্ব এশিয়ায় প্রবর্তিত হয়। ১৫ শতকে আম যায় ফিলিপাইন ও এরপর আফ্রিকায়। প্রাচীনকালে নির্মিত ভারতের অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্রেও রয়েছে আমগাছের অপূর্ব সৌন্দর্যচিত্র। ইতিহাসে উল্লেখ আছে, মহাবীর আলেকজান্ডার খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে সিন্ধু উপত্যকায় এসে সুদৃশ্য আমবাগান দেখে মুগ্ধ হন। বিভিন্ন সময়ে এ দেশে আসা পর্যটকেরাও তাঁদের ভ্রমণকাহিনিতে আমকে সরস ফল বলে উল্লেখ করে গেছেন। চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং ৬৩২ থেকে ৬৪৫ সালের মধ্যে এ দেশ ভ্রমণে আসেন। তিনিই প্রথম তাঁর ভ্রমণকাহিনিতে আমের কথা বর্ণনা করে বহির্বিশ্বে আমকে সরস ফল হিসেবে পরিচিত করেন।
ভারতবর্ষে পাল রাজাদের আমলে পুণ্ড্রবর্ধনভুক্তি ও শ্রীনগরভুক্তিতে আমের চাষ করা হতো। সে সময় উত্তর-পূর্ব ভারতে ব্যাপকভাবে আমের চাষ করা হতো এবং মথুরা থেকে আসাম পর্যন্ত ভালো আম উৎপাদিত হতো। ভারতে মুসলিম শাসনামলে মূলত আম চাষ ও আমবাগান তৈরি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দিল্লির সুলতান কায়কোবাদ, জালালুদ্দিন, আলাউদ্দিন খিলজি, গিয়াসউদ্দিন তুঘলক-সবাই আম পছন্দ করতেন। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতবর্ষে আম চাষের প্রসার ঘটে। মোগল আমলে আমের পরিচিতি ঘটে ব্যাপকভাবে। মূলত আমের নতুন নতুন জাত তৈরি ও বাহারি রঙের নানা স্বাদের আমের চাষ শুরু হয় মোগল আমলে। আমের বহু জাতের নামকরণও করা হয় সে আমলে।
সে সময় একজন মোগল উদ্যানতত্ত্ববিদ আমের পাঁচ শতাধিক জাত উদ্ভাবন করেন। মোগল শাসকেরা বিভিন্ন স্থানে সেসব জাতের গাছ লাগিয়ে আমবাগান সৃষ্টি করেন। সম্রাট বাবর সে সময় আমকে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ফল বলে আখ্যায়িত করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় তখন ভারতবর্ষে বহু আমবাগান গড়ে ওঠে। সম্রাট আকবরের প্রচেষ্টায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে বিহারের দ্বারভাঙায় ১ লাখ আমগাছ লাগিয়ে এক বিশাল আমবাগান সৃষ্টি করা হয়, যা ‘লাখবাগ’ নামে পরিচিত। বাগানটি দেখাশোনা ও পরিচর্যার জন্য তিনি শত শত মালি, ফলবিশারদ ও কর্মচারী নিয়োগ করেন। লাখবাগে প্রথম আমের কলম করার পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়। সেখান থেকে শুরু হয় কলম করে আমের চারা উৎপাদন ও রোপণ। এর আগে আঁটির চারা লাগিয়েই আমবাগান করা হতো। এতে কখনোই সেসব গাছে মাতৃগাছের গুণ হুবহু ঠিক থাকত না। এ জন্য আমের বহু জাতের উদ্ভব ঘটে। কলম করার ফলে মাতৃগাছের সেই বৈশিষ্ট্য ধরে রাখা সম্ভব হয় ও দ্রুত সেসব গাছ থেকে আম পাওয়া যায়। সম্রাট আকবরই প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই উপমহাদেশে প্রথম পরিকল্পিতভাবে আমবাগান তৈরিতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন।
আম নিয়ে তাঁর আমলে গবেষণাও কম হয়নি। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে পাকা বা আধা পাকা আমকে সারা বছর ধরে সংরক্ষণের পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়, যা বেশ চমকপ্রদ। ভাবতে অবাক লাগে, আধুনিক কালে এসে যেখানে টাটকা আম ১০ থেকে ১৫ দিনের বেশি রাখা যায় না, সেখানে ১ বছর ধরে আম সংরক্ষণ করার প্রযুক্তি সে সময় তাদের জানা ছিল। ১৫৯০ সালে আবুল ফজল রচিত আইন-ই-আকবরী বই থেকে জানা যায়, একটি আধা পাকা আমের বোঁটা কমপক্ষে দুই আঙুল লম্বা রেখে গাছ থেকে পাড়তে হবে। এরপর বোঁটার আগা গরম মোম দিয়ে ঢেকে মাখন বা মধুর মধ্যে রাখতে হবে। এ অবস্থায় আমের স্বাদ দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত অক্ষুণ্ন থাকবে। এ ছাড়া আমের রং এক বছর পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব হবে।
