রমজান (আরবি: رمضان রামাদান) হলো ইসলামি বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস, যে মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলিমগণ রোজা পালন করে থাকেন। রমজান মাসে রোজাপালন ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়তম। রমজান মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ৩০ দিনে হয়ে থাকে, যা নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
“রমজান মাস হচ্ছে সেই মাস যে মাসে কুরআন নাজিল হয়েছিল; মানবজাতির জন্য কুরআন একটি হেদায়েত এবং হেদায়েতের সুস্পষ্ট প্রমাণ এবং মানদণ্ড । তোমাদের মধ্যে যদি কেউ বেঁচে থাকে তবে এই মাসে রোজা রাখে এবং আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান; তিনি তোমাদের জন্য কষ্ট না চান; আর এটাই যে, তোমার সময়কাল পূর্ণ হবে এবং তোমার হেদায়েতের জন্য আল্লাহকে মহিমান্বিত করতে হবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।”
(অধ্যায় ২, ১৮৫ নং আয়াত)
এই মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির উপর সাওম পালন ফরয, কিন্তু অসুস্থ, গর্ভবতী, ডায়বেটিক রোগী, ঋতুবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে তা শিথিল করা হয়েছে। রোজা বা সাওম হল সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। এই মাসে মুসলিমগণ অধিক ইবাদত করে থাকে। কারণ অন্য মাসের তুলনায় এই মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ মাসের লাইলাতুল কদর রাতে পবিত্র আল-কুরআন যা মুসলিমদের সর্বপ্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ, নাযিল হয়েছিল এবং এই রজনীকে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলেছেন। এ রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের ইবাদতের থেকেও অধিক সওয়াব পাওয়া যায়। রমজান মাসের শেষ দিকে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে মুসলমানগণ ঈদুল-ফিতর পালন করে থাকে যেটি মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি।
রমজান মাসের ফজিলত :
এই মাসের ফজিলত অনেক। আর এই ফজিলত পবিত্র কোরান শরীফ, হাদিস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ফজিলতের কিছু বাণী তুলে ধরা হলো :
‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার’: আল কুরআন।
‘রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়ে বেশী ঘ্রাণযুক্ত’: আল হাদিস
‘ইফতার পর্যন্ত রোজাদারের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন’: আল হাদিস।
‘রোজাদারের জন্য প্রতিদিন জান্নাতকে সজ্জিত করা হয়’: আল হাদিস।
‘রমজানের শেষ রাতে সকল উম্মতকে মাফ করা হয়’: আল হাদিস।
‘রমজান জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল’: আল হাদিস।
‘রোজার পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে প্রদান করবেন’: আল হাদিস।
‘রোজার মাধ্যমে আচার-আচরণ ও চরিত্র সুন্দর হয়’: আল হাদিস।
‘রোজা মানুষকে আখেরাত মুখী করে’: আল হাদিস।
রমজান শুরুর আগে যে বিষয়গুলোতে নজর দিবেন:
১) স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যা থাকলে, যেমন ডায়াবেটিস, গ্যাস্ট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি-যার জন্য নিয়মিত ওষুধের প্রয়োজন। তাহলে রমজানে সেগুলো কী মাত্রায় গ্রহণ করবেন, তার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বিশেষ করে যারা ইনসুলিন নেন, তাদের ডোজ ও সময় ঠিক করে নিতে হবে।
২) অনেকেই পরিকল্পনা করেন যে রমজানে ওজন কমাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখেন ওজন তো কমেইনি বরং বেড়ে গেছে। আবার ডায়াবেটিস, হার্ট বা কিডনি রোগীর জন্য রমজানে বিশেষ ধরনের খাদ্য পরিকল্পনা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে রোজা শুরুর আগে পুষ্টিবিদের কাছ থেকে খাদ্যতালিকা করিয়ে নিতে পারেন।
৩) যাদের একটু পরপর চা-কফি পানের অভ্যাস, তাঁরা আগে থেকেই এসব কমিয়ে আনুন। নয়তো রমজানে একাগ্রতায় সমস্যা হতে পারে। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়।
৪) যারা নিয়মিত জিমে যান বা ব্যায়াম করেন, তাঁরা রমজানেও এসব বজায় রাখার ইচ্ছে থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো। সাধারণত রমজানে যেকোনো ব্যায়াম সন্ধ্যার পর করতে বলা হয়।
৫) পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন ও হাইপোগ্লাইসেমিয়ার (রক্তের গ্লুকোজ বা শর্করা হঠাৎ নেমে যাওয়া) মতো জটিলতার লক্ষণ থাকলে রমজানের আগেই সুচিকিৎসা করিয়ে নিন। কিডনি বা ইলেকট্রোলাইটের সমস্যা থাকলে আগেই পরীক্ষা করান।
৬) রাতে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম দরকার। পর্যাপ্ত ঘুম হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার ঝুঁকিও কমাতে পারে। রমজানে সাহ্রি খাওয়ার জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এ ক্ষেত্রে কীভাবে ঘুম পুষিয়ে নেবেন, তার একটা পরিকল্পনা করুন।
৭) রমজানে সুষম খাবার খাওয়া অন্য সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি। আমরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস করি। তাই এমন খাবার খাওয়া প্রয়োজন, যা অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেবে। তাই পরিবারের সবার কথা বিবেচনা করে পুষ্টিকর ইফতারি ও সাহ্রির একটি তালিকা করে সেভাবে আগে থেকে প্রস্তুতি নিন। রমজানের বাজার করার সময় পুষ্টির কথা বিবেচনা করুন। প্যানিক বায়িং বা অযথা কেনাকাটা করবেন না।
রমজানের ভাগসমূহ :
১) সিয়াম
সিয়াম (সাওম) ভোর শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের শেষে শেষ হয়। এই সময়ে খাওয়া এবং পান করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি, মুসলমানরা যৌন সম্পর্ক এবং পাপী কথাবার্তা এবং আচরণ থেকে বিরত থাকে। রোজার কাজটি বলা হয় হৃদয়কে পার্থিব ক্রিয়াকলাপ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া, এর উদ্দেশ্য হল ক্ষতিকারক অশুচি থেকে মুক্ত করে আত্মাকে শুদ্ধ করা।
২) সেহরি
প্রতিদিন ভোর হওয়ার আগেই মুসলমানরা সেহরি নামে একটি প্রি-ফাস্ট ফুড পালন করেন। ফজরের আগে অল্প সময় বিরতি দেওয়ার পরে, মুসলমানরা দিনের প্রথম নামাজ ফজর শুরু করেন ।
