দেশের প্রথম ও সর্বাধুনিক হাইস্পিড ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’। কিন্তু ট্রেনটি পাচ্ছে পুরোনো দুটি ইঞ্জিন। ফলে প্রত্যাশিত গতিবেগ উঠবে না রাজশাহী-ঢাকা রুটের প্রথম ও একমাত্র বিরতিহীন এই ট্রেনের।
আগামী ২৫ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ২৭ এপ্রিল থেকে বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু করবে বনলতা এক্সপ্রেস। উদ্বোধন পর্বে অংশ নিতে ট্রেনটি এখন পশ্চিমাঞ্চল রেলের ঈশ্বরদী জংশনে অবস্থান করছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, বনলতা চলাচলের জন্য যে দুটি ইঞ্জিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেগুলো ২০১৩ সালে ভারত থেকে আমদানি করা। এই ইঞ্জিনে ঘণ্টায় সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার।
অন্যদিকে, বনলতার সর্বাধুনিক হাইস্পিড কোচের ঘণ্টায় গতিবেগ ১৪০ কিলোমিটার। নতুন ইঞ্জিন পেলে এটি প্রতি মিনিটে পাড়ি দিতে সক্ষম আড়াই কিলোমিটার পথ। ৩৪৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই ট্রেন ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টায় পৌঁছে যেতো গন্তব্যে।
বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচল করে আন্তঃনগর পদ্মা, ধূমকেতু ও সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস। পুরোনো ইঞ্জিনে এসব ট্রেনও চলে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার গতিবেগে। মাঝে যাত্রাবিরতি রয়েছে ১৪টি স্টেশনে।
ফলে এই তিনটি ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টায়। বনলতায় নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হলে যাত্রীদের সময় বাঁচতো অন্তত আড়াই ঘণ্টা। তবে পুরনো ইঞ্জিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় বাঁচবে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।
বিরতিহীন হওয়ায় বনলতায় ভ্রমণকারীদের বিদ্যমান ভাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ভাড়া গুনতে হবে। এর সঙ্গে ১৮০ টাকা গুনতে হবে খাবার বিল। এই খাবার সরবরাহ সৌজন্যমূলক বলা হলেও মূল্য পরিশোধ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এই রুটের অন্য তিন আন্তঃনগর ট্রেনে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও তা বাধ্যতামূলক নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ট্রেনে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে চড়া দাম নেয়ার অভিযোগ। এরই প্রেক্ষিতে বনলতার খাবার দাম অনুযায়ী মান কেমন হবে তা নিয়ে ভ্রমণকারীদের মাঝে তৈরি হয়েছে কৌতূহল।
তবে খাবার মানসম্মত হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খোন্দকার শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভ্রমণকারীদের হাতে হাতে ১৮০ টাকা মূল্যের খাবারের প্যাকেট পৌঁছে যাবে। এটি সরবরাহ করবে সরকারি একটি সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকতা খাবার পরখ করে দেখেছেন। দাম অনুযায়ী খাবারের মান ভালো।
খোন্দকার শহিদুল ইসলাম জানান, টিকিটের মূল্য নির্ধারণের দাফতরিক কোনো সিদ্ধান্ত তারা জানেন না। সোমবারের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। খাবার মূল্য যোগ করে টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সরেজমিন ঈশ্বরদী জংশন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বনলতার শুভযাত্রা ঘিরে ব্যস্ত রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা ১২টি ট্রেনের বগি বুঝে পেয়েছে ঈশ্বরদী ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন বিভাগ। বগিগুলোর পরীক্ষামূলক চলাচল, জ্বালানী, বিদ্যুৎ সংযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে।
বিভাগটি জানায়, ট্রেনটিতে সংযুক্ত রয়েছে উড়োজাহাজের মতো বায়োটয়লেট। এ কারণে মলমূত্র আর রেললাইনের ওপরে পড়বে না। ট্রেনটিতে থাকছে রিক্লেনার চেয়ার। আছে ওয়াইফাই সুবিধা। প্রতিটি বগিতে রয়েছে এলইডি ডিসপ্লে। যার মাধ্যমে স্টেশন ও ভ্রমণের তথ্য প্রদর্শিত হবে। কিন্তু থাকছে না শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোনো ধরনের স্লিপিং বার্থ।
ঈশ্বরদীতে অবস্থিত রেলের ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন বিভাগের ইনচার্জ একেএম গোলাম হাক্কানি জানান, নতুন ট্রেনের মোট বগির সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ারের বগি ৭টি, যার আসন সংখ্যা ৬৬৪টি। এসি বগি ২টি, আসন সংখ্যা ১৬০টি। একটি পাওয়ার কারের আসন সংখ্যা ১৬টি। দুটি গার্ডব্রেকের আসন সংখ্যা ১০৮টি। ট্রেনটিতে থাকছে একটি খাওয়ার বগি। বনলতায় মোট আসন হবে ৯৪৮টি।
রেলের ডিজেল ও লোকমোটিভ বিভাগে ঈশ্বরদীতে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইনচার্জ আবু উসমান জানান, বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের যে ইঞ্জিন দুটি ব্যবহৃত হবে সেগুলো সৈয়দপুর রেল কারখানায় রয়েছে। সোমবার ঈশ্বরদী জংশনে পৌঁছাবে। ভারত থেকে আনা এই ইঞ্জিনগুলো খুবই ভালো মানের বলে জানান তিনি।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ জাগোনিউজ২৪