সম্রাট আকবরের দীর্ঘ খাদ্যতালিকার শীর্ষে ছিল আম। রাজধানী দিল্লির রাজদরবারে যাতে সারা বছর আমের সরবরাহ থাকে, তিনি সে ব্যবস্থা করেছিলেন। এমনকি তিনি পরিকল্পনা করে ভারতবর্ষের বিভিন্ন আবহাওয়ায় বছরের বিভিন্ন সময়ে আম উত্পাদনেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। জাত বাছাই করেছিলেন কোনটি আগে পাকে, কোনটি পাকে পরে।
১৭৩৯ সালে নাদির শাহ আফগানিস্তান থেকে ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। সে সময় দিল্লির শাসক ছিলেন মোগল সম্রাট মুহাম্মদ শাহ। নাদির শাহ দিল্লিতে অবস্থানকালে বলেন, ‘দিল্লি আমাকে খুব কমই আনন্দ দিতে পেরেছে। এ ধরনের লোকদের আমি পছন্দ করি না। তাদের খাদ্য ও শরাবও আমার পছন্দ হয়নি। তাদের তরমুজে কোনো ঘ্রাণ নেই এবং এগুলো আমার পেটে গ্যাস তৈরি করেছে। এদের আমটাকে মিষ্টি স্বাদের কারণে আমার ভালো লেগেছে, কিন্তু এই আম খেতে গিয়ে আমার হাত ও দাড়ি রসে লেপটে গেছে।’
নবাবি আমলে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় অনেক আমবাগান গড়ে ওঠে। মুর্শিদাবাদের নবাবদের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রচেষ্টায় মুর্শিদাবাদের লালবাগের আমবাগানে ২৫০টির বেশি ভালো জাতের আম তৈরি করা হয়। এ বাগান থেকে উন্নত সেসব জাতের আমের চারা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় লালবাগ বাগানের প্রভাবে ব্যাপকভাবে আম চাষের প্রসার ঘটে। লালবাগ বাগানের একজন উদ্যানরক্ষকককে উত্কৃষ্ট মানের আমের নতুন জাত তৈরি ও নামকরণের জন্য নবাব আলীবর্দী খাঁ পুরস্কৃত করেন। উদ্যানরক্ষক তখন উদ্ভাবিত সেই জাতের নামকরণ করেছিলেন তাঁর স্ত্রীর নামে-‘বিমলা’।
নাটোরে রানি ভবানীর কাছারিবাড়ির পাশে রয়েছে একটি আমবাগান। সেখান থেকে রানি ভবানীর জন্য উত্পাদিত হতো উন্নত জাতের আম। নাটোর সদরের গদাই নদের তীরে ছাতনী গ্রামে ডা. মনির উদ্দিন ব্রিটিশ আমলে প্রায় ১০০ বিঘা জমির ওপরে একটি আমবাগান গড়ে তোলেন। তিনি ব্রিটিশ আমলে চিকিত্সক হিসেবে বিহারে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে বিহারের লাখবাগ আমবাগান থেকে আমের অনেক উন্নত জাতের চারা এনে রোপণ করেন। তিনি মুর্শিদাবাদের লালবাগ বাগান থেকেও অনেক চারা এনে সেখানে রোপণ করেন। তাই সে বাগানটি এ দেশে বিভিন্ন জাতের আম সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রাচীন এসব বাগানে সাক্ষী হয়ে আছে বেশ কিছু শতবর্ষী আমগাছ। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মন্ডুমালা গ্রামে রয়েছে প্রায় দেড় শ বছর বয়সী সূর্যপুরী জাতের এক বিশাল আমগাছ, যাকে বলা হয় এশিয়ার বৃহত্তম আমগাছ।
