স্টার সিনেপ্লেক্স, বাংলাদেশের সিনেমা হলের জগতের এক বিস্ময়কর নাম। ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে ২০০৪ সালে প্রথম এই সিনেপ্লেক্সের যাত্রা শুরু হয়। ভালো পরিবেশ, উন্নত সাউন্ড সিস্টেম ও আধুনিক প্রযুক্তি যোগ করে দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে ফেলে এই প্রেক্ষাগৃহটি। বসুন্ধরায় যাত্রা শুরুর পরে নানা জায়গায় এর শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত হচ্ছে। ঢাকাতে মিরপুরে, মহাখালীতে এবং সীমান্ত-সম্ভারে শাখা চালুর পরে চালু হয়েছে চট্টোগ্রামের শাখা। এবার স্টার সিনেপ্লেক্স চালু করলো তাদের নতুন শাখা রাজশাহীতে। গত ১৩ জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কে উদ্ধোধন করা হয় তাদের এই নতুন শাখা।
রাজশাহী শহরেই একসময় জনপ্রিয় ছয়টি সিনেমা হল ছিলো। একে একে সবগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সব সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর চার বছর ধরে একটি সিনেমা হলের জন্য আক্ষেপ করছিলেন রাজশাহীর সিনেমাপ্রেমীরা। রাজশাহী যখন সিনেমা হল শূন্য, পুরোনো ৬টি সিনেমা হলের সবগুলো বন্ধ, তখন স্টার সিনেপ্লেক্স রাজশাহীর মানুষদের নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন নগরী রাজশাহী। পদ্মার তীরবর্তী উত্তরবঙ্গের সব থেকে বড় শহর, বাংলাদেশের সব থেকে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ শহর রাজশাহী। তাই একে বলা হয় গ্রীন সিটি। আরো অনেক নামে রাজশাহীকে ডাকা হয়। বলা হয় শিক্ষা নগরী, সিল্কসিটিসহ আরো অনেক কিছু।
২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বায়ু দূষণ কমানোয় বিশ্বসেরা শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করে রাজশাহী।
এত খ্যাতি যে শহরের, সে শহরে একটি সিনেমা হল নেই! অধুনিক সিনেমা হল তো দূরের কথা। সর্বশেষ বন্ধ হয়ে গেছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল যেটি সবার কাছে নীলমণি উপহার সিনেমা হল নামে পরিচিত। উপহার, বর্নালী, উৎসব, অলকা সবগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে রাজশাহীর মানুষ সিনেমা হল কি সেটা ভুলতে বসেছিলেন। কিন্তু গত ১৪ জানুয়ারি থেকে দর্শকরা সিনেমা দেখার সুযোগ পেয়েছেন।
স্টার সিনেপ্লেক্স, গত ১৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন হয়েছে। রাজশাহী নগরের বুলনপুর এলাকার আই-বাঁধ সংলগ্ন পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের জয় সিলিকন টাওয়ারে সিনেপ্লেক্সের একটি শাখা চালু করা হয়েছে।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে সিনেপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ, সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম, স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম ফজলুল হক, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক আবদুল বাতেনসহ স্টার সিনেপ্লেক্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পত্রপত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে সারা দেশে মোট ১০০টি সিনেপ্লেক্স করার লক্ষ্য নিয়ে আগাচ্ছে সিনেমা হলের এই কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে ১৭টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
উদ্বোধনের পর সিনেপ্লেক্সে অতিথিদের জন্য প্রদর্শন করা হয় দেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র ‘মুজিব আমার পিতা’ ও ‘অ্যাভাটার’ এর সিকুয়েল ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’।

রাজশাহীর এই স্টার সিনেপ্লেক্সে বর্তমানে একটি হল আছে, যার আসন সংখ্যা ১৭২টি। বরাবরের মত নান্দনিক পরিবেশ, আধুনিক প্রযুক্তি সম্বালিত সাউন্ড সিস্টেম, জায়েন্ট স্ক্রিনসহ বিশ্বমানের সিনেমা হলের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থাকছে এই সিনেপ্লেক্সে।
প্রতিদিন সকাল, দুপুর, বিকেল ও সন্ধ্যা—চার শিফটে টু–ডি ও থ্রি–ডি সিস্টেমে সিনেমা দেখার সুযোগ থাকছে এখানে। প্রতিদিন সকাল ১১টা, দুপুর ২টা ৩৫ মিনিট, বিকেল ৫টা ও সন্ধ্যা ৭টা মিলে মোট এই ৪ শিফটে দেখানো হচ্ছে বর্তমানে। সময়গুলো সব সময়ের জন্য স্থায়ী না। সময়ের চেঞ্জ যেকোনো সময় হতে পারে।
টিকিটের মূল্যঃ

স্টার সিনেপ্লেক্সে টিকিট কাটা যাবে অনলাইনে বা সরাসরি স্টার সিনেপ্লেক্সের রাজশাহীর শাখায়। স্টার সিনেপ্লেক্সের টিকিট কাটা, টিকিটের মূল্য ও শোগুলোর সময়সূচী সরাসারি স্টার সিনেপ্লেক্সের সাইট বা অ্যাপ এর মাধ্যমে দেখা যাবে।
স্টার সিনেপ্লেক্সের ওয়েবসাইট লিংকঃ https://www.cineplexbd.com
স্টার সিনেপ্লেক্সের অ্যাপ ডাউনলোড লিংকঃ https://play.google.com/store/apps/details?id=com.cineplexbd.starcineplex&hl=en
রাজশাহীতে বসবাসকারী সিনেমাপ্রেমীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন “স্টার সিনেপ্লেক্স”, যা পূরণ হয়েছে। সবশেষ ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় একমাত্র ‘উপহার’ সিনেমা হলটি। সব সিনেমা হল বন্ধ হওয়ায় পুরোপুরি হলশূন্য হয়ে পড়ে রাজশাহীবাসী। সেই শূন্যতা দূর করে রাজশাহী শহরের সিনেমাপ্রেমী মানুষেরা আবারও হলমুখী হবেন-এমনটাই আশা করা হচ্ছে।