রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা রাসিক মেয়র হলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র। সিটি কর্পোরেশনের কার্যনির্বাহী প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রতি পাঁচ বছর পরপর নাগরিকের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন তিনি। মেয়রের অনুপস্থিতিতে সিটি কর্পোরেশনের কার্যপরিচালনার জন্য একজন প্রশাসক থাকেন। সর্বশেষ রাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার পূর্বে ১৮৬৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যান ও প্রশাসকগণ শহরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আগামী ২১ শে জুন ২০২৩-এ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রিয় রাজশাহী এক্সপ্রেস পাঠক, চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই সাম্প্রতিক সময়ে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন রাসিক মেয়র সম্পর্কে –
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (আবুল হাসনাত মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান লিটন) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বাধীন মেয়র। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহীর মেয়র হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৮ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন।
খায়রুজ্জামান লিটনের পিতার নাম আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং মাতা জাহানারা বেগম। আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান জাতীয় চার নেতার অন্যতম একজন, প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
খায়রুজ্জামান লিটন ১৯৫৯ সালের ১৪ আগস্ট রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর ১৯৭৬ সালে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৭৯ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৮৫ সালে বার কাউন্সিলের সদস্য হন।
খায়রুজ্জামান লিটন ১৯৮৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন। ২০০৮ সালে তিনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন এবং ২০১৮ সালে পুনরায় মেয়র নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। ২০২১ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি প্রেসিডিয়াম এর সদস্য হিসেবে অন্তৰ্ভুক্ত হন।
মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল
মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন রাজনীতিবিদ ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র। বর্তমানে তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ১৯৬৫ সালের ৫ জুন রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুর রশীদ ও মাতা ফাতেমা বেগম। তিনি ১৯৮১ সিরোইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে স্নাতক ও ১৯৮৮ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ১৯৯২ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করেন।
মোসাদ্দেক হোসেন ছাত্রাবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৯১ সালে রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী যুবদলে যোগদান করেন। ২০০৩ সালে রাজশাহী মহানগর যুবদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রাজশাহীর মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে নির্বাচিত হয়ে ২০১৮ পর্যন্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মিজানুর রহমান মিনু
মিজানুর রহমান মিনু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন রাজনীতিবিদ ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র। বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মিনু অষ্টম জাতীয় সংসদে রাজশাহী-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পূর্বে তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৯৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন।
বিভিন্ন সময়ে জনাব মিনু বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্মমহাসচিব ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের ২১ মে প্রথমবারের মতো নাগরিকদের সরাসরি ভোটে রাজশাহীর মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। পরে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আরো দুই মেয়াদে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রাজশাহী-২ আসন থেকে নির্বাচন করে জয়ী হন।
উল্লেখ্য, আগামী ২১ শে জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম, জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুর্শিদ আলম।