ব্রিটিশ আমলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজ শশীকান্ত আচার্য রায়বাহাদুর চৌধুরী প্রায় ২০০ বিঘার ওপরে একটি আমবাগান গড়ে তোলেন, যা ‘রাজার বাগান’ নামে খ্যাত। বাগানটির বয়স ২০০ বছরের বেশি হলেও এখনো টিকে আছে। ময়মনসিংহের মহারাজা ব্রিটিশ আমলে সেখানে যেতেনও নিজে বাগানের দেখাশোনা করতে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মনাকশায় আরও একটি ঐতিহাসিক বাগান রয়েছে, যেটি ‘চৌধুরীদের বাগান’ নামে পরিচিত। প্রায় ১৫০ বছর আগে ৩৫ বিঘা জমির ওপরে মনাকশার জমিদার শাহ মোহাম্মদ চৌধুরী বাগানটি তৈরি করেন। তিনি মোগল সম্রাট আকবরের দ্বারভাঙ্গা জেলার লাখবাগ, মহিশুরের টিপু সুলতানের আমবাগান ও মুর্শিদাবাদের নবাবদের আমবাগান লালবাগ থেকে বিভিন্ন জাতের আমগাছ এনে সেখানে লাগান। সে বাগানে ৭০টির বেশি জাতের আমগাছ রয়েছে। এ আমবাগানে যেসব জাতের আম রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আনোয়ার রাতুল, গোলাপখাস, মালগোভা, জর্দালু, কোহিতুর, রানিপসন্দ, নবাবপসন্দ, শাহপসন্দ, মির্জাপসন্দ, এনায়েতপসন্দ, দিলপসন্দ, জমরুদপসন্দ, দশেরি, কিষানভোগ, গোবিন্দভোগ, কালীভোগ, জমরুদ, কালাপাহাড়, কুয়াপাহাড়ি, হজকাওসার, ভবানী চুরষ, কর্পূর, গোলাপভাদুড়ি, হুজুরি, মতিমান্ডা, মোগল, ফুনিয়া, পাটনা, বুদ্ধার ধোপা, বুদ্ধার কালিয়া, দিলসাদ, ওয়ালি, রোগান, ক্যালিন্ডা, ব্রাভো, হায়াতি, চৌষা, মল্লিকা, জালিবান্ধা, মিছরিকান্ত, সফেদা, সূর্যপুরী, বৃন্দাবনী, লতা বোম্বাই, নীলম, তোতাপুরী, আনারস, বিমনী, গৌরজিৎ, রোমালী, সিন্দুরী, চকচকা, বাদশাহ ইত্যাদি।
পর্তুগিজরা অনেকবার এ দেশ থেকে সরস ফল আমের চাষকে তাদের দেশে নেওয়ার চেষ্টা করে বিফল হয়েছে। কেননা, আমের আঁটির সতেজতার কাল থাকে খুব কম। তাই জাহাজে করে আঁটি নিয়ে পুঁতে এত দূরে আমগাছ তৈরি করা সম্ভব ছিল না। চারা তৈরি ও কলম করার কৌশল আবিষ্কারের পরই আসলে পৃথিবীর নানা দেশে ভারতবর্ষ থেকে আমের বিস্তার শুরু হয়। আনুমানিক ১৭০০ সালে এ উপমহাদেশ থেকে ব্রাজিলে প্রথম আমগাছ রোপণ করা হয়। সেখান থেকে ১৭৪০ সালে আমগাছ যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজে। বর্তমানে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত অনেক দেশেই আম চাষ করা হয়। তবে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া হলো আম উত্পাদনের প্রধান কেন্দ্র। ভারত, বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি পৃথিবীর অন্যতম প্রধান আম উত্পাদনকারী দেশ। বাণিজ্যিক আম উত্পাদনে এখন ভারত ও থাইল্যান্ড আমাদের দেশের চেয়ে বেশ এগিয়ে গেছে। বিশ্ব আম উত্পাদনে বর্তমানে শীর্ষ দেশ ভারত (৩০%), বাংলাদেশের অবস্থান নবম (৩%)।
আমের রং–রহস্য
নানা জাতের আমের নানা রং। কাঁচা আমের রং সবুজ থেকে কালচে সবুজ, কিন্তু পরিপক্বতার সঙ্গে সঙ্গে সেই সবুজ রং বদলাতে থাকে। প্রথমে হয় ফিকে সবুজ, পরে হলুদ বা কমলা হলুদ। কিছু জাতের খোসার রং হলো লাল। আবার কিছু জাতের রং বোঁটার কাছে হয় লালচে ও অন্যান্য অংশ হয় হলুদ। সবুজে-হলুদে মেশানো রংও দেখা যায়। বিশ্বে অধিকাংশ আমপ্রেমীর পছন্দ লাল রঙের আম, সুমিষ্ট স্বাদ আর প্রীতিকর সৌরভ। আমের খোসার এই রং সৃষ্টির রহস্য কী? গবেষকেরা গবেষণা করে দেখেছেন যে কিছু রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির কারণে আমের খোসার এই রঙে বদল ঘটে। অ্যান্থোসায়ানিন পিগমেন্ট বা বর্ণকণিকা, যা ফিনাইলপ্রোপানয়েডের সেকেন্ডারি মেটাবোলাইটসের উপস্থিতির কারণে আমে লাল রঙের সৃষ্টি হয়। আমের লাল রং সৃষ্টির জন্য দায়ী প্রধান অ্যান্থোসায়ানিন হলো সায়ানাইডিন ৩-০-গ্যালাক্টোসাইড এবং মিথাইলসায়ানিডিন ৩-০-β-ডি গ্যালাকটোপাইরানোসাইড। রোদ বা আলোর উপস্থিতিতে এসব দ্রব্যের উত্পাদন বাড়ে। রঙের গাঢ়ত্বের ওপর নির্ভর করে আমের রংকে স্কেলে ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে (০ = লাল রংবিহীন, ১ = ফিকে লাল থেকে ৫ = গাঢ় লাল)।