৩) ইফতার
সারাদিন রোজা রাখার পর মাগরিবের আজান পরলে আজান শুনে যেই খাবার গ্রহণ করা হয়, তাকে ইফতার বলে। ইফতারের মাধ্যমেই রোজার সমাপ্তি হয়।
৪) তারাবির নামাজ
“তারাবীহ” এর আভিধানিক অর্থ বসা, বিশ্রাম করা, আরাম করা। ইসলাম ধর্মে তারাবীহ হল রাতের সালাত যেটি মুসলিমগণ রমজান মাসব্যাপী প্রতি রাতে এশার ফরজ নামাজের পর পড়ে থাকেন।
রাজশাহী ও তার পাশ্ববর্তী এলাকার সাহরী ও ইফতারের সময়সূচিঃ
১৪৪৪ হিজরি রমযান | ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ মার্চ/এপ্রিল | বার | সাহরীর শেষ সময় | ফজরের ওয়াক্ত শুরু | ইফতারের সময় |
---|---|---|---|---|---|
০১ | ২৪ মার্চ | শুক্রবার | ৪-৪৫ মিঃ | ৪-৫১ মিঃ | ৬-২১ মিঃ |
০২ | ২৫ মার্চ | শনিবার | ৪-৪৪ মিঃ | ৪-৫০ মিঃ | ৬-২২ মিঃ |
০৩ | ২৬ মার্চ | রবিবার | ৪-৪২ মিঃ | ৪-৪৮ মিঃ | ৬-২২ মিঃ |
০৪ | ২৭ মার্চ | সোমবার | ৪-৪১ মিঃ | ৪-৪৭ মিঃ | ৬-২৩ মিঃ |
০৫ | ২৮ মার্চ | মঙ্গলবার | ৪-৪০ মিঃ | ৪-৪৬ মিঃ | ৬-২৩ মিঃ |
০৬ | ২৯ মার্চ | বুধবার | ৪-৩৯ মিঃ | ৪-৪৫ মিঃ | ৬-২৪ মিঃ |
০৭ | ৩০ মার্চ | বৃহস্পতিবার | ৪-৩৭ মিঃ | ৪-৪৩ মিঃ | ৬-২৪ মিঃ |
০৮ | ৩১ মার্চ | শুক্রবার | ৪-৩৬ মিঃ | ৪-৪২ মিঃ | ৬-২৫ মিঃ |
০৯ | ০১ এপ্রিল | শনিবার | ৪-৩৫ মিঃ | ৪-৪১ মিঃ | ৬-২৫ মিঃ |
১০ | ০২ এপ্রিল | রবিবার | ৪-৩৪ মিঃ | ৪-৪০ মিঃ | ৬-২৬ মিঃ |
১১ | ০৩ এপ্রিল | সোমবার | ৪-৩৩ মিঃ | ৪-৩৯ মিঃ | ৬-২৬ মিঃ |
১২ | ০৪ এপ্রিল | মঙ্গলবার | ৪-৩২ মিঃ | ৪-৩৮ মিঃ | ৬-২৬ মিঃ |
১৩ | ০৫ এপ্রিল | বুধবার | ৪-৩০ মিঃ | ৪-৩৬ মিঃ | ৬-২৭ মিঃ |
১৪ | ০৬ এপ্রিল | বৃহস্পতিবার | ৪-৩০ মিঃ | ৪-৩৬ মিঃ | ৬-২৭ মিঃ |
১৫ | ০৭ এপ্রিল | শুক্রবার | ৪-২৯ মিঃ | ৪-৩৫ মিঃ | ৬-২৮ মিঃ |
১৬ | ০৮ এপ্রিল | শনিবার | ৪-২৮ মিঃ | ৪-৩৪ মিঃ | ৬-২৮ মিঃ |
১৭ | ০৯ এপ্রিল | রবিবার | ৪-২৭ মিঃ | ৪-৩৩ মিঃ | ৬-২৮ মিঃ |
১৮ | ১০ এপ্রিল | সোমবার | ৪-২৬ মিঃ | ৪-৩২ মিঃ | ৬-২৯ মিঃ |
১৯ | ১১ এপ্রিল | মঙ্গলবার | ৪-২৫ মিঃ | ৪-৩১ মিঃ | ৬-২৯ মিঃ |
২০ | ১২ এপ্রিল | বুধবার | ৪-২৪ মিঃ | ৪-৩০ মিঃ | ৬-৩০ মিঃ |
২১ | ১৩ এপ্রিল | বৃহস্পতিবার | ৪-২৩ মিঃ | ৪-২৯ মিঃ | ৬-৩০ মিঃ |
২২ | ১৪ এপ্রিল | শুক্রবার | ৪-২১ মিঃ | ৪-২৭ মিঃ | ৬-৩০ মিঃ |
২৩ | ১৫ এপ্রিল | শনিবার | ৪-২০ মিঃ | ৪-২৬ মিঃ | ৬-৩১ মিঃ |
২৪ | ১৬ এপ্রিল | রবিবার | ৪-১৯ মিঃ | ৪-২৫ মিঃ | ৬-৩১ মিঃ |
২৫ | ১৭ এপ্রিল | সোমবার | ৪-১৮ মিঃ | ৪-২৪ মিঃ | ৬-৩১ মিঃ |
২৬ | ১৮ এপ্রিল | মঙ্গলবার | ৪-১৭ মিঃ | ৪-২৩ মিঃ | ৬-৩২ মিঃ |
২৭ | ১৯ এপ্রিল | বুধবার | ৪-১৬ মিঃ | ৪-২২ মিঃ | ৬-৩২ মিঃ |
২৮ | ২০ এপ্রিল | বৃহস্পতিবার | ৪-১৫ মিঃ | ৪-২১ মিঃ | ৬-৩৩ মিঃ |
২৯ | ২১ এপ্রিল | শুক্রবার | ৪-১৪ মিঃ | ৪-২০ মিঃ | ৬-৩৩ মিঃ |
৩০ | ২২ এপ্রিল | শনিবার | ৪-১৩ মিঃ | ৪-১৯ মিঃ | ৬-৩৪ মিঃ |
সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। “হে রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে ৩০ টা রোজা সঠিকভাবে রাখার তৌফিক দান করুন”। আমিন।