জুটি বাঁধতে যাচ্ছে নীলগাই। বিলুপ্ত এই যুগলের জন্য প্রস্তুত দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যান। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে সেখানে রয়েছে একটি প্রাপ্তবয়স্ক মাদি নীলগাই। আর রাজশাহী থেকে শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) নেয়া হবে পুরুষ নীলগাইটি।
এরইমধ্যে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নীলগাই যুগলের বসবাস উপযোগী বেষ্টনী নির্মাণ হয়েছে। সেখানেই সংসার পাতবে বিপন্ন এই প্রাণীযুগল। এখন এই প্রাণীর বংশবিস্তারে আশাবাদী প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, ১৯৫০ এর আগে বাংলাদেশে দেখা যেত নীলগাই। কিন্তু এখন সেটি বিলুপ্ত। ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলেই নীলগাই দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মালাবার উপকূল ও বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন অঞ্চলগুলো বাদে উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে কর্ণাটক প্রদেশ পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি। ভারতীয় উপমহাদেশে অ্যান্টিলোপ জাতীয় প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বৃহদাকৃতির এটি।
নীলগাই ঘন বন এড়িয়ে ছোট পাহাড় আর ঝোপ-জঙ্গলপূর্ণ মাঠে চরতে ভালোবাসে। সচরাচর ৪ থেকে ১০ সদস্যের দলে এরা ঘুরে বেড়ায়। গাছে ঢাকা উঁচু-নিচু সমতলে বা তৃণভূমিতে স্বাচ্ছন্দে বিচরণ করতে পারে এরা। শস্যক্ষেতে নেমে ব্যাপক ক্ষতি করতেও পটু নীলগাই।
আত্মরক্ষায় এদের প্রধান উপায় দৌড়ে পালানো। দ্রুতগামী ও শক্তিশালী ঘোড়ার পিঠে না চড়ে নীলগাই ধরা প্রায় অসম্ভব। তারপরও গত ২২ জানুয়ারি ধাওয়া করে নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকায় পুরুষ নীলগাইটি ধরে ফেলে এলাকাবাসী। পরদিনই আহত প্রাণীটি নেয়া হয় রাজশাহীর বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
রাজশাহী চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক ও ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দিনের অধীনে চিকিৎসা চলছিলো নীলগাইটির।
রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ দফতরের বিভাগীয় কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, রাজশাহীতে নীলগাইটির নীবিড় পর্যক্ষেণ ও পরিচর্যা চলছিল। এখন সেটি পুরোপুরি সুস্থ। বংশ বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নীলগাইটি রামসাগর জাতীয় উদ্যানে নেয়া হবে। শুক্রবারের মধ্যে সেটি রামসাগরে নেয়ার কথা।
দিনাজপুর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ দফতরের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার আখক্ষেত থেকে একটি মাদি নীলগাই উদ্ধার করা হয়। সেটি এখন রামসাগর জাতীয় উদ্যানে রয়েছে। সেটি পূর্ণবয়স্ক হওয়ায় তারা একটি পুরুষ নীলগাই সন্ধান করছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে নওগাঁয় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নীলগাই পাওয়া যায়। এখন এই যুগলের স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধি হবে। বিলুপ্তপ্রায় এই বন্যপ্রাণীটির সংখ্যা আবারও বাড়বে বলে আশাবাদী এ কর্মকর্তা।
এদিকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মান্দায় উদ্ধার পুরুষ নীলগাইটি বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এ সময় বিরল প্রাণী যেখানেই ধরা পড়ুক, তাদের আহত না করে বন্যপ্রাণী উদ্ধার দলকে খবর দেয়ার আহ্বান জানান মেয়র।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ জাগোনিউজ২৪