আমের কাঁচা শাঁসের রং সাদা বা সবুজাভ সাদা, পাকলে হয় হলুদ বা কমলা। আমের সবুজ রং হয় খোসায় ক্লোরোফিল কণিকার উপস্থিতির কারণে। পরিপক্বতার সঙ্গে সঙ্গে এই ক্লোরোফিল ভেঙে যায় ও বিটা ক্যারোটিনে (β-Carotene) রূপান্তরিত হয়ে হলুদ রং সৃষ্টি করে। শাঁসের রংও পরিপক্বতার সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে ফিকে হলুদ থেকে কমলা হলুদ হয়। হলুদ রঙের এই গাঢ়ত্বকে পরিমাপের জন্য রয়েছে ১০টি স্কেল, যে স্কেলের ০ অর্থ সবুজ এবং ১০ অর্থ গাঢ় হলুদ। যে আমে বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণ থাকে সবচেয়ে বেশি, সে আমের স্কেল রেটিং হয় ১০। একদল গবেষক চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুর জেলার ৭টি গুরুত্বপূর্ণ জাতের (গুটি আম, ক্ষীরশাপাতি, ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, ফজলি, আম্রপালি ও আশ্বিনা) ওপর ২০১৭-১৯ পর্যন্ত গবেষণা করে দেখতে পেয়েছেন যে সবচেয়ে বেশি বিটা ক্যারোটিন রয়েছে ক্ষীরশাপাতি আমে (৪৭.২১ মাইক্রোগ্রাম/ ১০০ গ্রাম শাঁস)। সবচেয়ে কম রয়েছে আশ্বিনা আমে (১২.৫৪ মাইক্রোগ্রাম/ ১০০ গ্রাম শাঁস)।
আমের এই রঙের বাণিজ্যিক গুরুত্ব থাকলেও আসলে আম তার রং বদল করে প্রকৃতির নিয়মে, প্রকৃতির স্বার্থে। অধিকাংশ পাখি, সরীসৃপ ও বন্য প্রাণীর রয়েছে চমত্কার বর্ণানুসন্ধানের ক্ষমতা। এমনকি নিশাচর হলেও তারা এসব পাকা ফল দেখে বুঝতে পারে ও সেগুলো খেয়ে বাঁচতে পারে, সেসব ফলের বীজ দূরবর্তী স্থানে নিয়ে বিস্তার ঘটাতে পারে।
আম–রসায়ন
রসাল ফল আম, আর সেই রসে মিশে আছে বহু রকমের রাসায়নিক উপাদান। একেক উপাদান আমের একেক বৈশিষ্ট্য দান করেছে। যদিও সবাই জানে যে আবহাওয়া, জমি, মাটি, জন্মানোর স্থান, গাছের বয়স, আমের বয়স, জাত, পরিচর্যা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আমের রসায়নও হয় বিভিন্ন রকমের। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক মারিয়া এলেনা ও তাঁর সহকর্মীরা বিভিন্ন দেশের গবেষকদের গবেষণাপত্র পর্যালোচনা করে আমের রাসায়নিক উপাদানগুলোকে চারটি অংশে ভাগ করেছেন। প্রথম অংশে রয়েছে আমের পুষ্টি ও অণুপুষ্টি উপাদান; অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, লিপিড, জৈব অ্যাসিডগুলো, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে ফলে থাকা বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক যৌগ বা ফাইটোকেমিক্যাল। যেমন: ফেনোলিক অ্যাসিড, ফ্ল্যাভিনয়েডস, ক্লোরোফিলের মতো সবুজ বর্ণকণিকা বা পিগমেন্ট। তৃতীয় অংশে রয়েছে গুটি থেকে পাকা পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের আমে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলোর পরিবর্তন। চতুর্থ অংশে তাঁরা বর্ণনা করেছেন গাছ থেকে আম পাড়ার পর তার ভেতরে যে রাসায়নিক পরিবর্তনগুলো ঘটে, যেমন: ইথিলিন উত্পাদন।
