দেরির চক্র থেকে বের হতে পারল না উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলো। ঈদযাত্রার প্রথম দিন থেকে শুরু হয়েছে উত্তরাঞ্চলগামী ট্রেনের সময়সূচি (শিডিউল) বিপর্যয়। গতকাল সোমবার চতুর্থ দিনেও তা কাটানো যায়নি। আজও দেরিতে ছাড়বে এই অঞ্চলের ট্রেন।
গতকাল ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী সাতটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ছেড়েছে। ট্রেনগুলো হলো সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, লালমনি ঈদ স্পেশাল, রাজশাহী এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি ও ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস। দেরি করেছে চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেসও।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল কমলাপুর থেকে ৫৬টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। এর মধ্যে ৪টি বিশেষ ট্রেন। সকালের ট্রেনগুলোতে ছাদে যাত্রীরা ভ্রমণ না করলেও বিকেলের পর থেকে ছাদেও যাত্রী দেখা গেছে।
এবার রেলে ঈদযাত্রার পুরো সময় উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কমলাপুর স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন দুই থেকে তিন গুণ বেশি যাত্রী আমরা পরিবহন করছি। ঈদের কারণে ট্রেনগুলোর সাপ্তাহিক বন্ধ না থাকায় আমরা সময় ঠিক করতে পারছি না। ঈদের পর যখন ছুটি পাওয়া যাবে, তখন এই বিলম্বটা ম্যানেজ করা যাবে। আগামীকালও (আজ) দেরি করে ছাড়বে নীলসাগরসহ উত্তরবঙ্গগামী সব ট্রেন।’
চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী মো. তাজুল ইসলাম। পরিবারের চার সদস্য নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছেন। বললেন, ‘সড়কপথের চেয়ে নিরাপদ বলে প্রতিবার ঈদে ট্রেনেই যাই। আধা ঘণ্টা-এক ঘণ্টা দেরি মানা যায়। প্রায় চার ঘণ্টা হতে চলল! অথচ ট্রেনটা এখনো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই আসেনি। বাড়ি যেতে যেতে তো আগামীকাল ভোর হয়ে যাবে।’
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটি ছেড়েছে ৮টা ১৫ মিনিটে। চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা সকাল ৮টায়। তা পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে বেলা একটায় স্টেশন ছাড়ে। লালমনিরহাটগামী লালমনি ঈদ স্পেশাল ছাড়ার কথা সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে। তা তিন ঘণ্টা দেরি করে স্টেশন ছেড়েছে দুপুর সোয়া ১২টায়। রংপুর এক্সপ্রেস ছেড়েছে দুই ঘণ্টা দেরিতে, চট্টলা এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী রাজশাহী এক্সপ্রেস তিন ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহগামী ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস দুই ঘণ্টা, রাজশাহীগামী সিল্কসিটি তিন ঘণ্টা দেরিতে স্টেশন ছেড়েছে।
স্টেশন ব্যবস্থাপক আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে অন্যান্য সময়ের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ যাত্রী হয় ঈদে। সে কারণে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করতে সময় লাগছে। দুই মিনিটের জায়গায় ট্রেনগুলোকে প্রতি স্টেশনে পাঁচ মিনিটের বিরতি নিতে হচ্ছে। তবে ঢাকা আসার পর ৩০ মিনিটের মধ্যেই তৈরি হয়ে আমরা ট্রেন ছাড়তে পারছি।’
রেলযাত্রায় অনিয়ম ঠেকাতে কমলাপুর স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন রেল মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এ অভিযানে অবৈধভাবে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ এবং বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে ২৬ জনকে ৪ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ১৮৯০ সালের রেলপথ আইনের ১১২ ও ১২১ ধারা অনুযায়ী এই অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ প্রথম আলো