রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাঘা উপজেলা সদরে অবস্থিত বাঘা মসজিদ মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন।
মসজিদটি ১৫২৩-১৫২৪ সালে হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের পুত্র সুলতান নুসরাত শাহ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় সংস্কার করে নতুনভাবে ছাদ দেয়া হয় ১৮৯৭ সালে।
২৫৬ বিঘা জমির উপরে অবস্থিত উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ মসজিদটির আঙিনা সমভূমি থেকে প্রায় ১০ ফুট উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ২২.৯২ মিটার, প্রস্থ ১২.১৮ মিটার এবং উচ্চতা ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং এর দেয়াল ২.২২ মিটার পুরু। পূর্ব দেয়ালে ৫টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ২টি করে খিলানযুক্ত প্রবেশ পথ রয়েছে।
মসজিদটিতে ১০টি গম্বুজ আছে। আর ভেতরে রয়েছে ৬টি স্তম্ভ। মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে আছে কারুকার্য খচিত ৪টি মেহরাব। দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট, প্রস্থ ৪২ ফুট, উচ্চতা ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। দেয়াল চওড়া ৮ ফুট গম্বুজের ব্যাস ৪২ ফুট, উচ্চতা ১২ ফুট। চৌচালা গম্বুজের ব্যাস ২০ ফুট উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট।
চুন সুরকির সাহায্যে ছোট আকৃতির ইট দ্বারা নির্মিত মিহরাবের দু’পাশে ও উপরে ফ্রেমের উপর নানা রকম লতাপাতা ও ফুলের প্রতিকৃতি অতি সুন্দরভাবে সজ্জিত। মসজিদের উত্তর পশ্চিম কোণে আছে মহিলা মঞ্চ। মাঝখানের দরজার ওপর ফার্সি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে।
এই মসজিদটি চারদিক হতে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং মসজিদের ভিতরে-বাইরে সবর্ত্রই টেরাকোটার নকশা রয়েছে।
মসজিদটিতে আছে পোড়ামাটির অসংখ্য কারুকাজ যার ভেতরে রয়েছে আমগাছ, শাপলা ফুল, লতাপাতাসহ ফার্সি খোদাই শিল্পে ব্যবহৃত হাজার রকম কারুকাজ। মসজিদের ভেতরে উত্তর-পশ্চিম কোণে একটু উঁচুতে নির্মিত একটি বিশেষ নামাজের কক্ষ আছে। এ মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় প্রতিবছর ‘বাঘা মেলা’র আয়োজন করা হয় যা বহু বছরের ঐতিহ্য।
এছাড়াও মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ৫২ বিঘা জমির ওপর রয়েছে দিঘি যা একটি চমৎকার দর্শনীয় স্থান। এর চারপাশে রয়েছে সারিবদ্ধ নানা ধরণের গাছ। প্রতিবছর শীতের সময় এখানে অসংখ্য অতিথি পাখির কলতানে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য ৫০ টাকার পুরাতন নোটে বাঘা মসজিদের ছবি অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
এই মসজিদে বিশেষত শুক্রবারে দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন মানুষ আসে। তারা রান্না করে এবং মনস্কামনা পূরণে রান্না করে মুসল্লিদের খাওয়ানো হয়। এছাড়াও দিঘিতে চলে কয়েকদিন ব্যাপী মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। যা দেখতেও বহু মানুষ ভিড় জমায়। এমনকি বড় বড় মাছের ছুটোছুটির আঘাত থেকে বাঁচতে অনেকে হেলমেট পরে দিঘিতে নামে। প্রতিযোগিতা থেকে মাছগুলো শিকার করে সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করা হয়।
যেভাবে যাবেন
ব্যক্তিগত গাড়ী থাকলে রাজশাহী শহর থেকে বানেশ্বর বাজার হয়ে চারঘাট দিয়ে খুব সহজেই চলে যেতে পারবেন বাঘা মসজিদে। অথবা আলাদাভাবেও যেতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে প্রথমে রাজশাহী শহর থেকে বানেশ্বর পর্যন্ত যেতে হবে। বানেশ্বর পর্যন্ত বাসে করে গেলে গুনতে হবে ২০ টাকা অথবা অটোতে ৩০ টাকা। আর বানেশ্বর বাজার থেকে চারঘাট পর্যন্ত যাওয়ার জন্য পাবেন সিএনজি, ভাড়া পড়বে ৩০-৪০ টাকা। এবার চারঘাট বাজার থেকে খুব সহজেই সিএনজি বা অটোতে করে যেতে পারবেন বাঘা মসজিদে। অটোতে ৩৫ টাকা জনপ্রতি। সিএনজিতেও ৪০-৪৫ টাকা জনপ্রতি, তবে দু’একজন হলে সিএনজি রিজার্ভ করে নিতে হবে যার জন্য গুণতে হবে প্রায় ২০০-২৫০ টাকা।