পাকা আম মিষ্টি বা মিষ্টি টক। আমের মিষ্টতা নির্ভর করে আমে থাকা চিনির পরিমাণের ওপর। বিশেষ করে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ। কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে স্টার্চ ও পেকটিন গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টি, স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য এসব রাসায়নিক উপাদান গুরুত্বপূর্ণ। টাটকা পাকা আমে প্রায় ১৫ শতাংশ টোটাল সুগার বা চিনি থাকে। জাতভেদে এই পরিমাণ কমবেশি হয়। কাঁচা আমে ফ্রুক্টোজ প্রধান মনোস্যাক্কারাইড, কিন্তু পাকা আমে প্রধান হলো সুক্রোজ। কাঁচা আমে পরিমাণের দিক থেকে স্টার্চ থাকে বেশি। পাকার সময় এই স্টার্চ গ্লুকোজে পরিণত হয়। এভাবে পাকার সময় আমের শাঁসে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
পেকটিন আর একটি কার্বোহাইড্রেট, যা আমের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে থাকে। আম যখন কাঁচা থাকে, তখন তাতে পেকটিনের সঞ্চয়ন ঘটতে থাকে, কিন্তু পাকার সঙ্গে সঙ্গে পেকটিনের আণবিক ওজন কমে যায়। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতের আমে প্রোটিন, তথা অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিমাণ থাকে বিভিন্ন। ভারতীয় আমে ০.৫ থেকে ১ শতাংশ প্রোটিন থাকে, আমেরিকার আমে থাকে আরও কম। পাকা আমে যেসব অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রধানত থাকে সেগুলো হলো অ্যালানিন, আরজিনিন, গ্লাইসিন, সেরিন, নিউসিন, আইসোলিউসিন ইত্যাদি। আমের শাঁসে ফ্যাটি অ্যাসিড তেমন না থাকলেও এর আঁটি ও খোসায় বেশ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা শিল্পদ্রব্যে ব্যবহৃত হতে পারে। উল্লেখযোগ্য ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো হলো পামিটিক, স্টিয়ারিক, ওলিক, লিনোলিক, লিগনোসেরিক, অ্যারাকিডিক, লিনোলিনিক ও বেহেনিক অ্যাসিড।
আমে থাকা বিভিন্ন জৈব অ্যাসিড বেশ দুর্বল প্রকৃতির। এসব যৌগের আণবিক ওজন থাকে কম যেমন অক্সালিক অ্যাসিড। আবার সাইট্রিক অ্যাসিডের মতো অ্যাসিডের আণবিক ওজন থাকে বেশি। আমের সবাত বিপাকীয় কাজের জন্য জৈব অ্যাসিডগুলোর প্রয়োজন রয়েছে। আম কতটুকু টক হবে, তা নির্ভর করে আমে কী পরিমাণে সাইট্রিক ও ম্যালিক অ্যাসিড রয়েছে, তার ওপর। সাইট্রিক অ্যাসিডপ্রধান আমে যার পরিমাণ ০.১৩% থেকে ০.৭১%। আমে বহু রকমের ভিটামিন থাকলেও কাঁচা আমে ভিটামিন সি এবং পাকা আমে ভিটামিন এ প্রধান। ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে থাকে খুবই কম পরিমাণে। আমে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পানিতে দ্রবণীয়। তবে আম পাড়া থেকে সংগ্রহোত্তর পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। আম যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, সেরেনিয়াম ইত্যাদি খনিজ উপাদানের উত্স। সবচেয়ে বেশি থাকে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম। গবেষক হিউ ও তাঁর সঙ্গীরা আমের শাঁস ও খোসায় ৩৪টি ফেনোলিক যৌগের সন্ধান পেয়েছেন। আমে যে পলিফেনল যৌগগুলো রয়েছে, সেগুলোর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ধর্ম রয়েছে।
আম সংগ্রহের উপযুক্ত সময়
পরিপক্ব আম গাছ থেকে সংগ্রহ করার অনুমোদিত উপযুক্ত সময় হলো সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে আম পাড়লে আমের কষ কম বের হয়। মনে রাখতে হবে, বৃষ্টি হওয়ার পর পরই আম সংগ্রহ করা ঠিক নয়।

পাঠক, আমের মৌসুম সন্নিকটে। আমময় হোক আপনার তিনবেলা খাবার টেবিল!