আম বাগান এলাকায় এখন মৌ মৌ গন্ধ। যে কারো মন জুড়িয়ে যাবে। কোন কোন গাছ থেকে মুকুল বের হচ্ছে, আবার কোন-কোন গাছে গুটি ধরতে শুরু হয়েছে। ফলে বাগান পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবারও আমের ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
তথ্য মতে আমের জন্য রাজশাহী জেলাকে বিখ্যাত বলা হলেও মূলত আম প্রধান অঞ্চল হিসাবে খ্যাত জেলার চারঘাট-বাঘা ও পার্শ্ববর্তী চাপাইনবাবগঞ্জ। এরমধ্যে মাটি গত কারণে বাঘার আমের খ্যাতি দেশ জুড়ে। এখানকার আম গত তিনবছর ধরে ইউরোপের ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, পর্তুগাল, ফ্রান্সসহ রাশিয়াতে পাঠানো হচ্ছে আম। হটেক্স ফাউন্ডেশন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মাধ্যমে এ আম রপ্তানির কাজ শুরু করা হয়েছে।
কৃষকরা জানান, বিগত যে কোন বছরের তুলনায় এবার আমের মুকুল এ বছর ভাল হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবারও আমের ভালো ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সু-স্বাধু আমের রাজধানী হিসাবে খ্যাত বাঘা উপজেলায় ৯ হাজার হেক্টর আম বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রায় শতাধিক জাতের আম উৎপাদন হয়ে থাকে। সব জাতের আম মিলিয়ে এবার বাঘায় দেড় থেকে ২ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমকে ঘিরে প্রতি মৌসুমে বাঘা এলাকায় অন্তত ২৫টি ছোট-বড় আমের বাজার (হাট) বসে। এর মধ্যে বড় বাজার বসে বাঘা সদর, মনিগ্রাম, বিনোদপুর, বাউসা ও পাকুড়িয়া এলাকায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, এ অঞ্চলের আমের মধ্যে-ফজলি, খিরশাপাত, গোপাল ভোগ ও ল্যাংড়ার নাম শোনা যায় সবার মুখে-মুখে। এ ছাড়াও বৌ-ভুলানী, রানীপছন্দ, জামাইখুসি, বৃন্দাবন, লকনা, বোম্বাই খিরসা, দাউদভোগ, সেনরি, আম্রপালি, আশ্বিনা, ক্ষুদি খিরসা, বৃন্দাবনী, ও কালীভোগসহ প্রায় শতাধিক জাতের আম রয়েছে। প্রতিবছর আম মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়।
বাগান মালিকরা জানান, মাঘের শুরুতে আম গাছের ডালে ডালে মুকুল ফুটতে শুরু করে। এ সময় বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা মুকুলের পরিচর্যা শুরু করেন। আঞ্চলিক প্রবাদ রয়েছে, আমের আনা মাছের পাই, টিকলে পরে কে কত খাই।’ তাদের মতে, গাছে গাছে যে পরিমাণ মুকুল আসে, তাতে সিকিভাগ টিকে গেলেও আমের বাম্পার ফলন হয়।
বাঘার আমোদপুর গ্রামের আম চাষি আলী আকবর জানান, গাছে মুকুল আসার পর থেকে আম পাড়া পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। তাতে হেক্টর প্রতি ৩৮ থেকে ৪৫ হাজার টাকার বালাইনাশক লাগে। এদিক থেকে পর-পর দুই বছর আমের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষক আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সফিউল্লাহ সুলতান জানান, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম চাষ করলে উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং পরিবহন, রপ্তানিসহ বাজারজাত করলে কৃষকরা ব্যবপক হারে লাভবান হবেন। তিনি উন্নত পদ্ধতিতে আম চাষ ও রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন