দুই বছর ধরে পড়ে থাকা পলিমার্স চেইন রিঅ্যাকশান (পিসিআর) মেশিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মলিক্যুলার ল্যাব চালুর তোড়জোড় চলছে। কিন্তু কারিগরি ত্রুটি সারাতে না পারায় করোনা শনাক্তে রাজশাহীর দ্বিতীয় এই ল্যাবটি চালু নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রায় একমাস ধরেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগে মলিক্যুলার ল্যাব চালুর চেষ্টা চলছে। শিগগিরই এটি চালুর ব্যাপারে আশাবাদি কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার থেকে ২০১৮ সালের মে মাসে পিসিআর মেশিনটি সরবরাহ করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। এখানকার বহির্বিভাগে বিশেষায়িত মলিকুলার ল্যাব স্থাপনের জন্য এসেছিল মার্কিনি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি কোটি টাকা মূল্যের এই মেশিন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেশিনটির প্যাকেট খুলেও দেখেনি। মেশিন আসার খবরও চাপা পড়েছিল। পরে গত ১৩ এপ্রিল বিভাগীয় করোনা সমন্বয় কমিটির সভায় পড়ে থাকা মেশিনটির কথা নিজেই প্রকাশ করেন রামেক হাসপাতাল পরিচালক। এরপর থেকেই মেশিনটি চালু করতে শুরু হয় তোড়জোড়। পিসিআর মেশিনে মলিক্যুলার ল্যাব চালু হলে এটি হবে রাজশাহীতে করোনা শনাক্তে দ্বিতীয় ল্যাব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ল্যাবের কাঠামো প্রস্তুতের পর কয়েকদিন আগে মেশিনটির প্যাকেট খুলে ল্যাবে স্থাপন করা হয়। কিন্তু কার্যকারিতা পরীক্ষার সময় ত্রুটি ধরা পড়েছে পিসিআর মেশিনের ফিল্টারে। দুই বছর ধরে প্যাকেটবন্দি অবস্থায় পড়ে থাকায় ফিল্টারটি নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও চুক্তি অনুযায়ী মেশিনটি চালু করে তা বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
তবে পিসিআর মেশিন স্থাপন ও মলিক্যুলার ল্যাব চালুর জন্য আবশ্যক প্রয়োজনীয় উচ্চ নিরাপত্তা কাঠামো এখনও কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদফতরের সেন্ট্রাল স্টোরেও নেই।
কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ল্যাবটির নিরাপত্তা কাঠামো চীন থেকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে করোনা পরীক্ষার বিভিন্ন উপকরণও আসবে। সেগুলো পেলে দ্রুতই এই ল্যাব চালু হবে।
বিশেষ এই ল্যাবটির সব ধরনের কারিগরী ও সুক্ষ বিষয়গুলির বিষয় তত্ত্বাবধান করছেন সিনিয়র মলিক্যুলার বায়োলজিস্ট এসএম হাসান এ লতিফ।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ল্যাবে এখনও উচ্চ নিরাপত্তা কাঠামো স্থাপন করা হয়নি। উচ্চ নিরাপত্তা কাঠামো ছাড়া এই ধরনের ল্যাব পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
তিনি যোগ করেন, আপাতত এই ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হবে। তবে এটিতে সব ধরনের সংক্রমণ ব্যাধি ছাড়াও ডিএনএসহ অন্যান্য পরীক্ষাও করা যাবে।
রামেক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, রাজশাহীর দ্বিতীয় ল্যাব চালুর জন্য নিরাপত্তা কাঠামো ও অন্যান্য উপকরণ দু’একদিনের মধ্যে চীন থেকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলো রাজশাহীতে পেতে আরো কয়েকদিন লাগবে।
জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণেই আপাতত ল্যাবটি চালু করা যাচ্ছে না। পিসিআর মেশিনের নষ্ট হয়ে যাওয়া ফিল্টারটি দু’একদিনের মধ্যেই সরবরাহ করবে মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আশা করা যাচ্ছে এরপরই ল্যাব পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে যাবে। তবে এই ল্যাব করোনা পরীক্ষার জন্য চালু হতে আরো কিছুটা সময় লাগবে।
জনবল পাওয়া গেছে জানিয়ে উপপরিচালক বলেন, দ্বিতীয় ল্যাবটি রামেকের প্রথম করোনা ল্যাবের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। সেখান থেকে নমুনা প্রক্রিয়াজাত করে এখানে পাঠানো হবে। এতে এই ল্যাবের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। রামেক হাসপাতাল, রামেক এবং বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর থেকে যে জনবল পাওয়া গেছে তা দিয়েই ল্যাবটি চালুর রাখা যাবে।
উল্লেখ্য, করোনা শনাক্তে গত ১ এপ্রিল রাজশাহী বিভাগে প্রথম করোনা ল্যাব চালু হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগে। দুই শিফটে এখানে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।
এছাড়া গত ১ মে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে চালু হয়েছে আরেকটি করোনা ল্যাব। রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে মলিক্যুলার ল্যাব চালু হলে এই অঞ্চলে করোনা শনাক্তে গতি আসবে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ জাগোনিউজ২৪