রাজশাহী থেকে সব রুটেই যাত্রীবাসী বাস চলাচল সোমবার সকাল থেকেই বন্ধ রয়েছে। তবে তারপরও সবকিছু উপেক্ষা করে রাজশাহীতে আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় পদ্মারপাড়ে নাইস কনভেশন সেন্টারের সামনে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হয়েছে। তবে এর আগে সমাবেশে আসতে পথে পথে বিএনপি-ছাত্রদলল ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিএনপি নেতা ও কর্মীরা অভিযোগ তুলেছেন, রাজশাহীতে প্রবেশে পথে পথে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘সমাবেশে যোগ দিতে রাজশাহীতে আসার পথে দুপুর ১টায় পুঠিয়া উপজেলায় আমাকে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমার সাথে আরও ১০ জন নেতাকর্মী ছিলো। পরে প্রায় আধাঘণ্টা পর আমাকে পুঠিয়া থেকে রাজশাহীতে আসতে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমার পিছনে আরও একটি গাড়িতে ১০ জন নেতাকর্মী ছিল। তাদেরকে আটকে দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, শুধু পুঠিয়াতে নয়, রাজশাহীতে আসতে বিভিন্ন জেলার প্রবেশমুখে নেতাকর্মীদের বাধা দেয়াসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে।
নওগাঁর ধামুরহাট থানা যুবদলের আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মাইক্রোবাস ভাড়া করেছিলাম। শেষ মুহূর্তে চালকরা জানিয়েছেন, তারা আসতে পারবেন না। চাপ আছে। পরে পাঁচটি মোটরসাইকেলে ১০ জন এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চার জন আমরা রাজশাহীতে এসেছি। মোড়ে মোড়ে আমাদের আটকে তল্লাশি করা হয়েছে। আমরা একসঙ্গে আসতে পরিনি। আলাদা আলাদা এসেছি। নওগাঁয় নওহাটা মোড়ে এবং রাজশাহীতে নওদাপাড়ায় আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সমাবেশের কথা না বলে নানান অজুহাত দিয়ে আসতে হয়েছে। আমাদের অনেক নেতা আসতে পারেননি।’
গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপি’র কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, তারা ২৭ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে রাজশাহীতে এসেছেন। কিছু দূর পর পর তাদের পকেটে হাত দিয়ে তল্লাশি করা হয়েছে। জেরা করা হয়েছে কোথা থেকে এসেছেন, কোথায় যাবেন।
পবা উপজেলার কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, আমরা মোটরসাইকেল নিয়ে কয়েকজন নেতাকর্মী সমাবেশে আসছিলাম। আমাদের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলমেটসহ সকল কাগজপত্র ছিল। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই আমাদেরকে সমাবেশস্থলে পৌঁছাতে দেয়া হয়নি।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, আমরা এর আগে বিভাগীয় সমাবেশ করেছি। তখনও বাধা দেয়া হয়েছে। এটি আসলে নতুন কিছু নয়। তবে বাধা উপেক্ষা করে সব জেলা থেকেই আমাদের নেতাকর্মীরা রাজশাহীতে এসেছেন। আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হয়েছে। নাইস কনভেনশন সেন্টারসহ পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ও মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। ভেন্যুকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, শহরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করতে বাস মালিক সমিতি ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। নানা কারণে তারা বাস চালাতে পারছেন না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাউকে বাধা দেয়া হয়েছে এমন তথ্য আমার জানা নেই’।
এদিকে গত সোমবার থেকে বাস রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রূটের বাস চলাচল বন্ধ থাকায় আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার যাত্রীরা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। নগরীর শিরোইল বাস চার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
রাজশাহী জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, ‘জেলায় রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা নিজে থেকেই বাস চালাতে চাচ্ছেন না। সেই কারণে আপাতত বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’