বাস-ট্রাকের চাপায় ডান হাত হারানো রাজশাহী কলেজের ছাত্র ফিরোজ সরদার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি এক হাত নিয়েই বাড়ি ফেরেন।
রামেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আলমগীর হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ফিরোজ সরদারকে হাসপাতালে আনার পরপরই অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। তার পর তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। আশঙ্কা কাটলে তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। দুর্ঘটনায় হাত হারালেও এখন ফিরোজ অনেকটাই সুস্থ আছেন। চলাফেরা করতে পারছেন। ডান হাতের ক্ষত স্থানও ভালো আছে। রোববার তাকে দেখার পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার আগে ফিরোজ সরদার জানান, ছোটবেলা থেকেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। এজন্য প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে ২৮ জুন বগুড়ায় গিয়েছিলেন। সে স্বপ্নতো পূরণ হলোই না উল্টো আরও এক বছর পিছিয়ে গেলেন তিনি। হাত হারিয়ে চিকিৎসাধীন থাকায় চলমান মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হয়নি তার। এখন সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখছেন তিনি।
এখন সরকারের কাছে ফিরোজের দাবি যাতে কোনো রকমে খেয়ে-পড়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করে দেন। এজন্য তাকে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির ব্যবস্থা করতে দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান ফিরোজ।
পাশাপাশি দুর্ঘটনার পর তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য কলেজের বন্ধু ও শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন হাত হারানো ফিরোজ সরদার।
এছাড়া তার মতো যাতে আর কাউকে হাত হারাতে না হয় এ জন্য এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্ঠান্তমূলত শাস্তির দাবি জানান ফিরোজ।
এর আগে গত ২৮ জুন রাজশাহীগামী মোহাম্মদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসকে অতিক্রম করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া ট্রাক পাশ থেকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে চাপা পড়ে বাসযাত্রী ফিরোজ আহমেদের ডান হাতের কনুই পর্যন্ত ছিঁড়ে পড়ে যায়।
ওই দিন সন্ধ্যায় মহানগরের উপকণ্ঠ কাটাখালি পৌর ভবনের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সেই থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফিরোজ। এ ঘটনায় গত ২৯ জুন মহানগরের কাটাখালি থানায় মামলা করেন ফিরোজের বাবা মাহফুজুর রহমান।
ফিরোজ আহমেদ রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার নামোইট গ্রামের মাহফুজুর রহমানেরে ছেলে। এরই মধ্যে ‘মোহাম্মদ পরিবহন’ বাসের চালক ফারুক হোসেন সরকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে বাস ও ট্রাক দু’টি। তবে ট্রাকচালক ওয়াহিদুজ্জামান এখনও পলাতক। তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
তবে ফিরোজের পরিবারের অভিযোগ বর্তমানে এ মামলার তদন্ত নিয়ে গাফলতি করছে পুলিশ। পলাতক আসামিকে গ্রেফতারে কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আর মামলার অগ্রগতি নিয়ে পরিবারকেও কোনো তথ্য দিতে চাচ্ছে না পুলিশ।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর